Ruins of Poverty ফেসবুক ফোরাম ও ব্লগ-বিডিনিউজ২৪ডট কম এর সৌজন্যে শীতবস্ত্র বিতরণ

নীলকণ্ঠ জয়
Published : 16 Jan 2013, 01:07 PM
Updated : 16 Jan 2013, 01:07 PM

ফেসবুক ফোরাম Ruins of poverty ও ব্লগ-বিডিনিউজ২৪ডট কম এর সৌজন্যে ১৫ জানুয়ারী সকাল ১০টায় রাজশাহীর খিদিরপুর চরে ২২০টি পরিবারের মাঝে শীতের নতুন কম্বল বিতরণ করা হয়। এছাড়া আরোও ৫০ জন শিশু ও বয়স্কদের মাঝে শীতের উলের টুপি বিতরণ করা হয়।

গত ২৪ ডিসেম্বর আমি ফেসবুক ফোরাম Ruins of Poverty ও ব্লগ বিডিনিউজ২৪ডটকমে দুটি পোষ্টের মাধ্যমে সমাজের সকলকে গরীব শীতার্তদের পাশে দাড়ানোর আহবান জানাই। আসুন শীতার্তদের পাশে দাঁড়াইঃ এবার যাব পদ্মা পাড়ে (অবহেলিত,জনবিচ্ছিন্ন, সুবিধা বঞ্চিত গ্রাম রাজশাহী-ভারত সীমান্তবর্তী খিদিরপুর)

এই আহবানে সাড়া দেয় ফেসবুক ফোরামের সদস্য ও প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টের ছাত্র-ছাত্রীরা এবং বিডিনিউজ২৪ডট কমের সম্মানিত ব্লগাররা।
বিস্তারিতঃ
শীত বস্ত্র বিতরণ আপডেট (Ruinsএবং ব্লগ-বিডিনিউজ২৪ডটকম যৌথ উদ্যোগ)

গত ১৪ জানুয়ারি রাত ৯টায় একটি মাইক্রোবাসে করে আমরা ৮ জনের একটি দল(নাজমুল বাবু,সাঈদ,নাজমুল,নজরুল,জাহিদ,সালমান,মাহাবুব ও আমি) রাজশাহীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি।সারা রাতের ভ্রমণের মাঝে টাঙ্গাইলে ছোট ভাই নাজমুল বাবুর বাসায় রাত ১২'৩০টায় আমরা ডিনার সারি।ভোর ৫.৩০ এ আমরা রাজশাহীর বিনোদপুর বাজারে পৌঁছাই।সেখানে আমাদের সাথে যোগ দেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪জন সদস্য(রুহুল,রবিউল,তমালিকা এবং স্বপ্না)।রাজশাহীতে আধাবেলা হরতাল থাকায় ভোরেই আমরা ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা করি এবং ২০ মিনিট পর শ্যামপুর বালুঘাটে পৌছাই।

ঘন কুয়াশার কারণে ৯টার আগে ট্রলার ছাড়া সম্ভব হয়নি। পদ্মার বুক চীরে ট্রলারযোগে প্রায় ১ঘন্টার যাত্রা শেষে সকাল ১০টায় আমরা চর খিদিরপুরের ঘাটে পৌছে যাই।সেখান থেকে ১০মিনিটের পথ পার হয়ে পৌছে যাই খিদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।সকাল থেকেই যাদের নামের তালিকা করা হয়েছিল তারা সহ স্থানীয় হাজারখানেক মানুষ ভীড় জমায় স্কুল মাঠে।

শুরুতেই আমাদের ছোট ভাই সাঈদ সকলকে ধন্যবাদ জানায় এবং শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে স্থানীয় মানুষদেরকে উতসাহিত করে।সাথে সাথে সকলকে Ruins of Poverty ও ব্লগ-বিডিনিউজ২৪ডটকম এর পরিচয় প্রদান করে।বন্ধু জাহিদ হাসান সকলকে জানায় নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে শিক্ষার বিকল্প আর কিছু নেই।প্রাথমিক চিকিতসা নিয়ে মাহাবুব,রুহুল,রবিউল,তমালিকা,নজরুল এবং স্বপ্না বক্তব্য প্রদান করে।তারা সকলে এক একটি প্রাথমিক চিকিতসা পদ্ধতি গ্রামের মানুষদের শিখিয়ে দেয়।সাথে সাথে এটাও জানিয়ে দেয় আমাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র শীতবস্ত্র প্রদান নয়,সকলকে সচেতন করাও।গ্রামের মানুষ আগ্রহভরে এসব কথাগুলো শোনেন।সমাপনী বক্তব্যে আমি তাদেরকে সমন্বিত চাষাবাদ পদ্ধতিতে চাষাবাদের গুরুত্ব বুঝিয়ে বলি।তারা অঙ্গিকার করে ভেদাভেদ ভুলে সকলে মিলে সবজি ও ফলের চাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করবে।

উল্লেখ্য এই চরের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষই হত দরিদ্র এবং ৯৯ ভাগ মানুষই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্ছিত।গ্রামে একটা প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক ৫ জন।ছাত্র-ছাত্রী ৮২৫জন এবং একটি দোতলা ভবনসহ মোট ৩টি ভবন। ক্লাশ শুরু হয় সকাল ১১টায়।শিক্ষকরা সকলেই থাকে রাজশাহী শহরে।নিয়মিত উপস্থিত থাকে ১/২জন শিক্ষক।শিক্ষার পরিবেশ গোয়ালঘরের তুল্য কারণ ২টি ক্লাশরুম বাদে বাকিগুলোতে গরু রাখা হয়! শিশুদের জন্য নেই পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা । চরের মানুষদের অভিযোগ তারা তাদের বাচ্চাদের শিক্ষিত করতে চাইলেও তা নানা অনিয়মের কারনে বাধা প্রাপ্ত হচেছ । এই গ্রামে নেই কোন ডাক্তার কিংবা অন্য কোন চিকিৎসা সুবিধা । কেউ অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে ৮ কিঃমিঃ নদী পথ পারি দিয়ে রাজশাহী শহরে যেতে হয় । নেই কোন বিদ্দুৎ বা কোন নাগরিক সুবিধা । তারা আকুল ভাবে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে । তারা চায় মানুষ হিসেবে বাচার অধিকার । এ পর্যন্ত এখানে যা সাহায্য এসেছে তা পুরোটাই অনিয়মের জালে আবদ্ধ রয়েছে । তিন দিকে সীমান্ত আর এক দিকে নদী থাকার কারনে তারা সব সময় লাঞ্চনা-বঞ্ছনার শিকার হয় ।

সকাল ১০'৫০ টায় শুরু হয় শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রম। শীতে নতুন কম্বল পেয়ে আনন্দে কেদে ফেলেন কেউ কেউ।চরের মুরব্বি জিয়া ভাই আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেন। বয়স্ক এবং হতদরিদ্ররাই আমাদের দেয়া শীতবস্ত্রগুলো পান। বয়স্কা থুরথুরে এক মহিলা কেদে ফেলেন নতুন কম্বল পেয়ে।জানান এর আগে যারা কম্বল দিয়েছেন তা কখনই তাদের মত গরীবের হাতে পৌছায় নি। একে একে তালিকার সকলে পেয়ে নতুন কম্বল।এর পর তালিকার বাইরে ৫০ জন শিশু ও বয়স্কের মাঝে নতুন উলেন টুপি বিতরণ করা হয়। সকলের সাথে আনন্দ ভাগ করতে পেরে তরুণ দলটি সত্যি অনেক খুশি।তারা সকলের আন্তরিক সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানায় ব্লগার ও ফেসবুক ফোরামের সদস্যদের।সাথে সাথে সমাজের সকলকে এ রকম নতুন নতুন উদ্দ্যোগে শরীক হওয়ার আহবান জানায়।

উল্লেখ্য Ruins of poverty forum থেকে মোট সংগ্রহ ছিল ২৩২৭৩ টাকা এবং ব্লগারদের কাছ থেকে সংগ্রহ ছিল মোট ১১৭০০ টাকা । এছাড়া ব্লগার নুরুন্নাহার শিরিন ১০ পিছ কম্বল এবং ব্লগার জান মাহমুদ ২১ পিছ টুপি অনুদান হিসেবে দেন ।শিরিন আপুর কম্বলসহ সর্বমোট ২২০টি কম্বল বিতরণের জন্য কেনা হয়।জান মাহামুদ ভাইয়ের ২১টি উলেন টুপির সাথে যোগ করা হয় আরো ২৯টি টুপি।
শীত বস্ত্র বিতরণ আপডেট

Ruins of poverty এর আগেও গরিবদের সাহায্যার্থে শীত বস্ত্র প্রদান সহ ৮ টি প্রোগ্রাম করে । এবার ফোরামটির সাথে ব্লগ বিডি নিউজ ২৪ডটকম যোগ দেওয়ায় বড় একটি সফল উদ্যোগ সম্পন্ন হল। আমরা ফোরাম এবং ব্লগ এর সদস্যরা সরকারের কাছে বিনিত অনুরোধ জানাচ্ছি যে তাদের প্রতি যেন সরকার সুদৃষ্টি দেয় । ফোরাম এবং ব্লগ সদস্যরা আগামীতেও এমন সব মানুষের পাশে থাকে সে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

এই উদ্যোগে সামিল হওয়ার জন্য ব্লগারসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।