সারা বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ৭ বছরের শিশু বক্তা তথা পিতার ব্যবসা

এম এ হাশেম
Published : 30 March 2012, 04:42 PM
Updated : 30 March 2012, 04:42 PM

চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার কুম্ভার পাড়া ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে ইসলামী সম্মেলন'১২ গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। মাহফিলের প্রধান আকর্ষণ ছিল আমন্ত্রিত ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে পোষ্টারের ২য় নাম্বারে লিখা সারা বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ৭ বছরের শিশু বক্তা ক্বারি মোহাম্মদ আনাছ। দীর্ঘ ১০ দিনের মাইকিং আর পোষ্টারে প্রচারনায় আশপাশের ২/৪ গ্রামের নারী পুরুষের মাঝে জাগে এক অজানা অনুভুতি, বৃদ্ধি পায় মাহফিলের প্রতি আকর্ষণ। কেমন বয়ান করবেন এই শিশু? এই প্রশ্ন সবার মুখে মুখে।

মাহফিল কুম্ভার পাড়া ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে হলেও মুলত প্রাধান্য থাকে বিএনপি লোকের। মূল তোরণে লাগানো ছিল বিএনপি'র ব্যানার। মধ্যখানে চলে বিএনপি'র বক্তৃতাও। অনেকে বলতে শুনা গেছে এটা মুলত বিএনপি'র মাহফিল। লোক সমাগম বাড়ানোর জন্য ৭ বছরের শিশু বক্তার নাম দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।

যাই হোক মাহফিলের কথায় আসি। ২৯ মার্চ সকাল ৮ টা থেকে মাহফিল শুরু হয়। ক্বারি মোহাম্মদ আনাছ বয়ান করবেন এশার নামাজের পর। সারাদিন মাহফিল স্থলে তেমন মানুষ না থাকলেও সন্ধ্যার পর হইতে বাড়তে থাকে লোক সমাগম। দলে দলে আসতে থাকে আশপাশের ২/৪ গ্রামের নারী পুরুষ। দুরদুরান্ত থেকে আমাদের আত্মীয় স্বজনরা এসে পূর্ণ হয়ে যায় আমাদের বাড়ী ঘর। এশার নামাজের পূর্বে কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায় মাহফিল ময়দান। মহিলাদের বসার জন্য ব্যবস্থা করা হয় আমাদের বাড়ীর উঠানে। মহিলাদের দেখার সুবিধার্থে ব্যবস্থা করা হয় লাইভ স্ক্রিন। উঠানের এক পাশে বসানো হয় লাইভ স্ক্রিন সারা উঠান পূর্ণ হয়ে যায় মহিলা। রাত ৯ টায় মঞ্চে আসেন হাজারো মানুষের আকাংখিত বক্তা, মাহফিলের মধ্যমণি ৭ বছরের শিশু বক্তা মোহাম্মদ আনাছ। মানুষের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার সামাল দিতে স্বেচ্ছা সেবক দল হিমসিম খাচ্ছে। পুরাতন রামগড় রোডে বসানো হয় আরও একটি লাইভ স্ক্রিন। মাহফিল স্থলে ঢুকতে না পেরে অনেকে এই লাইভ স্ক্রিন এর সামনে দাঁড়িয়ে যান। রাত ৯.৩০ টায় শুরু হয় সেই আকাংখিত বক্তার বয়ান, চারিদিকে পিনপতন নিরবতা। শুধু একটাই উদ্দেশ্যে কি বলেন এই ছোট্ট শিশুটি সেটা শুনার জন্য। বক্তা দরূদ শরীফ পাঠ করার পর যখন মূল বয়ান শুরু করলেন তখন দুরদুরান্ত থেকে আসা মানুষের উচ্ছাশা ভাটা পড়তে থাকে ২০ মিনিট পর শূন্য হয়ে ময়দানের অরধেকাংশ। শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য। কেহ কেউ বলছে এটা তো নূরানী মাদ্রাসা আমাদের ছেলেমেয়েদের শেখায়, আমাদের ছেলেমেয়েরাও এগুলো বলতে পারে। এগুলো শুনানোর জন্য তাকে দশ হাজার টাকা দিয়ে আনার কি দরকার ছিল? আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে তো আমরা শুনতে পারি।

ছেলেটির বাড়ী কুমিল্লায়। তিনি যে নুরানী মাদ্রাসায় লেখা পড়া করেন তার বাবা ঐ মাদ্রাসার শিক্ষক। শিক্ষক হিসাবে তার ছেলেকে বেশী নজর দিছেন বিধায় হয়ত সে অন্যান্য ছাত্রদের কাছ থেকে একটু বেশী শিখছে। তবে এটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। তারপরও স্বীকার করতে বাধ্য এই বয়সের একটা ছেলে ১ ঘণ্টা বলার মতো কোরআন হাদিসের কথা মুখস্ত রেখেছে সেটা কম নয় বরং আকাঙ্ক্ষার চেয়ে বেশী। সর্বোপরি কথা হচ্ছে এই ছোট্ট শিশুর ক্ষুদ্র জ্ঞানে বিশাল কিছু শিখাকে পুঁজি করে ব্যবসা করে যাচ্ছেন তার পিতা। মাসে ৮/১০ টা মাহফিল করে তার পিতা কামিয়ে নিচ্ছেন লাখ টাকা। ক্ষতি করছেন ছেলেটির লেখা পড়ার, ক্ষতি করছেন ছেলেটির এক উজ্জল ভবিষ্যতের। তার পিতার এই হীন উদ্দেশ্যকে নিন্দা জানাই। ছেলেটির উজ্জল ভবিষ্যতে কথা বিবেচনায় এনে এই শিশু বয়সে মাহফিল না করে পড়া লেখার প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য তার পিতাকে অনুরোধ করছি। সেই সাথে প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।