টিভি বা বেতারে হরহামেশাই লক্ষ্য করা যায় বাহারি স্টাইলের অবাস্তব বিজ্ঞাপন। এসব বিজ্ঞাপন দ্বারা মানুষের সাথে জালিয়াতি করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবুও সে বিজ্ঞাপন আমরা বেশ ভালভাবেই গ্রহণ করছি। মিথ্যায় পরিপূর্ণ সেই বিজ্ঞাপনগুলো আমাদের প্রভাবিত করেছে দারুণভাবে। সবাই তা বুঝে, জানে, কিন্তু কেউ তা বন্ধের দাবি করে না। বাস্তবতার সাথে মিল রেখে টিভি বা বেতারের বিজ্ঞাপনগুলো তৈরি হলে দোষ কী? বিজ্ঞাপনগুলো প্রচারের ক্ষেত্রে কোন প্রকার সেন্সরশিপ আরোপ করা হয় কি? যদি হয়, তাহলে এসব বাস্তবতা বহির্ভূত বিজ্ঞাপন প্রচার হয় কীভাবে? এই বিজ্ঞাপনগুলোর দ্বারা বিক্রেতাগণ কি ক্রেতাদের মগজ ধুলাই করে জালিয়াতি করছে না?
আমি বহুল প্রচারিত কয়েকটি বিজ্ঞাপনের একটু নমুনা দেয়ার চেষ্টা করছি।
. বাজারে নানা ধরনের পানীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। এর মধ্যে স্পিড অন্যতম। স্পিড এর বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়- স্পিড খেলে এমনি শক্তি হয় যে, এটা খাবারের সময় সাবধানে খেতে হয়- নচেৎ আপনার মুখের বাতাসে পূর্ণিমার চাঁদ পর্যন্ত খসে রুটি হয়ে যাবে। বাস্তবে কি এর কোন ভিত্তি আছে?
.
. আবার স্মৃতি হারিয়ে এক ব্যক্তি হাসপাতালে কাউকে চিনতে পারছে না। এমন সময় কোন এক পাড়ায় কয়েকজনকে নিয়ে ক্যারাম খেলছিল ও স্পিড খাচ্ছিল আরেক ব্যক্তি। স্পিড খেয়ে তার এতই শক্তি হল যে, তার আঙ্গুলের আঘাতে ক্যারামের স্ট্রাইকটি বিভিন্ন স্থানে আঘাত খেয়ে সব শেষে হাসপাতালের জানালা ভেঙ্গে যেই না স্মৃতি হারানো লোকটির কপালে আঘাত করল, ঠিক তখনি সে লোকটি স্মৃতি ফিরে পেল। এবার ভাবুন কী অদ্ভুত এই পানীয় স্পিড এর বিজ্ঞাপন।
.
. বাজারে আরেকটি জনপ্রিয় পানীয় হচ্ছে শার্ক। এর বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়- এটি খেলে এমনি শক্তি হয় যে, আপনি ধরাকে সরা জ্ঞান করতে পারবেন। শার্ক খেয়েছে এমন ব্যক্তি ফুটবল এর উপর বসে থাকা কোন ব্যক্তিকে ফুটবল-এ এক লাথি মেরে সমুদ্র পার হতে মুহূর্তের মধেই ঢাকার শাপলা চত্তরে পৌঁছে দিতে পারে- আর এতে মাত্র খরচ হবে ২২ টাকা। কি অবাস্তব আর হাস্যকর এ বিজ্ঞাপন!
.
. বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় আরেকটি পণ্য হল- ফ্রুটিকা। এর বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় যে, এক নেতা প্রতিবাদ সমাবেশ করে বলছে- সে চাল চুরি করছে সেটা মিথ্যা অভিযোগ। কথার মাঝখানে গলা আটকে গেলে সে লোকটি ফ্রুটিকা খায়। ফ্রুটিকা তার মনকে এমনি পিওর করে দেয় যে, এরপর লোকটি স্বীকার করতে বাধ্য হয় সে আসলে গম চুরি করছে, তার স্ত্রীর ভরি ভরি সোনার গহনা রিলিফের টাকা আত্মসাৎ করে ক্রয় করেছে সে। ফ্রুটিকা খাওয়ার ফলে সে সত্যবাদী হয়ে ওঠে।
.
. আরেকটি জায়গায় বাবা তার সন্তানকে অংকে কম নম্বর পাওয়ার জন্য বকছেন আর বলছেন, তিনি যখন তার ছেলের মত ক্লাস ফাইভ-এ পড়তেন, তখন তিনি অনেক নম্বর পেয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি ফ্রুটিকা খান আর বলতে বাধ্য হন যে, আসলে তার অংকে বেশি নম্বর পাওয়ার কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যে, সত্যি হল তিনি পাস-ই করেননি। এরপর ছেলেটি তার বোনের চকলেট চুরি করে আর এ ব্যাপারে সে জানে কীনা তা জিজ্ঞেস করলে ছেলেটি অস্বীকার করে। ছেলেটি সত্যি বলছে কীনা তা জানতে তার বোন তাকে ফ্রুটিকা খেয়ে বলতে বলে। বিজ্ঞাপনে বলা হয়- এটি এতই পিওর যে, মনকেও পিওর করে দেয়।
.
. আরও বহু উদাহরণ রয়েছে যা এখানে উল্লেখ করা বাহুল্য। সচেতন মানুষ মাত্রই তা বুঝবেন। বাস্তবতার সাথে মিল রেখে এই সব পন্যের বিজ্ঞাপনগুলো কি করা যেত না? মিথ্যের মাধ্যমে যার শুরু তা কি কখন শুভ বয়ে আনে? এই প্রতারণার শেষ কি হবে না?