পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষের ধর্ম আছে … ধর্মীয় জীবনকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় ১. ইহকাল, ২. পরকাল। ইহকাল সংক্ষিপ্ত জীবন, জন্মমাত্রই মৃত্যু অবধারিত। যে কোন মুহূর্তে প্রত্যেক প্রানীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবেই। চলে যেতে হবে পৃথিবীর অর্থ-সম্পদ, মায়া-মমতা সবকিছু ছেড়ে … পক্ষান্তরে ধর্মমতে মানুষের বিশ্বাস পরকাল সীমাহিন অনন্ত জীবন। ইহকালে ধর্ম মেনে চলে ভাল কাজ করলে পরকালের অনন্ত জীবন শান্তিতে থাকা যাবে। আবার কোন কোন ধর্মমতে মৃত্যুর পর মানুষ আবার পৃথিবীতে পুনঃ জন্ম হবে, তবে ইহকালের কর্মের উপর নির্ভর করে হয়তো মানুষ, না হয় কোন শঙ্খচিল হয়ে জন্ম নেবে। সেইমতে ধর্ম জীবনে ইহকালের চাইতে পরকালের গুরুত্ব বেশি।
জাগতিক জীবনকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় … ১. অতীত, ২. বর্তমান, ৩. ভবিষ্যৎ। অতীতের প্রাপ্তি থেকে বর্তমান জীবনে সুখ সমৃদ্ধি। বর্তমানের সঞ্চিত সম্পদ ভবিষ্যতের সুখ সমৃদ্ধি। কিন্তু ভবিষ্যতে যে সুখ সমৃদ্ধি ভোগ করতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। যেহেতু মৃত্যু পিছনে লেগে আছে, সেহেতু যে কোন মুহূর্তে মৃত্যুর ডাকে সাড়া দিতেই হবে, চলে যেতে হবে সঞ্চিত সব অর্থ সম্পদ ছেড়ে। সেই হিসেবে জাগতিক জীবনে ভবিষ্যতের চাইতে বর্তমানের গুরুত্ব বেশী।
এখন দেখা যাক মানুষের কাছে কোনটার গুরুত্ব বেশী। জাগতিক জীবনে দেখা যায় মানুষ বর্তমানের কথা ভুলে ভবিষ্যৎ চিন্তা নিয়ে বেশী মগ্ন থাকে। কোটিপতি হওয়া, বাড়ী – গাড়ী করা, ইত্যাদি ইত্যাদি চিন্তা করে অর্থ সঞ্চয় করতে করতে বর্তমান ভোগের কথা মানুষ ভুলেই যায়। অথচ ভবিষ্যতে সেটা ভোগ করতে পারবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই। মৃত্যুর ডাকে এক মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ হয়ে যেতে পারে।
পক্ষান্তরে ধর্মমতে ধর্মীয় জীবনে ইহকালের সমস্ত কর্ম সঞ্চিত পরকালের জন্য জমা থাকবে … মৃত্যুর পর এটা ভোগ করতে পারার নিশ্চয়তা আছে। এটা জানা এবং বিশ্বাস করা স্বত্বেও মানুষ চলে উল্টো পথে। পরকালের অনন্ত জীবনের কথা বেমালুম ভুলে যায়, ইহকাল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ধর্মকে ব্যবহার করে ইহকালের ভোগের হাতিয়ার হিসেবে। ধর্মের নামে চলে ইহকালে ভোগের ব্যবসা। ধর্মের নামে কেমন ব্যবসা চলছে সকলের জানা আছে। এই তো গত সপ্তাহে পাশের একটি গ্রামের যুবকরা মিলে চাঁদা তোলে একটা ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করলেন, ওয়াজের যাবতীয় খরচ ও ওয়ায়েজীনদের হাদিয়া দেওয়ার পরও কিছু টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। সেই টাকা নাকি ওয়াজ আয়োজনকারী যুবকরা ভাগ বন্টন করে নিয়েছেন। এটা ধর্মের নামে ব্যবসা নয় কি?
এছাড়া মসজিদ মাদ্রাসার ফান্ড সংগ্রহের জন্য বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেন … এখানে চাঁদা উত্তোলনকারী, মাহফিল পরিচালনাকারী এবং ওয়ায়েজীনদের হাদিয়া এবং সম্মানীর নামে কিছু ব্যবসা থাকলেও মেনে নেওয়া যায় … মসজিদ মাদ্রাসার ফাণ্ড সংগ্রহ বড় কথা। কিন্তু যখন কোন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল দলের ফাণ্ড সংগ্রহ করতে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে তখন সেটাকে ধর্মের নামে ধান্ধাবাজী বা ব্যবসা না বলে কি বলার আছে।
শুধু মুসলমানরা নয় … এখন বিভিন্ন পূজা পার্বণের নামে অন্যান্য ধর্মের যুবকরাও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়। চাঁদাবাজি করে ধর্মীয় মাহফিলের আয়োজন করা কতটা যুক্তিযুক্ত কিংবা ধর্ম কতটা সমর্থন করে সেটা আমার বোধগম্য নয়। তবে আমার মতে এটা উচিৎ নয়। কারন এই চাঁদা কেউ স্বেচ্ছায় দেয় না … কেউ লজ্জায় পড়ে দেয়, কেউ হয়তো সম্মানের খাতিরে দেয়। পিচনে গিয়ে অনেকে ক্ষোভ বিরক্ত প্রকাশ করে। বেটারা আর কাম পায়না … ধর্মীয় মাহফিলের চাঁদা তোলে। ধর্মের জন্য যদি এতই দরদ থাকে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে মাহফিল করনা। একটা ধর্মীয় মাহফিল করতে কত খরচ হবে।
ধর্মমতে ধর্ম প্রচার করা ধর্মের অনুসারীদের দায়িত্ব … এই দায়িত্ব পালন করতে কোন বিনিময় নিতে পারবে না। এই বিনিময় জমা থাকবে পরকালের সঞ্চয় হিসেবে। তবে ধর্মের কাজের মধ্যে যেটাকে পেশা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় … যেমন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা, মসজিদে ইমামতি ইত্যাদি পেশাদারী চাকরীতে বিনিময় নেওয়া যায়।
বর্তমান মানুষ ধর্মীয় জীবনে এবং জাগতিক জীবনে দুটোতে চলছে উল্টো রথে … যেটা ভোগ করার কথা সেটা ত্যাগ করছে … যেটা ত্যাগ করার কথা সেটা ভোগ করছে। অতএব, ভবিষ্যৎ জিরো ০০০০০০০। দুটোই অর্থহীন।