‘সুশীল’ নাকি ‘কর্পোরেট দালাল’?

নীলকণ্ঠ জয়
Published : 24 Feb 2015, 06:26 AM
Updated : 24 Feb 2015, 06:26 AM

সময় এসেছে 'সুশীল' শব্দের চূড়ান্ত যবনিপাত করার। অনলাইন প্রজন্ম বহুদিন ধরেই শব্দটিকে ঘৃণার চোখেই দেখে আসছে। পক্ষান্তরে এই সমাজে একধরণের মানুষ নিজেদের সুশীল পরিচয় দিতেই পছন্দ করেন। কিন্তু 'সুশীল' শব্দটি নতুন করে ভাবনার জন্ম দিলো প্রখ্যাত টকশোবিদ মাহামুদুর রহমান মান্নার টেলিফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর থেকে। নতুন প্রজন্ম যে সচেতন, একথার প্রমাণ মিলছিল না, ফলে সুশীলদের প্রতি তাদের ঘৃণা হালে পানি না পাওয়ার মতো অবস্থা ছিল। সমাজের একশ্রেণী এই প্রজন্মকে অন্ধ বলে উল্টো ঠাট্টা করতেন। ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নব্য প্রজন্মকেই মাথায় তুলে নিলো, চুনকালি লেপন করলো তথাকথিত বুদ্ধিজীবী আর দালালদের মুখে।

বাংলা একাডেমীর সহজ বাংলা অভিধানে 'শীল' শব্দটির অর্থ স্বভাব, চরিত্র (সুশীল), আচার-আচরণ, রীতিনীতি, বৌদ্ধদের অবশ্যপালনীয় নীতি (পঞ্চশীল) ইত্যাদি। আবার, 'সুশীল' শব্দের অর্থ হিসেবে সুবোধ, সচ্চরিত্র, ভদ্র, স্বভাব-চরিত্র ভালো এমন বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আমাদের চোখে অর্থাৎ এই প্রজন্মের কাছে 'সুশীল' শব্দটির অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুশীল অর্থ কনভার্টেড জানোয়ার, কর্পোরেট দালাল।

মান্না সাহেবের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকেই স্পষ্ট করে প্রমাণ করে দেওয়া যায় 'সুশীল' মানেই 'কনভার্টেড জানোয়ার' কিংবা 'কর্পোরেট দালাল'।

একজন সুস্থ এবং সুবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কখনোই রাজনীতির স্বার্থে লাশ চাইতে পারেন না। যখন নিরপেক্ষতার ভঙ্ ধরে টকশোতে গিয়ে সরকারের যাবতীয় সমালোচনা করবেন, মুণ্ডুপাত করবেন এবং বাহবা পাবেন; রাতে পলাতক একজন রাজনীতিবিদের সাথে, যিনি কিনা 'দা-বটি-কুড়াল' নিয়ে রাস্তায় নামার হুকুম দেওয়ার পর থেকেই পলাতক, লাশ ফেলানোর পরামর্শে লিপ্ত হবেন। তাও আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে কি-না আপনি দীর্ঘদিনের ভিপি ছিলেন। আপনাকে কী বলবে এই সমাজ? সুস্থ মানুষ কখনোই লাশ চাইতে পারে না। রক্তের নেশা মানুষের থাকে না কি রক্তপিপাসু জানোয়ারের?


একজন মান্নার গোপন রহস্য ফাঁস হলেও উঠে এসেছে সমগ্র সুশীল সমাজের বাস্তব চরিত্র। নাজানি আড়ালে আর কতো কিছু ঘটে যাচ্ছে। 'সুশীল সমাজ' শব্দটিকে প্রকৃত অর্থে আমি শ্রদ্ধার সাথে সাথে সম্মান করি। এদেশের শিক্ষক, ডাক্তার, সমাজসেবক এনারাও সুশীল। তথাকথিত রাজনৈতিক ধ্বজাধারী সুশীলদের জন্য পূজনীয়দের অসম্মান করতে পারি না, তাদের সম্মানের উচ্চাসনে রেখেই এই পোস্ট।

হ্যাঁ যা বলছিলাম। একটি ফোনালাপ কীভাবে সমাজের আরসকল ভণ্ডামি করা সুশীলদের মুখোশ খুলে দিলো দেখা যাক। ওনার ফোনালাপে স্পষ্ট করেই উঠে এসেছে কয়েকজন বুদ্ধিজীবী বা তথাকথিত সুশীলের নাম। যেমন- ড. এমাজউদ্দীন, ড. কামাল হোসেন, দুয়েকজন সাংবাদিকের নাম পর্যন্ত। সত্যি কথা বলতে ড. কামাল হোসেনকে আমি আজীবন নিরপেক্ষ একজন ব্যক্তি হিসেবেই দেখে এসেছি, দেখতে চেয়েছিলাম… কিন্তু…

তাদের, মান্না-খোকা সাহেবের ফোনালাপ প্রমাণ করেছে সুশীল মানেই কর্পোরেট দালাল। কীভাবে? আলাপের একপর্যায়ে স্পষ্ট করে মান্না সাহেব বললেন 'টকশোতে তিনি একটি কথা বলেছেন, বাকিদেরও বলতে বলেছেন।' জবাবে 'হুহুহু এবং ধন্যবাদ পেলেন।' আরও বললেন, 'টকশোতে অমুক মেয়েকে উপস্থাপক হিসেবে তিনিই বসিয়েছেন… কোন সমস্যা নেই।' খোকা সাহেব বললেন,' মেয়েটা ভালো করেছে।' বুঝলেন কিছু?

ছোটবেলায় 'WWE' বা 'বিগ ফাইট' খুব প্রিয় ছিল। একসময় যখন জানলাম এগুলো সব সাজানো নাটক তখন আর ভালো লাগতো না। ক্ষমতা বা রাজনীতির জন্য টকফাইটও এখন দেখছি মান্না গঙদের বা সুশীল গঙদের কিংবা কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের সাজানো নাটক।


দেশে একটা ক্যু সৃষ্টি করতে অজ্ঞাত একজন ব্যক্তির সাহায্যও চেয়েছেন তিনি। টেলিফোনের আড়ালে ভাইবার ইউজ করে কী কথা হলো তা কিন্তু আড়ালেই রয়ে গেলো।


সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। দেশের আপামর জনগণের প্রতিনিধি হয়ে এইসকল ব্যক্তিরা মিডিয়ায় কথা বলেন, দেশের মানুষ তাদের কথাগুলোকে বিশ্বাস করে… অথচ মুখোশের আড়ালে এনারা এরকমই কর্পোরেট দালাল। অর্থের কাছে নিজের শিক্ষা, জ্ঞান, বিবেক, বুদ্ধি বিকিয়ে দিতে কার্পন্য করে না। ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার জন্য লাশ পর্যন্ত দাবি করেন এনারা। আমরা এমন সুশীল চাই নি… সত্যি চাই নি…

আগেও বলেছি, এখনো বলছি, 'নিরপেক্ষতা' বলে কোন শব্দ নেই, নিরপেক্ষতা মানে মুখোশের আড়ালে কারো দালালী ছাড়া কিচ্ছু নয়। আজ থেকে এটাও বলবো রাজনীতিতে 'সুশীল' বলে কোন শব্দ নেই এরা সব 'কর্পোরেট দালাল।'