মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের রেগুলেশন নিয়ে তাড়াহুড়ো কার স্বার্থে?

খন্দকার সাখাওয়াত আলী
Published : 5 June 2018, 07:27 AM
Updated : 5 June 2018, 07:27 AM

১. পটভূমি

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সাল থেকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) জন্য ২৭টি ব্যাংক ও ১টি ব্যাংক সাবসিডিয়ারিকে লাইসেন্স দিয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন তৈরি করে এবং ২০১৪ সালে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করার জন্য গ্রাহক ও জাতীয় স্বার্থে জাতীয় দৈনিকগুলোতে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড কর্তৃক দ্রুত এমএফএস-এর রেগুলেশনটি পাশ করানোর প্রচেষ্টার কথা শোনা যাচ্ছে। বহুল ব্যবহৃত এই খাতের জন্য দরকার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রূপকল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। কাজেই প্রস্তাবিত রেগুলেশনের মাধ্যমে যদি ভিন্ন কোন অবস্থান নেওয়া হয়, তবে প্রতিষ্ঠিত এই খাতটি নৈরাজ্য ও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থ ও জনস্বার্থের সাথে সরাসরি যুক্ত। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই তাড়াহুড়ো নীতিমহলে বড় প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেন তবে এই তাড়াহুড়ো ?

২. এমএফএস-এর খসড়া গাইডলাইন থেকে রেগুলেশন (২০১৫-২০১৮)

একটি খসড়া গাইড লাইন (২০১৫) সকল স্টেকহোল্ডাদের আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দীর্ঘ দিন রাখা হয়েছিল। প্রথম দিকের এই গাইড লাইনে ব্যাংক সাবসিডিয়ারির জন্য একটি মোবাইল ফোন কোম্পানীকে শতকরা ১৫ ভাগ করে দুটি মিলে সর্বোচ্চ শতকরা তিরিশ ভাগের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু খসড়া তৈরির দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকারের অবস্থান ও সকল স্টেকহোল্ডার ও বিশেষজ্ঞদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যৌক্তিকভাবে মোবাইল ফোন কোম্পানীকে এমএফএস-এর মালিকানা দেওয়ার অবস্থান থেকে সর্ম্পূণভাবে সরে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর অন্তত দুবার বর্তমান গর্ভনরের উপস্থিতিতে গণমাধ্যমের সামনে বিষয়টি সরকারের অবস্থান হিসেবে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।

বর্তমান খসড়া রেগুলেশনে পূর্বের ঠিক উল্টো অবস্থান নেওয়া হয়েছে। সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলোকে ব্যাংক সাবসিডিয়ারির শতকরা ৪৯ ভাগ বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে। সেই সাথে এনজিওদের জন্যও একই বিশেষ সুবিধা সংরক্ষিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশী পরামর্শকের সুপারিশের কথা বলে, বিষয়টিকে উন্মুক্ত জনআলোচনায় না এনে বোর্ড সদস্যদের হাত দিয়ে দ্রুত এমএফএস-এর এই রেগুলেশান পাশ করানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। আমার বিশ্বাস, বোর্ডের সদস্যরা জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক নেতৃত্বের মনোভাব ও ইচ্ছা এবং সর্বোপরি জনস্বার্থের সমুন্নয় হয়েছে কিনা সেদিকগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।

২০১৫ সালে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের আলোচনার ভিত্তিতে মোবাইল ফোন কোম্পানীকে এমএফএস-এর মালিকানা না দেবার যে সিদ্ধান্ত সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক দৃঢ়ভাবে নিয়েছিল, চূড়ান্ত এমএফএস গাইডলাইনে কেন সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, অবশেষে বিদেশী পরামর্শক লাগিয়ে নতুন রেগুলেশান দেওয়া হলো ? নতুনভাবে নেওয়া এমএফএস সংক্রান্ত এই রেগুলেশান ও নীতি সর্ম্পকে তাই প্রশ্ন তোলা দরকার।

৩. শেষ পর্যন্ত এমএফএস ইস্যুটি রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিষয়ক

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, বিগত প্রায় চার বৎসরের বেশি সময় ধরে এমএফএস-এর ইউএসএসডি দাম নির্ধারণের বিষয়টি ঝুলে ছিল। দু'দফা কমিটি করে দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হয়নি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ইউএসএসডি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আর্থিক রেগুলেটর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও মোবাইল ফোনের রেগুলেটর হিসেবে বিটিআরসির বড় পেশাগত দুর্বলতা দেখিয়েছে। কোন পক্ষই নিরপেক্ষ কোন প্রতিষ্ঠান দিয়ে ইউএসএসডির কস্ট মডেল প্রাইসিং স্টাডি করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা তাঁর রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বাস্তবতার কাছাকাছি একটি দাম স্থির করে দিয়েছেন। যে কারণে অনেক দিন ঝুলে থাকা সিদ্ধান্ত অবশেষে নেওয়া গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে দুই রেগুলেটর দীর্ঘ সময় নিয়েও পেশাদারি দক্ষতা প্রমাণে বা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সত্যিকার অর্থে গবেষণা ভিত্তিক তথ্য উপাত্তের যোগান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই নতুন সম্ভাবনাময় এই খাতে রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই শেষমেষ জাতীয় অর্থনীতি ও জনস্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিটিআরসি-এর ইউএসএসডি টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য হিসেবে বিগত দিনগুলোয় এ বিষয়ে আমি যা প্রত্যক্ষ করেছি এবং পরবর্তীতে দূর থেকে প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করেছি – তার ভিত্তিতেই আমার এ পর্যবেক্ষণ।

৪. নতুন রেগুলেশনে কি আছে?

খসড়া নতুন রেগুলেশনের নাম দেওয়া হয়েছে "বাংলাদেশ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) রেগুলেশন ২০১৮"। এই রেগুলেশনের বেশ কিছু ভালো দিক আছে। এমএফএস-এর নতুন সেবার নানাদিক এই রেগুলেশানে উন্মোচন করা হয়েছে। যার অধিকাংশই হচ্ছে পেমেন্ট সংক্রান্ত। কাজেই সাময়িক সমাধানের কথা না ভেবে, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ হিসেবে পেমেন্ট সিস্টেম প্লাটফর্মের কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার। খসড়া রেগুলেশনের তৃতীয় ভাগে এমএফএস সংক্রান্ত নানা প্রত্যয়ের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যা এবার বিশেষ সংযুক্তি এবং ধারণাগত বিতর্ক ও অস্পষ্টতা দূরীকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিছুক্ষেত্রে প্রত্যয়গুলো স্পষ্টকরণে ভাষাগত ও ক্ষেত্র বিশেষে ধারণাগত অস্পষ্টতা রয়েছে। বিষয়গুলো আশা করি চূড়ান্তকরণের সময় পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া হবে।

এই অংশে মোট ২৬টি প্রত্যয়ের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর সঙ্গে আরো একটি প্রত্যয় যুক্ত করা দরকার, আইনী, জাতীয় অর্থনৈতিক ও জনস্বার্থে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে। প্রত্যয়টি হলো মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের সংজ্ঞা ও তাদের ভূমিকার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা জরুরি। নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার হিসেবে দেশের চারটি এমএনও এমএফএস খাতে সেবা দিচ্ছে এবং এই সেবা প্রদানের জন্য তারা সুনির্দিষ্ট হারে, ইউএসএসডি চ্যানেল ব্যবহারের জন্য রেভিনিউ পাচ্ছে। নেটওর্য়াক প্রোভাইডর হিসেবে মোবাইল কোম্পানীর এমএফএস-এর মালিকানা পাবার সুযোগ নেই এবং যা প্রতিযোগিতামূলক বাজার প্রশ্নে পারস্পরিক স্বার্থে বড় আকারে সংর্ঘাতপূর্ণ।

৫. পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে

প্রস্তাবিত এমএফএস রেগুলেশনে প্রধানত দুটি বিষয়ে নীতিগত অবস্থান নেওয়া হয়েছে। প্রথমত: ২০১১ সালেই গাইডলাইনের ভিত্তিতে যে এমএফএস ইন্ড্রাস্টি গড়ে উঠেছে, সেখানে ব্যাংক সাবসিডিয়ারির সাফল্য চোখে পড়ার মতো। তাদের সেই সাফ্যলের ভিত্তিতে ব্যাংক সাবসিডিয়ারিকে অনুকরণীয় উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং আরো সাবসিডিয়ারির লাইসেন্স পাবার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত: মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলোকে এমএফএফ শতকরা ৪৯ ভাগ মালিকানার ইস্যুটি। এই দুই নীতির আলোকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার।
প্রথম প্রশ্ন: বর্তমান গাইডলাইনকে কেন্দ্র করে তিন ধরণের মডেল তৈরি হয়েছে। প্রথম ধারাটি একক ব্যাংকের মালিকানা। এই ধারার ২৭টি ব্যাংক লাইসেন্স পেয়েছিল; ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি দ্বিতীয় ধারার মডেল: আর টেকনিক্যাল পার্টনার তৃতীয় ধারার মডেল। এই আলোচনার ভিত্তিতে আমাদের প্রথম প্রশ্ন মূলধারার ২৭টি ব্যাংক কেন এমএফএস মডেল হয়ে উঠতে পারল না?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: ব্যাংক সাবসিডিয়ারি যদি সত্যিই মডেল হয়ে ওঠে, তবে তার পেছনে পর্যাপ্ত গবেষণা করা হয়েছে কিনা? সফল সাবসিডিয়ারি মডেল কি রেপলিকেব্যাল ? আর যদি তা না হয়, তবে কেন সেই ক্রুটিপূর্ণ মডেলকে মানদন্ড হিসেবে উপস্থাপনা করা হচ্ছে ?
তৃতীয় প্রশ্ন: ব্যাংক সাবসিডিয়ারি মডেলের ভেতরকার মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান কি করা গেছে? যেমন সাবসিডিয়ারি মডেলে একটি ব্যাংকের একান্নভাগ মালিকানার বিষয়টি একটি বড় সমস্যা। একটি ব্যাংকে শতকরা ৫১ ভাগ মালিকানা দিয়ে নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতা দেওয়া, এটা একধরনের কৃত্রিম মালিকানা ও তত্ত্বাবধাায়কের ভূমিকা চাপিয়ে দেওয়া যা বাস্তবসম্মত নয়। ব্যাংক কি শতকরা ৫১ ভাগের মালিক হয়ে ঝুঁকিকালীন  সাবসিডিয়ারি কোম্পানীর শতভাগ দায়িত্ব নিতে প্রস্তুুত কিনা? ভাবা দরকার বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের সীমাবদ্ধতা ও দায়িত্ব এড়াতে এ ধরনের কৃত্রিম পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন কিনা? যার কারণে পরোক্ষভাবে ব্যক্তিমালিকালাধীন ব্যাংকগুলোকে একধরনের ভূমিপুত্র চরিত্রের বাড়তি সুবিধা ও সুযোগ হাতে ধরে তুলে দেওয়া হচ্ছে কিনা ? এই ধরনের নীতি অবস্থান দেশী ও বিদেশী বিনিযোগকারীর মধ্যে, ভবিষ্যত বাংলাদেশে বিনিয়োগে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কিনা? সেই সাথে বিষয়টি সরকার ও বিদেশী বিনিয়োগ নীতিমালার সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ কিনা তা যাচাই করা হয়েছে কি?
চতুর্থ প্রশ্ন: যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত রয়েছে মোবাইল ফোন কোম্পানী ও তাদের সাবসিডিয়ারিকে মালিকানা না দেওয়ার পক্ষে, সেখানে মালিকানা দেওয়ার এই প্রস্তাব কার স্বার্থে? বাংলাদেশ ব্যাংককে অবশ্যই এ ব্যাপারে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।
পঞ্চম প্রশ্ন: ব্যাংক সাবসিডিয়ারি মডেল এই খাতের ক্রমবিকাশমান প্রবৃদ্ধির বিচারে সাময়িক এক সমাধান। পেমেন্ট সিস্টেম প্লাটর্ফম তৈরির মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানের বিকল্প সুযোগ আছে। যা ভারত ইতোমধ্যে কার্যকর করেছে। সাত বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের দিকে না গিয়ে কেন ক্রটিপূর্ণ একটি সমাধানকে মানদন্ড হিসাবে উপস্থাপন করে এই খাতকে আরো বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে?
রেগুলেশনটি অনুমোদনের ন্যূনতম সূচক হিসেবে এই পাঁচ প্রশ্ন বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডের সামনে আমি সবিনয়ে রাখলাম। তবে খসড়া রেগুলেশন নিয়ে আরো বিস্তারিতভাবে লেখার ইচ্ছে আমার রইলো পরবর্তী এক লেখায়।

৬. শেষ কথা

এই খাতের সার্বিক উন্নয়ন এবং সরকার ও এসডিজির আর্থিক অন্তর্ভূক্তিমূলক লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে, সকলের কাছে সহজলভ্য, নিরাপদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী একটি এমএফএস গড়ে তোলা দরকার। ভবিষ্যতে দেশের সকল সাবালক জনগোষ্ঠী এই খাতের সেবার সাথে যুক্ত হবে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে দুটি করণীয় বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই:

প্রথমত: জাতীয় নির্বাচনের প্রাক-কালে তড়িগড়ি করা ঠিক হবে না। কাজেই সময় নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচনের পরে রেগুলেশনটা করা যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত: এমএফএস রেগুলেশনের ব্যাপারে বিনিয়োগ বোর্ড ও এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের মধ্যে যারা কাজ করছে, তাদের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষত যখন এইখাতে বড় ধরনের বিদেশী বিনিয়োগ আসছে। সেই সাথে রেগুলেশনে, ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি মডেলকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা আদৌ কি সম্পূর্ণ অর্থে নিখুঁত মডেল? এই মডেলের ভালোমন্দ দিকগুলো আরো বিচার বিবেচনা করে দেখা দরকার। আর সে জন্যও সময় দরকার।

ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি মডেল মূখ্যত: স্থানীয় ও দেশীয় উদ্যোগ, এবং আন্তর্জাতিকভাবে সফল। কিন্তু এর দেশীয় একটি নির্মোহ মূল্যায়ণ হওয়া জরুরি। তাই এমএফএস রেগুলেশন নিয়ে কোন তাড়াহুড়ো নয়, সময় নিয়ে সকল পক্ষের সাথে কথা বলে, দেশকে ভালো একটি রেগুলেশন দিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এটাই প্রত্যাশা।
পরিশেষে বলবো ভুল সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে, আর্থিক অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে নতুন যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা শক্তিশালীভাবে গুছিয়ে দাঁড়িয়ে ওঠার আগে-মুখ থুবরে পড়তে পারে। যার দায় সরকারের উপর বর্তাবে এবং পরোক্ষভাবে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়া হবে। তাই সরকারের পক্ষেও ঠিক হবে না নির্বাচনের আগে, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের পূর্ণঅংশীদারত্ব বাদে এমএফএস রেগুলেশনটি চূড়ান্ত করা। কারণ এই খাতের সাথে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি গ্রাহকের জন্য মানসম্মত সেবা এবং পাঁচ লক্ষ এজেন্টদের জীবিকা ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।
সেই সাথে ইস্যুটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার, কারণ সম্ভাবণাময় এই খাতকে এনজিও ও এমএনওদের হাতে তুলে দেবার অপচেষ্টার পেছনে কোনো শক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যবহার করছে কিনা। তাদের জানা বোঝা ও চেনার কাজটিও জরুরি। তাছাড়া তাড়াহুড়ো করে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়, তবে জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থ ও গ্রাহক স্বার্থ বিরোধী অবস্থানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকেও জনগণের মুখোমুখি হতে হবে।