মাশরুম চাষঃ এক মরীচিকার নাম…

মাহি জামান
Published : 16 Sept 2012, 07:02 PM
Updated : 16 Sept 2012, 07:02 PM

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে সারাদেশে হঠাৎ করে শুরু হল মাশরুম চাষের মহা ধুম। দেশের নগর, শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠল অসংখ্য তথাকথিত "মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র"। ৫শ থেকে শুরু করে জনপ্রতি কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে। বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠে মাশরুমের স্পন উৎপাদনের ল্যাবরেটরি। এই সব ভুঁইফোঁড় ল্যাবরেটরির উৎপাদিত স্পন থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত (?) মাশরুম চাষীরা মাশরুম উৎপাদন করতে গিয়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারলেন না। প্রশিক্ষক এবং ল্যাব মালিকরা বললেন চাষীর অদক্ষতায় মাশরুম হয়না। চাষীরা বলেন বীজের মান খারাপ। অসংখ্য মানুষ এভাবে মাশরুম উৎপাদনের ব্যবসায় মার খেলেন। হাজার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে নিঃস্ব হলেন অন্ততঃ কয়েক লক্ষ মানুষ। কিন্তু প্রতারণার এখনো শেষ নেই। এমনকি মাশরুম উৎপাদনের অবস্থা এখনো বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় হলেও থেমে নেই সরকারী-বেসরকারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমনি প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণায় লিপ্ত তেমনি সরকারী মাশরুম সেন্টারগুলোতে চলছে প্রশিক্ষণের নামে প্রকল্পের সরকারী অর্থের হরিলুট। বিগত প্রায় ১০ বছরের অধিক সময়ে সরকারের প্রায় ৬৪ কোটি টাকা খরচ করে বাংলাদেশে বর্তমানে মাশরুমের উৎপাদন দৈনিক কত কেজিতে উন্নীত হয়েছে সেই হিসাব কেউ রাখছেনা। চলছে নতুন প্রকল্প অনুমোদনের প্রচেষ্টা। কিন্তু কেন মাশরুমের উৎপাদন কাংখিত পরিমানে হচ্ছেনা সেই বিষয়ে কোন মাথা ব্যাথা যেন নেই কারো। নেই প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় বের করার কোন প্রচেষ্টা। চলছে শুধু লুট-পাটের যত আয়োজন।

বাংলাদেশে মাশরুম চাষের প্রধান সমস্যা হল, আমাদের আবহাওয়া মাশরুম চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী নয়। মাশরুমের স্পন (বীজ) উৎপাদনের জন্য যে মানের ল্যাব (মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ) প্রয়োজন সেই বিষয়ে অনেকের ধারনাই নেই। যারা জানেন তারা তেমন ল্যাব স্থাপন করার মত পুঁজি বিনিয়োগে কেউ আগ্রহী নয়। কারন ব্যয়বহুল এই ল্যাব স্হাপনে যে পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে মাশরুমের বাজার সেই তুলনায় খুবই সীমিত। তাছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়ার বৈচিত্র্য মাশরুম উৎপাদনে একটি বড় বাধা। সারা বছর প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা-আদ্রতা সংরক্ষণ, প্রয়োজন মত অক্সিজেন সরবরাহ এবং কার্বনডাই অক্সাইড ও আলো নিয়ন্ত্রণ করার মত উপযুক্ত কালচার হাউস (চাষ ঘর) তৈরী যথেষ্ট জটিল এবং ব্যয়বহুল একটি কর্মযজ্ঞ। সব বিষয় না জেনে একশ্রেনীর প্রতারক এবং সরকারের কিছু সংখ্যক দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকর্তা দেশের বেকার মানুষকে অহেতুক এক মরীচিকার পিছনে ধাবিত করে চলেছে।

শীতকালে আমাদের দেশে বীজ উৎপদান এবং মাশরুম উৎপাদন অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত। তাই এ সময়ে (দুই মাস) দেশে কিছু পরিমান মাশরুম উৎপাদন হয়। এক শ্রেণীর সাংবাদিক শীতের সময়ের এই মাশরুম উৎপাদনের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকা-টেলিভিশনে। সরকারী কর্মকর্তাদের প্ররোচনায় এবং নিজেদের বাহাদুরী জাহির করার জন্য তথাকথিত চাষীরাও বাড়িয়ে বলে অনেক কিছু। ফলে নতুন কিছু মানুষ আবার প্রতারণার শিকার হন।