জনগণের আন্দোলনকেও কেবল জা-শি’র বলে ভন্ডুল করা হচ্ছে। আমি ব্লগে অনেক সাধারণ মানুষকে ‘ইন্ডিয়ার পা-চাটা কুত্তা’ কিংবা ‘জা-শি শুয়োর’-এই টাইপের গালি খাইতে দেখসি

হাবিব
Published : 20 Feb 2011, 06:05 PM
Updated : 20 Feb 2011, 06:05 PM

জনগণের আন্দোলনকেও কেবল জা-শি'র বলে ভন্ডুল করা হচ্ছে। আমি ব্লগে অনেক সাধারণ মানুষকে 'ইন্ডিয়ার পা-চাটা কুত্তা' কিংবা 'জা-শি শুয়োর'-এই টাইপের গালি খাইতে দেখসি।

আমার মনে হয়, বাংলাদেশে কোন আন্দোলন করার আগে একটা সামাজিক আন্দোলন জরুরী ভিত্তিতে করা দরকার। সেইটা হইল- কেউ কাউকে তার রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য গালিগালাজ না করে তার মন্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনবে।

আমি এই ব্লগে অনেক সাধারণ মানুষকে 'ইন্ডিয়ার পা-চাটা কুত্তা' কিংবা 'জা-শি শুয়োর'-এই টাইপের গালি খাইতে দেখসি। আমাদের মেন্টালিটি এইরকম, যে আমরা কোন যুক্তি শুনিনা। আমরা আগে মতামতপ্রদানকারীর রাজনৈতিক রংটাকে বোঝার চেষ্টা করি। এই মনোভাবের পরিবর্তন দরকার।

ঢাবি তে এক সময় সাধারণ ছাত্রের একটা বড় মোর্চা তৈরি হয়, যারা বিসিএস এ কোটা পদ্ধতির পরিবর্তন দাবি করে। একটা দেশে ৫৫% সরকারি পদ কোটার অন্তর্ভুক্ত- এইটা কোনভাবেই কোন স্বাস্থ্যকর নীতি না। কিন্তু, সমস্যা হইল, প্রথম আলো সহ বেশ কিছু পত্রিকা এই আন্দোলনকে জামায়াত-শিবিরের প্রপাগান্ডা বলে প্রচার করে। ফলে, আমরাও পিছু হটি। এই পরিবেশের পরিবর্তন যেন হয়- এই নিয়ে দু'একটা ব্লগ লেখেন, ভাইজানরা।

২৮তম বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে মোট ৬৫৭ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৭ জনই নিয়োগ পাচ্ছেন বিভিন্ন কোটায়।

মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্যও চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা – মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট ওয়ালা পরিবারে বিয়ে করুন। মুক্তিযুদ্ধ কি বৈষম্য বাড়ানোর জন্য হয়েছিল?

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের (নাতি-নাতনি) জন্য সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা থাকবে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

সমাজের যেকোনো শ্রেণীর মানুষকে বিশেষ সুযোগ দেয়ার প্রয়োজনটা যেকোনো সমাজের জন্য অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেটা কখনো ৫০ শতাংশ বা ৫৫ শতাংশ হতে পারে না। আর প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তো অবশ্যই নয়। কারণ গাড়ির চালকের আসনে কোনো হেলপারকে বসানোর পরিণতি কী হতে পারে তা আমাদের প্রশাসনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। কোনো সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীকে যেখানে সহযোগিতা করার অনেক উপায় রয়েছে সেখানে অসংখ্য মেধাবীকে বাদ রেখে কম মেধাবীদের সুযোগ ড্রাইভার রেখে হেলপারকে চালকের আসনে বসানোর নামান্তর মাত্র।

আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিশেষ সুবিধা পাওয়ার আশায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও কিছু স্বঘোষিত সুশীলরা সম্পূর্ণ আবেগ ও অযৌক্তিক কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা না কমানোর দাবি করছেন। পাশাপাশি বর্তমানে আমাদের দেশের মেয়েরাও কোটা নয় বরং তাদের যোগ্যতার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। কোনো কোটা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী নারী। প্রায় ২৬.২ শতাংশ নারী তাদের যোগ্যতায় শিক্ষক হতে পেরেছেন। সেখানে ১০ শতাংশ কোটা রাখা তাদের জন্য অমর্যাদাকর ও অপ্রয়োজনীয়।

এর পরও কোনো বিশেষ শ্রেণীকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির কিংবা আর্থিক সুবিধা দেয়া যেতে পারে। কিন্তু জাতির নীতিনির্ধারক ও দাতারা কোন যুক্তিতে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনে ৫০ শতাংশ কোটার সুপারিশ করেন তা মোটেই বোধগম্য নয়। এর অর্থ কি তারা আমাদের সিভিল সার্ভিসকে উন্নত দেশের তুলনায় অদক্ষ ও অযোগ্য রাখতে চায়? দেশের মেধাবীরা কোটার ব্যাপারে পিএসসি'র বর্তমান সুপারিশে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছে। পরিশেষে বলতে চাই একবিংশ শতাব্দীর অগ্রসরমান বিশ্বে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে অযৌক্তিক আবেগ পরিহার করে বাস্তবমুখী হওয়া দরকার।