চতুর্দিকে বানান ভুলের মহড়া

নীলকণ্ঠ জয়
Published : 4 Jan 2015, 07:15 PM
Updated : 4 Jan 2015, 07:15 PM

বাণিজ্য মেলায় প্রবেশ করতে গিয়ে জনাব দবির সাহেবের চোখ আটকে গেলো প্রধান ফটকে। ভাবলেন ভুল একবার হতেই পারে। তাই বিশেষ গুরুত্ব দিলেন না। মনে মনে একহাত নিলেন আয়োজকদের। সমগ্র মেলা ঘুরে নিজেকেই প্রশ্ন করলেন, 'ভুল বারবার কেন? বাংলার প্রতি কেন এতো অনাদর?' ঢাকার একটি নামী স্কুলের বাংলার শিক্ষক তিনি। গতকালও ক্লাসে পড়িয়ে এসেছেন 'ণ' এর ব্যবহার। বোর্ড ব্যাকরণ নামে পরিচিত ব্যাকরণ থেকে তিনি পড়িয়েছেন স্বভাবতই 'ণ' -এর ব্যবহার। ছন্দে ছন্দে পড়িয়েছেন-

চাণক্য মাণিক্য গণ, বাণিজ্য লবণ মণ
বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা।
কল্যাণ শোণিত মণি, স্থাণু গুণ পুণ্য বেণী
ফণী অণু বিপণি গণিকা।
আপণ লাবণ্য বাণী, নিপুণ ভণিতা পাণি
গৌণ কোণ ভাণ পণ শাণ।
চিক্কণ নিক্কণ তূণ, কফোণি বণিক গুণ
গণনা পিণাক পণ্য বাণ।

নিজের স্কুলেও তিনি এর আগে তর্ক করেছিলেন সাইনবোর্ডে 'এন্ড' লেখা নিয়ে। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন বানানটি 'এন্ড' নয় 'অ্যান্ড' হবে। যদি 'এন্ড' লেখা হয় তবে ইংরেজি বানানে তা হবে END. কিন্তু কেউঁ কর্ণপাত করেননি। অথচ এই ভুলটি প্রায় অধিকাংশ স্থানেই করা হয়। যেমন- 'স্কুল এন্ড কলেজ', 'স্টোর এন্ড ভ্যারাইটিজ' ইত্যাদ।

অবশ্য ভুলের শুরু সেই 'বাঙলা একাডেমি' থেকেই। 'বাঙলা' না কি 'বাংলা' এই বিতর্কের অবসানই ঘটাতে পারেননি তাঁরা। এমনকি বিদেশী শব্দের বানানে সর্বদাই 'ই'-কার ব্যবহার করতে বললেও নিজেরাই 'একাডেমি' বানান লিখেছেন 'একাডেমী'। অবশ্য রাষ্ট্রপতি জনাব আব্দুল হামিদ গত ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ তারিখে সংসদে বিল পাশ করে সর্বত্র 'একাডেমি' লেখার অনুমোদন দিয়েছেন। আচ্ছা 'একাডেমি' না কি 'অ্যাকাডেমি?' এই বিতর্কে নাইবা গেলাম।

হাটতে হাঁটতে দবির সাহেবের মনে পড়ে গেলো কয়েকদিন আগের কথা। বোর্ড পরীক্ষার খাতা দেখছিলেন সেদিন। একজন ছাত্রের খাতায় একটি লেখা দেখে চোখ আটকে গেলো। ছাত্রটি 'পাগল' শব্দ দিয়ে বাক্যরচনা করেছে 'পাগলে কিনা খাই'। মনে মনে খানিকক্ষণ হেসে গোল লালমার্ক করে দিলেন 'কিনা' এবং 'খাই' শব্দের উপর। ভাবলেন ক্লাসে কতবারই না পড়িয়েছেন- 'নিজের কথা বলতে হলে 'ই' লিখবে, অন্যের কথা বলতে হলে লিখবে 'য়'।' যেমন- আমি খাই, সে খায়, আমি যাই, সে যায়, রহিম যায়। এদের শিক্ষকও নিশ্চয়ই পড়িয়ে থাকবেন। ছাত্রের ভুলের দোষতো আর শিক্ষককে দিতে পারেন না।

ভাবতে ভাবতে বাসায় ফেরার গাড়ি ধরলেন দবির সাহেব। বাংলার শিক্ষক হিসেবে নিজেকে ব্যর্থ সাব্যস্ত করলেন। এখন আসা যাক কী ভুল ছিলো সেদিনের মেলায়? প্রধান ফটকে বড় করে লেখা আছেঃ 'ঢাকা আর্ন্তজাতিক বানিজ্য মেলা ২০১৫।' মেলা জুড়েই একই ভুল 'আর্ন্তজাতিক'। কোথাও আবার বাণিজ্য বানানটি বানিজ্য লেখা।

দবির সাহেবের কাল্পনিক গল্পটি আমাদের সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। বাংলা বানান নিয়ে আমাদের অনীহা, অবহেলা আর কতকাল?

চলবে…