ধর্মীয় সহিংসতা রোধে চাই নিজ ধর্মের প্রতি সত্যিকার ভালোবাসা

মাধুরী শিকদার
Published : 3 Oct 2012, 07:04 AM
Updated : 3 Oct 2012, 07:04 AM

বিডিনিউজ ব্লগ আমার পছন্দের একটি ব্লগ সাইট। যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, প্রতিদিন এখানে আমাকে কিছুটা সময় ব্যয় করেতই হবে। কিন্তু একজন সদস্য হিসাবে যোগ দেয়ার ইচ্ছা থাকলে ও সাহস হয়ে ওঠেনি কখনো। কারন, নিজের ভাবনা কে গণমাধ্যমে প্রকাশ করার মতো সৃষ্টিশীলতা আমার মাঝে নেই বলে ই আমি মনে করি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার পর মনে হলো আমি কিছু লিখব। তাই আজ ই এসে ব্লগ সদস্যদের মাঝে একটি আসন দখল করলাম।

যাই হোক এসব অপ্রাসঙ্গিক কথা না বলে যে কারনে আমার আসা সেটা বলি। সাম্প্রতিক সময় অনলাইনে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ কুরআন এর অবমাননা কে কেন্দ্র করে কক্সবাজার এ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপর যে হামলা টা হলো সেটা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। শুধু মাত্র বৌদ্ধদের এবং তাদের উপাসনালয় এ হামলাই নয়, যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ কুরআন অবমাননা,দুটো ব্যাপারই নিতান্ত লজ্জাজনক। এসব ঘটনা নতুন করে আবার মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা যত উন্নত বিশ্বেই বসবাস করি না কেন, যতই আমরা আমাদের কর্ম আর মেধার পরিধি বিস্তৃত করি না কেন আমরা ধর্মীয় বর্বরতা এখনো হারিয়ে ফেলিনি আমাদের হৃদয় থেকে। এখনো ধর্মের নামে বর্বরতা করে আমরা আনন্দ পাই। এখনো আমার বিপরীত ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় ভাবে হেয় করার চেষ্টায় আমরা মত্ত হয়ে উঠি। যা কোন ভাবেই অসাম্প্রদায়িক স্থিতিশীল সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের পক্ষে যায়না।

এ প্রসঙ্গে আমি আমার নিজস্ব একটা অভিমত প্রকাশ করিছ। যা সম্পূর্ণ ভাবে আমার চিন্তা থেকে ই আসা। যদি আমার এ চিন্তার সাথে অন্য কারো চিন্তা মিলে যায় তাহলে আমি অবাক হবো না।বরং অনেক বেশি খুশিই হেবা। আর আমার এ চিন্তা আসার পিছনের কারনগুলো আগে না বললেই নয়। যাই হোক, ছোট বেলা থেকে আমরা বড় হয়েছি খ্রিষ্টানদের সাথে হেসে খেলে, এক প্লেটে খাবার খেয়ে,একই বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে। হ্যা, আমার ছোট বেলার খেলার সাথী প্রভা দিদি। যার সাথে এক বেলা দেখা না হলে কষ্টে আমার বুকটা ফেটেই যেত। অভিমান করে এক বেলা কথা না বলতে পারলে কত যে কান্ন পেত। হয় আমি, নইলে প্রভা দি ছুটে আসত আমার কাছে। আবার আমরা আনন্দের জোয়ারে ভেসে যেতাম। প্রতিদিন একবেলা দু'জনকে এক সাথে খাবার খেতে হবে। না হলে ও এক ঘন্টা একসাথে ঘুমাতে হবে। আমার এই প্রভা দি খ্রীষ্টান আর আমি হিন্দু। দূর্গা পূজাতে আমার বেড়াতে যাওয়া পরিপূর্ণ হতো না প্রভাদি কে ছাড়া। আর ওর বড় দিন মানে তো আমার ও বড়দিন। এমনি করেই আমার বড় হওয়া। আর বড় হওয়ার সাথে সাথে এই চিন্তাটা ও আমার ভিতরে বড় হয়েছে যে, আমি যদি সত্যিকার ভাবে আমার নিজস্ব সত্তাকে ভালোবাসি তাহলে কখনোই কারো কোন ক্ষতি আমি করতে পারবো না। আর সত্তা বলতে তো অন্য অনেক কিছুর পাশাপাশি আমার ধর্মীয় অনুভূতিও, তাই না?যা আমার হৃদয়ে গভীর ভাবে ধারন করা। আর ধর্ম শব্দের আভিধানিক অর্থ তো ধারণ করা। অর্থাৎ, যাকে ধারণ করে আমারা বেঁচে থাকি তাই ধর্ম। আর আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন আমার বিশ্বাস আর ভালোবাসার উপর নির্ভর করে। তেমনি প্রতিটা মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে একটি বিশ্বাস আর ভালোবাসা রয়েছে বলে আমি মনে করি। আর তাই আমি যদি মনে করি আমার কাছে আমার ধর্ম আমার বিশ্বাস।

আমাকে সঠিক এবং সুন্দর পথে পরিচালনা করার জন্য আমার ধর্মই পরম বস্তু তাহলে কখনোই আমি অন্য কারো ধর্ম কে, অন্য ধর্মে অনুসারী কাউকে এতটুকু আঘাত করতে পারবো না। সহিংসতা তো বহু দূরের কথা। তাই ধর্মীয় সহিংসতা রোধ করতে সব কিছুর আগে নিজ ধর্মের প্রতি সত্যিকার ভালোবাসা জন্মাতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিটা ধর্মের মূল বাণীই হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। প্রতিটা ধর্মানুরাগীদের পরম উদ্দেশ্য সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য অর্জন করা। ভিন্ন ভিন্ন মত আর বিশ্বাস হলেও উদ্দেশ্য কিন্তু আলাদা নয়। যারা এই অবমাননামূলক, আক্রমনাত্মক কাজগুলো করে, আমি আমার বিশ্বাসের দৃঢ়তা থেকে বলবে তারা একটা মূহূর্তের জন্য ও তার নিজ ধর্মকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসেনি, হৃদয়ে ধারণ করেনি। ধর্মীয় সহিংসতা রোধে যা খুবই জরুরী।