প্রসঙ্গঃ কওমি মাদ্রাসা

জিসান শাহরিয়ার
Published : 23 July 2011, 06:24 AM
Updated : 23 July 2011, 06:24 AM

ব্লগারদের মাঝে মৌলবাদ প্রসঙ্গটা বেশ ঘুরে ফেরে আসে আর মৌলবাদ নামক এই নাটকে বেশ কছু চরিত্র আছে যেমন মাদ্রাসা, রাজাকার, জঙ্গি, আমিনি, জামাত শিবির, ইসলামী ঐক্যজোট ও সাইদি। তো আজ আমি কথা বলবো বাংলাদেশে'র মাদ্রাসা নিয়ে। ইসলাম ধর্ম কে জানার জন্নে দুটো শিক্ষা ব্যাবস্তা রয়েছে একটি আলিয়া মাদ্রাসা আরেকটি কওমি মাদ্রাসা। সেই আলচনার প্রথম কিস্তি "কওমি মাদ্রাসা"।

কওমি মাদ্রাসার পরিচিতিঃ কওম থেকে কওমি। কওম অর্থ জাতি বা সাধারণ মানুষ। সেই অর্থে কওমি মাদ্রাসার অর্থ দারায় সাধারণ মুসলিম জনতার দান ও সার্বিক সহযোগিতায় পরিচালিত ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কওমি মাদ্রাসা আরও কয়েকটি নামে সুপরিচিতঃ দেওবন্দি মাদ্রাসা ও খারেজি মাদ্রাসা।

দেওবন্দি মাদ্রাসা নামে পরিচিত হওয়ার কারনঃ বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ নামক জায়গায় দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা নামক শিক্ষাকেন্দ্রটির আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণায় পরিচালিত হয় বলে। দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কারনঃ দিল্লির বাহাদুর শাহ জাফরের পতনের পর ভারতবর্ষ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির দখলে চলে গেলে গুটিকয়েক আলেম সরকারি সহযোগিতা পরিত্যাগ করে সাধারণের দান ও সার্বিক সহযোগিতায় পরিচালিত এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে যার উদ্দেশ্য ভারতবর্ষ থেকে অমুসলিম শাসন বিলপ করে পুনরায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করা আর এই লক্ষে সম্পূর্ণ ধর্মীয় অনুপ্রেনায় একটি শতভাগ ধর্মীয় পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করে। যার সাথে আধুনিক শিক্ষার সাথে তিল পরিমাণ সম্পর্ক নেই। অমুসলিম শাসনের বিরেধিতা হয়ে গেল বিজ্ঞান ভিত্তিক ও আধুনিক শিক্ষার বিরাধিতা।

খারেজি মাদ্রাসা নামে পরিচিত হওয়ার কারনঃ এই নামে পরিচিত হওয়ার কারন ২টি কারন ১ খুরুজ থেকে খারেজ থেকে খারেজি। খুরুজ অর্থ বাহির হওয়া বা করা সেই অথে খারেজি মাদ্রসা মানে হল যেই মাদ্রাসা মূল ও প্রচলিত শিক্ষা ব্যস্ততার বিপরীতে নিজ স্বকীয় চিন্তা ধারায় পরিচালিত যেহেতু তারা ইংরেজ সরকার পরিচালিত আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে গেছে। কারন ২য় ইংরেজ সরকার ভারত বাসি কে বুঝাতে চেয়েছে দেওবন্দ মাদ্রাসাপন্থীরা অহাবি সালাফি খারেজি এরা ভারতীয় মুসলিম আকিদা চেতনার বিরোধী বলে, এদের ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন দুর্বল করতে চেয়েছে।

কওমি মাদ্রাসার আকিদা ও বিশ্বাসঃ এরা আহলে সুন্নত অয়াল জামাতের দাবিদার ও মাতুরিদিপন্থী। আহলে হাদিস ও মাইজভাণ্ডারী তরিকা ও মাজারের ঘোর বিরোধী। কওমি মাদ্রাসার রাজনৈতিক বিশ্বাসঃ এরা গণতন্ত্র কে কুফর মনে করে। ১৯৮১ এ হাফেজ্জি হুজুরের মাধ্যমে কৌশল গত কারনে বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতিতে নাম লিখায় তবে তাদের উদ্দেশ্য ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা কিন্তু তাদের একটি তরুণ ও বিশাল অংশ এই প্রক্রিয়াকে ধীর বলে হরকাতুল জিহাদকে এই দেশে আমদানি করে।

কওমি মাদ্রাসার রাজনৈতিক দলঃ খেলাফত আন্দলন ( প্রতিস্থাতাঃ হাফেজ্জি হুজুর বর্তমান আমিরঃ তার ছেলে আহমাদুল্লা আশরাফ ) । খেলাফত মজলিস ( প্রতিষ্ঠাতাঃ সাইখুল হাদিস আজিজুল হক। ইসলামী আন্দোলন ( প্রতিষ্ঠাতা: চরমোনাই পীর ফজলুল করীম বর্তমান আমিরঃ তার ছেলে ফয়জুল করীম )। ইসলামী মোরচা ( প্রতিষ্ঠাতা: ফজলুল হক আমিনি )। হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ ( সশস্ত্র জঙ্গি )। কওমি মাদ্রাসার অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান: বিশ্বব্যাপী পরিচালিত তাবলীগ জামাত কার্যক্রম যা শান্তিময় পদ্ধতিতে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিয়ে থাকে। এর প্রবর্তক মাওলানা ইলিয়াস (র)। তবে মসজিদ মাদ্রাসার আলেমদের বর্তমানে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তাবলীগ জামাতের দায়িত্বশীল আমিরদের সাথে মানসিক দূরত্ব দেখা যাচ্ছে। কারন মাদ্রাসার আলেমগন নিতান্ত দরিদ্র ও মসজিদ মাদ্রাসা নির্ভর পেশা তাই তারা চাইলেই তাবলীগ জামাতে বের হতে পারেনা এই অবস্থায় তাবলীগ জামাতের বর্তমান কর্তৃপক্ষ তাবলীগের আমিরের পদ গুলো আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের হাতে দিয়ে দিচ্ছে এতে মাদ্রাসায় পাঠদানরত আলেম গন ইসলামী শিক্ষার ব্যাপারে এই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত আমিরদের জ্ঞানগত দুর্বলতাকে অতি মাত্রায় আলোচনায় আনতে চাইছে। এদের মানসিক সংঘাত এখন অনেকটাই প্রকাশ্য।

কওমি মাদ্রাসার ভৌগলিক প্রসারঃ বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান (লাল মসজিদে পাক আর্মির সাথে যেই সংঘর্ষ হয়েছিল তারা দেওবন্দ পন্থী) ও আফগানিস্তান ( তালেবানরা দেওবন্দ পন্থী)। কওমি মাদ্রাসার সংখা: ৮৫% বাকি ১৫% আলিয়া মাদ্রাসা।

কওমি মাদ্রাসার আধিক্যের কারনঃ সরকারি স্বীকৃতির ঝামেলা নেই অল্প খরচে অধিক পরিশ্রমে সাধারণ মানুষের চাঁদাতে বাৎসারিক খরচ উঠে আশে। এই ফাঁকে সাধারণের চাঁদায় এলাকার হাজি সাহেবদের মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সহ সভাপতি সদস্যার পথ অলঙ্কৃত করার সুযোগ হয়। যেখানে একটি আলিয়া মাদ্রসা ও স্কুল প্রতিষ্ঠায় অধিক খরচ ও সরকারের কাছে জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার বোঝা চেপে থাকে।

কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যসূচী ব্যাবস্থাপনা ১২ বছর মেয়াদি কিতাব বিভাগ হেফজ খানার ৪ বছর সহ ১৬ বছর। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ইংরাজি ও গণিত শেখানো হয় যা তাদের নিজস্ব কওমি মাদ্রাসা বোর্ড থেকে প্রকাশিত।

কওমি মাদ্রাসার দুর্বলতা: পূর্বে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক বোর্ড এ বিভক্ত ছিল বিএনপি শাসনামলে তারা এক হওয়ার চেষ্ঠা করে বর্তমানে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া সর্ব বৃহৎ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড। এখানে দাখিল আলিম ফাজিল কামিল এর মত কোন ধাপ নেই। সেই মক্তবে ভর্তি হওয়ার পর যদি আপনি হেফজ খানায় না যান তাহলে সাধারণত ১২ বা ১৩ বছরে দাওরায়ে হাদিস অর্থাৎ মাওলানা টাইটেল পাবেন এর মাঝে হেফজ খানায় কোরআন হেফজের জন্নে গেলে আরও ৩ বা ৪ বছর। আপনি যদি এক বছর কম ও পড়াশুনা করেন তাহলেও আপনি মাওলানা হতে পারবেন না। স্বাধীনতার পর এরশাদ সরকার তাদের দায়িত্ব নিতে চাইলে তারা বেশ বড় গলায় বলেন আমরা আল্লাহর স্বীকৃতি বাদে দুনিয়াবি কোন স্বীকৃতি চাইনা বর্তমানে বিএনপি'র সাথে তাদের দাবি হল আমাদের সমর্থন নাও সরকারী স্বীকৃতি দাও।

কওমি মাদ্রাসা পড়ুয়াদের পেশা ও আয়ঃ তারা যেহেতু এরশাদ সরকারের স্বীকৃতি'র প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল সেই হিসেবে তারা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অবাদ্ধ। তারা নিজ ঘরানার মসজিদ মাদ্রাসা বাদে কোথাও চাকরি পায়না তারা যেহেতু সাধারণের দানে চলে তাই তাদের আয় গড় পড়তায় ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। ঢাকার মাদ্রাসায় প্রখ্যাত আলেম হলে ১০০০০ টাকা পেয়ে থাকে আর ঢাকার বাইরের কথা সহজেয় অনুমিয়।

দানে প্রতিদানে কওমি মাদ্রাসাঃ সেই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষের দানেই চলছে কিন্ত প্রতিদানে তারা কিছুই দিচ্ছেনা। রাষ্ট্র দেশ ও দশ তাদের থেকে ১টা কানা কড়িও আজ পর্যন্ত পাইনি সামনে কি হবে তা ঝুলে আছে রাজনৈতিক জুয়ায়। কওমি মাদ্রাসার আবাসিক ব্যাবস্তাঃ ৯৯% আবাসিক। যেহেতু ইল্মে দীন রুহানি ও নুরানি বিষয় তাই মাদ্রাসায় না থেকে ও কষ্ট না করে তা হাসিল হবেনা ইহা তাদের গভীর বিশ্বাস। তাই ছোট বাচ্চারাও রাতে থাকতে বাধ্য হয়।

হরকাতুল জিহাদ ও কওমি মাদ্রাসাঃ হুজি হাফেজ্জি হুজুরের বন্ধ হয়ে যাওয়া মাসিক পত্রিকা 'রহমত' কে তার ছেলে আহমাদুল্লা আশরাফের অনুমতি নিয়ে নিজেদের মুখপত্র হিসেবে ব্যাবহার করেছিলো।

কওমি মাদ্রাসার প্রতি অভিযোগঃ ৭১ এ বিতর্কিত ভুমিকা। তারা বিশ্বাস করে ৭১ ইসলামী ঐক্য কে বিনষ্ট করেছে। শিক্ষক ও বড় ছাত্রদের দ্বারা শিশুদের উপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতন। ১৮ বছরের নিচের শিশুদের রাজনৈতিক কার্যক্রমে ব্যাবহার। জাতিও পতাকা উত্তোলনে অবহেলা ও জাতিও সংগীতকে অবমাননা। তারা জাতিও সঙ্গীত কে মালাউনি সঙ্গীত বলে থাকে। হরকাতুল জিহাদের সাথে সংশ্লিষ্টতা। জাতীয় শিক্ষানীতিকে এড়িয়ে সম্পূর্ণ সেকেলে পাঠ্যসূচি। আধুনিক, বিজ্ঞান ভিত্তিক ও নারী শিক্ষার বিপক্ষে। এবং বর্তমানে তারা পারিবারিক , ব্যক্তিক, নীতিহীন ও সহিংস রাজনীতি নির্ভর হয়ে পরছে।