জামায়াত কেন অবাঞ্ছিত?

মাহি জামান
Published : 15 Sept 2012, 09:02 AM
Updated : 15 Sept 2012, 09:02 AM

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত এক বিতর্কের নাম। মুক্তিযুদ্ধে তাদের স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থান এই বিতর্কের অন্যতম কারন। গত ৪০ বছরে রাজনীতির বাঁকে বাঁকে জামায়াতের ভূমিকা ভিন্ন ভিন্ন ধরণের আলোচনা, সমালোচনা এবং বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির ধারনা প্রদান, ৮৮ সালে সংসদ থেকে পদত্যাগের যুগান্তকারী ঘটনা, ৯১ সালে বিএনপিকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে ক্ষমতাশীন হতে সাহায্য করা, কেয়ারটেকার সরকারের দাবীতে আওয়ামীলীগের সাথে যুগপৎ আন্দোলন, ৯৬ এর নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ধস, ২০০১ সালে বিএনপির সাথে সরকার গঠন, সরকারে থাকা কালে সততার জন্য সুনাম কুড়ালেও বিএনপির দূর্নীতি বিষয়ে চুপ থাকা, ২০০৬ এর ২৮ অক্টোবর পল্টনে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া এবং বর্তমান সরকারের সময়ে অলিখিত নিষিদ্ধ দলে পরিণত জামায়াত। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনৈতিক অবস্থান নিঃসন্দেহে সর্বাধিক নিন্দনীয় ঘটনা। স্বাধীনতার পর নাম পাল্টে আইডিএল (ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ) নামে রাজনীতি শুরু করলেও পরবর্তীতে পুরোনা নামেই ফিরে আসে জামায়াত।

যেই দলটি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের বিরোধীতা করল সেই দলটিই বাংলাদেশে রাজনীতি করার মত ধৃষ্টতা কি করে দেখায়, মাঝে মাঝে ভেবে বিস্মিত হই। আবার কোন ধরনের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়াই দেশের এক বিরাট সংখ্যক মানুষ জামায়াতের সমর্থক। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সংসদেই তাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। দিনে দিনে ক্ষমতার রাজনীতিতে বড় নিয়ামত শক্তিতে পরিণত হয়েছে জামায়াত। কখনো কখনো জামায়াতের কোনো সিদ্ধান্ত দেশের জন্য ইতিবাচক হলেও কখনো কখনো জামায়াতের ঐতিহাসিক ভুল দল এবং দেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। আমি মনে করি ৭১ এর ভূমিকা জামায়াতের কিছু সংখ্যক শীর্ষ স্থানীয় অদূরদর্শী নেতার হঠকারী সিদ্ধান্ত মাত্র।

জামায়াতের মৌলিক রাজনৈতিক আদর্শের পক্ষে বিপক্ষে যে কেউ তার অবস্থান গ্রহন করতেই পারেন। জামায়াতের নেতাদের ব্যক্তিগত সততা হয়ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে আপাততঃ নজির বিহীন। কিন্তু শুধুমাত্র স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থানের দায়েই বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত অবাঞ্চিত। অবশ্যই জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জামায়াতের যে সকল নেতা সক্রিয় ছিলেন তাদেরও বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবাঞ্চিত ঘোষনা করতে হবে। প্রয়োজনে সাংবিধানিক ভাবে এসব নেতাদের ভোটাধিকার বাতিল করে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে আমৃত্যু বাংলাদেশে বসবাসের সুযোগ দেয়া যায় মাত্র। জামায়াতের রাজনীতি এবং জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি কোনটিই আমরা চাই না।