সংস্কৃতি, অপসংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক গোঁড়ামি

ইমরান হাসান
Published : 20 Jan 2013, 06:48 PM
Updated : 20 Jan 2013, 06:48 PM

সংস্কৃতি বলতে সাধারণত বোঝায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা চলা , বলা , রীতি – নীতি , গান – বাজনা , ধর্ম ,সাহিত্য ইত্যাদি । অপসংস্কৃতি হচ্ছে অন্য সংস্কৃতি যাতে অশ্লীলতা আছে । তবে ধর্ম গুরুদের কাছে অপসংস্কৃতির সম্পূর্ণ একরকম নয় । ধর্মের বাইরে যা কিছুর প্রচলন তাই অপসংস্কৃতি ।

সংস্কৃতিক গোঁড়ামি এই শব্দটা খুব একটা শোনা যায় না । ধর্মীয় গোঁড়ামি থাকলে সংস্কৃতিক গোঁড়ামি কেন না ? গোঁড়ামি সাধারণ অর্থে অন্যকে স্বীকার না করা । তেমনি কিছু মানুষ আছে যারা অপরের সংস্কৃতিকে স্বীকার না এবং সংস্কৃতে নতুন কিছু সহ্য করে না । আবার যারা নতুনতাকে গ্রহণ করছেন তারা পুরাতন ও নিজেদের ঐতিহ্যকে নাক ছিটকান ।এভাবে সংস্কৃতি নিয়ে নানা মানুষের নানা মত ।আবার কেও কেও আছেন পুরাতনকে নতুন রুপে সাজান । কেও পুরাতনকে নতুন রুপে সাজাতে গিয়ে আসল ভাব কে নষ্ট করেন ।

এবারে একটু বিস্তারিত বলি । সামাজিক বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা যা করি তাই আমাদের সংস্কৃতি । সংস্কৃতি, চলা , বলা , নিয়-নীতি কখনই একটা গণ্ডির মধ্যে বাধা থাকে না । তা সময়ের স্রোতে ভেসে চলে ।
আমাদের ভাষা , সংস্কৃতি সব সময় একই রকম ছিল না । দ্রাবিড় , আর্য, মঙ্গল , মুসলিম , ইংরেজ নানা সভ্যতা আমাদের এক মিশ্র সংস্কৃতির অধিকারী করেছে । বিভিন্ন সংস্কৃতি তিলে তিলে আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। এখন বলেন কোনটা বাঙালী সংস্কৃতির সভ্যতা ? আমাদের ভাষায় ইংরেজি , হিন্দি , উর্দু , পর্তুগিজ , ফার্সি সহ নানা শব্দে ভরপুর। এবার অন্য ভাষাকে আপনি ফেলে দিতে পারবেন ? শুধু আমারা কেন পৃথিবীর এমন কোন ভাষা নেই অন্য ভাষা ধার করতে হয় না । এমন কোন সংস্কৃতি নেই কারো সাহায্য ছাড়া পরিপূর্ণ ।

তবুও নিজের বলে কিছু থাকে সময়ের সাথে সাথে নানা অভিজ্ঞতায় বদলে যায় ভাষা , সংস্কৃতি । আমরা বাংলাদেশী ১৯৭১ সালে পরাধীনতা থেকে মুক্তি পাই । যুগ যুগ ধরে আমরা বিভিন্ন শাসনে যে অভিজ্ঞতা লালন করেছি তা আমাদের সংস্কৃতি বলে স্বীকৃত ।

আমরা এখন বলছি অপসংস্কৃতি ছেয়ে গেছে আমাদের জীবন । অশ্লীলতা নিয়ে মত ভেদ আছে । কেও কেও বলেন যৌনতা মানেই অশ্লীল নয় । কেননা যৌনতা পৃথিবীর আদি কলা । অনেক চিত্র শিল্পী তার চিত্র কর্মে যৌনতা প্রকাশ ঘটিয়েছেন । তা শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে।

বাংলাদেশে এক সময় স্যাটেলাইট চ্যানেল নিয়ে বেশ তর্ক চলল তা এখনো আছে । আজ এই উন্মুক্ত দুনিয়ায় কোন কিছু আটকে রাখা যায় না তা দেশের কিছু বুদ্ধিজীবীদের বোঝানো গেলনা । তার পর কম্পিউটার , গেইম , ইন্টারনেট , ফেইসবুক , ইউ টিউব এখন ব্লগ নিয়ে তর্ক। সব কিছুর খারাপ দিক আছে । মানুষ কীভাবে ব্যাবহার করবে সেটা তার ব্যাপার । মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার নজির বাংলাদেশে আছে । ফেইসবুক পর এখন ইউ টিউব ।
কিছু বিষয় না বললেই নয় । জন্ম দিন পালন , পহেলা বৈশাখ , ইংরেজি নববর্ষ , ভালোবাসা দিবস ।

জন্ম দিন পালন করা এক সময় বিলাসিতা হলেও এখন অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরা তা করেন । অনেকেই একে অপসংস্কৃতি বলেন বিশেষ করে ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা । আমার কথা হল বিয়ে , মুসলমানি সামাজিক অনুষ্ঠান হলে আটাও হওয়া উচিৎ । জন্ম দিন উৎসবে অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের মতই সবাইকে দাওয়াত করা হয় তাতে সম্পর্ক দৃঢ় হয় । তবু ও কি অপসংস্কৃতি ?

পহেলা বৈশাখ নিয়ে আমাদের মধ্যে মিশ্র মত। পহেলা বৈশাখ যতই অপসংস্কৃতির আখ্যা দিয়েছে ধর্মান্ধরা ততই জবাব দিয়েছে আমাদের শান্তি প্রিয় জনগণ । দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তার ব্যাপকতা । হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি নাকি এটা । যে উৎসব সবাইকে এক করতে পারে তার চাইতে ভাল উৎসব আর কি হতে পারে । কেও বলবেন এক দিনের বাঙালি সাজার নেকামি । আমার কথা হল প্রতিদিন মানুষ উৎসব করে না । মানুষকে বিভন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন সাজে সাজতে হয় ।
ইংরেজি নববর্ষ একটি বিশ্বজনীন উৎসব । সবাই পালন করে । আপনার জীবনে যদি আনন্দের একদিন বেড়ে যায় তবে দোষ কি ! তবে আনন্দ যদি কারোর ক্ষতির কারন হয় সেটা খুব খারাপ । সেজন্য একটা উৎসব খারাপ হয়ে যাবে সেটা ঠিক নয় ।

ভালোবাসা দিবস সব চাইতে সমালোচনা ও আলোচনার বিষয় আমাদের সংস্কৃতিতে । ধর্মীয় লোক , সুশীল সমাজ সবাই উঠে পড়ে এ দিবসের দিকে । কেও কেও বিশ্ব বেহায়া দিবস বলেও আখ্যায়িত করেছেন । কেও বলবেন ভালবাসার জন্য আলাদা করে দিন রাখার দরকার কি? প্রতিদিন ই ভালোবাসা যায় । আমি বলব দিবসের জন্য কোন জিনিস জমা রাখা হয় এটা কোন দিবসের জন্য খাটে না । যেমন ধরুন আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্ব আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস তাই বলে আমরা শুধু ঐ দিন মাতৃ ভাষায় কথা বলি । এই কথা আবার বলতে হল আপনার জীবনে যদি আনন্দের একদিন বেড়ে যায় তবে দোষ কি !

তবে একটা কথা সত্যি কোন কিছু রাতা –রাতি পরিবর্তন ভালো নয় । আপনি সিমাবদ্ধ নন । আপনি এই পৃথিবীর একটা অংশ । সব কিছু চেখে দেখবার অধিকার আপনার আছে । কোনটা গ্রহন করবেন সেটা আপনার ব্যাপার ।