বাংলাদেশ, ভারত ও স্বাধীনতা

জাহিদুর রহমান খান
Published : 5 March 2013, 02:24 PM
Updated : 5 March 2013, 02:24 PM

এক ছিনতাইকারী এক ভদ্রলোককে ছিনতাই করছে, ভদ্রলোককে তার হাত ঘড়ি , মানি ব্যাগ, মোবাইল ফোন একে একে সব দিয়ে দিতে বলছে। ভদ্রলোক তো দিবে না কারণ এটা অন্যায়, এবং তার মনবল ও সাহস অনেক বেশী হওয়ায় সে ছিনতাইকারীর সাথে ধস্তা-ধস্তি শুরু করল। এমন সময় আরেকজন লোক এসে এই অবস্থা দেখে ছিনতাইকারীর হাত থেকে ভদ্রলোক কে উদ্ধার পেতে সাহায্য করল। উদ্ধার পাওয়ার পর ভদ্রলক ওই ব্যাক্তিকে চরম কৃতজ্ঞতার সাথে বলল, ভাই আপনিই তো আমার প্রকৃত বন্ধু, কারণ আপনি আমার বিপদে এগিয়ে এসেছেন।

এবার উদ্ধারকারী ব্যাক্তি ওই ভদ্রলোকের কাঁধে হাত রেখে বলল হ্যাঁ আমি না থাকলে তো আপনার সব কিছু নিয়ে যেত, এর পরপরই বলল আপনার ঘড়িটা তো সুন্দর, আমাকে আপনার ঘড়িটা দেন না প্লিজ। ভদ্রলোক আর কি করবে ভদ্রতার খাতিরে দিয়ে দিল ঘড়িটা, এত উপকারি ব্যাক্তি এর আগে কখনো দেখেনি সে।

ঘড়ি পাবার পর ওই উদ্ধারকারী ব্যাক্তি এবার বলল ভাই আপনার মোবাইল টা দেন না, আপনার মোবাইল টা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এই কথা শুনে ভদ্র লোক তব্দা খাইল-কিরে কি কয়!!! ভদ্রলোক বোঝানোর চেষ্টা করল মোবাইলটা তার খুবি দরকারি, তাই দেয়া যাবে না।

তার এই অস্বীকৃতি শুনে উদ্ধারকারী ব্যাক্তি বলল, ভাই দেখেন আমি যদি না আসতাম তাহলে এই মোবাইল কিন্তু আপনার পকেটে থাকতো না ছিনতাইকারীর পকেটে চলে যেত, এবং যেহেতু আমি আপনাকে উদ্ধার করেছি তাই এই মোবাইল এক হিসেবে আমার, সে এই বলে সাথে সাথে ভদ্রলোকের মানিব্যাগ টাও একই ভাবে চাইল!!!

এই অবস্থায় ওই ভদ্রলোকের আসলে কি করা উচিত, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের খাতিরে সে কি তার সব কিছু দিয়ে দিবে? নাকি সে তার সাহস এবং মনবলকে কাজে লাগিয়ে এই নবরুপি ছিনতাইকারীর হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করবে???

***ভারত আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছে, আমরা কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছি, কিন্তু এর মানে এই নয় যে বাংলাদেশের সকল সম্পদ ভারতের। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা ক্রমাগত সেই উদ্ধারকারীর (নব্য ছিনতাইকারীর) ভুমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। তারা পানি বণ্টন থেকে শুরু করে ট্রানজিট, সীমানা নির্ধারণ, টিভি চ্যানেল সম্প্রচার প্রভৃতি আরও অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে শুধু সুবিধা নিচ্ছেই। এখন আবার সুন্দর বনের পাশে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ মালিকানায় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে চাচ্ছে। এতে ভারতের সবচেয়ে বেশী যে লাভটা হবে সেটা হচ্ছে আমাদের সুন্দর বনের সকল প্রানি-সম্পদ ভারতের অংশে চলে যাবে এবং আমাদের অংশের জীব বৈচিত্র্য একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তারা সুন্দর বনের একক মালিকানা পেয়ে যাবে। এবং ভবিষ্যতে সুন্দরবন ভিত্তিক যে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে তার একক সুবিধাভোগীও তারা হবে।

তাই আমাদের উচিত হবে নিজেদের সাহস মনবল এবং মেধাকে কাজে লাগিয়ে তাদের এই কূটকৌশলকে প্রতিহত করা এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করা।