খবরটি প্রথম যখন জানলাম তখন নিজের মাঝে কষ্ট ও ক্ষোভ জমা হলেও বেশি শংকিত ছিলাম না এই ভেবে যে, প্রাণহানি বা বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় হবে না! কিন্তু ক্রমেই বুঝতে পারলাম আমি আসলে ঠিকমতো বুঝতে পারিনি! পৃথিবীর শান্ত স্নিগ্ধ ও সৌন্দর্য, মেধা ও মননশীলতার দিক দিয়ে যে স্থানগুলো বিশ্বের সব মানুষের কাছেই আকর্ষণীয় আজকে সেখানে থাবা পড়েছে বিষাক্ত দাঁতের! সেটা চরমপন্থার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ নাকি মৌলবাদের কলুষিত ছায়া তা অবশ্য চিহ্নিত করা যায়নি এখনো। কিন্তু সন্ত্রাসের সে পথ অবলম্বনকারীরা যে শান্তির বিপক্ষে আর অশান্তির কুৎসিত অশুভ পথের যাত্রী তা বলাই বাহুল্য।
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শান্তি, মেধার জন্য নোবেল পুরস্কার দিয়ে বেড়ায় আর শান্তির সে ভূমি আক্রান্ত এখন সন্ত্রাসের অশুভ ছায়ায়! আল কায়েদার মৌলবাদ দেশটিকে আঘাত করার হুংকার দিয়েছিল ২০০৭ সালেই। আফগান যুদ্ধে তালেবান বধের জন্য যাওয়ার কারণে তাদের প্রতি হুমকিও ছিলো। শান্তির পূজারীরা হয়তো এগুলো মাথায় নেয়নি! হতে পারে বোঝেনি! উটোইয়া দ্বীপে সন্ত্রাসী চক্রের গুলিবর্ষণ ও দেশটির রাজধানী অসলোতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছের ভবনে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে যে অপশক্তি জড়িত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর শান্তি, সম্প্রীতি ও নির্মলতাও বুঝি এবার কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে ঘৃণ্য সন্ত্রাসীর দল! আমরা গভীর সমবেদনা জানাই সেই ঝরে যাওয়া প্রাণের সম্মানে, তাদের আত্মা শান্তি পাক, বর্বরতার ছায়ায় ঘুমিয়ে যাওয়া এমন পরিণতি নিশীথ সূর্যের দেশ বা অন্য স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো তো নয়ই, অন্য কোনখানেই ঘটুক আমরা তা চাই না। ঘৃণ্য তৎপরতার সাথে যুক্ত সেই কুখ্যাত মন ও অশুভ মননের মানুষগুলোর প্রতি লক্ষ কোটি ধিক্কার!
এখন পর্যন্ত বোমা ও গুলিতে প্রাণহানি প্রায় শ'র কাছাকাছি।
নরওয়ের বাতাসে কান্নায় ঢাকা পড়েছে যেন সব কিছু! আতঙ্ক শান্তির ছায়াতলে থাকা মানুষগুলোর মাঝেও! আমরাও শোকাভিভূত! মর্মাহত! ক্ষুব্ধ!সেখানে মৃতের সংখ্যা ৯১ জন। এটা আরো ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা!
পুলিশের পোশাক পরিহিত বন্দুকধারীর গুলিবর্ষণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৯১। অসলোর ৮০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমের উটোইয়া দ্বীপে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির যুব সংগঠনের সম্মেলনে গুলিবর্ষণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে বোমা বিস্ফোরণের মারা যায় ৭ জন।
বাংলাদেশী প্রবাসীর আতঙ্ক, উদ্বেগ শান্তির নগরীতেও সহিংসতা, বাংলাদেশী প্রবাসীদের আতঙ্ক ও উদ্বেগ: অসলোয় তখন বিকাল সাড়ে ৩টা। গ্রোনল্যান্ড মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে বন্ধু আর দেশিদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে বেরিয়ে আসছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এমন সময় কানে তালা লাগানো এক বিস্ফোরণের শব্দ স্তম্ভিত করে দেয় তাদের। 'শান্তির' শহর অসলোর সঙ্গে এ ধরনের শব্দের পরিচয় নেই খুব একটা।
আমরা ব্যথিত, মর্মাহত, শংকিত ও ক্ষুব্ধ। শান্তির বিপক্ষে সন্ত্রাস ও অশুভ চক্র, মৌলবাদীদের কালো থাবা থেকে পরিত্রাণের কি কোনো পথ নেই! বারবার রক্তাক্ত হচ্ছে সজীব, তরতাজা প্রাণ সন্ত্রাসের আঘাতে! কেন!
নরওয়ের এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে সামহোয়্যারইন ব্লগে কয়েকটি পোস্ট: