ভেজাল প্রসাধনিতে বাজার সয়লাব, মারাত্মক স্বাস্থঝুঁকিতে ব্যবহারকারিরা

মাধুরী শিকদার
Published : 9 May 2015, 04:05 AM
Updated : 9 May 2015, 04:05 AM

বিবিসির গতকাল ০৮/০৫/২০১৫ ইং রাতের পরিক্রমা অনুষ্ঠানে (লিংক) প্রচারিত বিশেষ প্রতিবেদন শুনে অনেকদিন ধরে মনের ভিতর পুষে রাখা একটি দুশ্চিন্তা কয়েকগুন বেড়ে গেল। এ বিশেষ প্রতিবেদনটি ছিল বাংলাদেশে প্রসাধনী সামগ্রীতে কী পরিমানে ভেজাল রয়েছে সে সম্পর্কে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ প্রসাধনী সামগ্রীর চাহিদা রয়েছে তার ১৫% আসে বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে, ১৫% আসে দেশিয় প্রসাধনি সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে। আর বাকী ৭০% প্রসাধনীই অবৈধভাবে বিভিন্ন গোপন কারখানায় তৈরী করা হয়। আর এই ভেজাল পণ্য পাইকারি ভাবে বাজারজাত হয় দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চকবাজার থেকে। যে জায়গা থেকে সারা দেশে প্রসাধনি সামগ্রী বাজারজাত করা হয়। প্রতিবেদক অনেক কষ্ট করে একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেজাল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। যেখানে ঐ ব্যবসায়ী বলছিলেন যে, এই ভেজাল পণ্য বাজারজাত করনের জন্য সব কন্টেইনারগুলো তারা চীন থেকে আমদানী করে। আর ভেজাল পণ্য গুলো তৈরী হয় চকবাজার, ইসলামপুর, জিঞ্জিরা সহ ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলায় অবস্থিত অবৈধ কারখানায়। আর এসব ভেজাল পণ্য তারা বাজারজাত করে প্রকৃত পণ্যের অর্ধেক দামে। যেখান তার উল্লেখিত তালিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং নামী কোম্পানীগুলোর পণ্যের নামই শোনা গেল। খুব নির্দিধায় ঐ ব্যবসায়ী বলল যে, তারা যেসব উপাদান দিয়ে এসব প্রসাধনী তৈরী করে সেগুলো কোন রকম কাজ করেনা, মানে ভালো ও করেনা আবার মন্দও করেনা।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম রোগ বিষয়ের ডাক্তার জনৈক অধ্যাপকের কাছে জানতে চাইলে তিনি তুলে ধরলেন এসব ভেজাল পণ্য ব্যবহারের ভয়াবহতা সম্পর্কে। তিনি বললেন যে, এসব ভেজাল পণ্য ব্যবহারের কারনে মানুষের অকালে চুল পরে যাওয়া, অল্পবয়সে বার্ধক্য চলে আসা, চামড়ায় ক্যান্সারের মত বড় ব্যাধি হওয়া সহ শরীরের অভ্যন্তরে ফুসফুস, হৃদপিন্ড, কিডনি পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি অনেকেই মারাত্মক এলার্জেটিক রোগে আক্রন্ত হন যার ফলে অকালে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন।

আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রী যদি এমন মারাত্মকভাবে ভেজালে ভরা থাকে সেটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে হুমকিস্বরূপ।আর যেহেতু পণ্যের কন্টেইনারগুলো বাইরে থেকে আসে, সেই সাথে এগুলোকে অভিজাত বিপণী বিতানেও বাজারজাত করা হয়। যার দ্বারা সকল শ্রেনীর ক্রেতাদেরই কম বেশী এসব ভেজাল পণ্যের স্বীকার হতে হচ্ছে বলে মনে করছি।

আর তাছাড়া বিদেশ থেকে আমদানীকৃত প্রসাধনীর মূল্য সাধারণ ক্রেতাদের ধারা ছোঁয়ার বাইরে থাকায়ে এক্ষেত্রে ঝুঁকি আরো বেশি। কারন, যেহেতু মোট চাহিদার ৭০% ই ভেজাল পণ্য আর সেগুলো সাধারণ বিপণী বিতান সহ দেশের জেলা শহর সহ গ্রাম পর্যায়ের বিপণী বিতানেই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর জেনে হোক আর না জেনে হোক একটা বিশাল জনগোষ্ঠী মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। যার প্রতিকার এখনই করতে হবে।একজন ক্রেতা তার চাহিদা মেটানোর জন্য সবসময় মান বিচারের দিকে মনোযোগী না ও হতে পারে। কারন, সে প্রথমত তার সামর্থ্য দেখবে। সব ক্রেতারই সামর্থ্য নেই বিদেশী প্রসাধনী ব্যবহার করার। আর অনেক সময় সামর্থ্য থাকলেও সে হয়তো তার চাহিদা অনুযায়ী পণ্যটি পাচ্ছেইনা, আর সেক্ষেত্রে তখন হাতের নাগালে পাওয়া পণ্যটিই কিনতে বাধ্য হয়।

যদিও আইন শৃংখলা বাহিনী দুই বার করে এ সমস্ত কারখানায় হানা দিয়ে বিশাল অংকের ভেজাল পণ্য উদ্ধার করেছে। কিন্তু, এই উদ্ধারের পাশাপাশি জড়িতদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির বিধান করতে হবে। আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপড়তা আরো বাড়াতে হবে আর সেই সাথে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন খুব বেশি জরুরী। আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ায়, অপরাধীকে কঠিন শাস্তি না দেওয়ায় কখনো কখনো লঘু শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেওয়ায় এসব অবৈধ কাজ আরো বেড়েই চলেছে। আর যেসব  কন্টেইনার বিদেশ থেকে আমদানী করা হচ্ছে এসব ভেজাল প্রসাধনী বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে, সেসব কন্টেইনার আমদানীতে কঠোর নীতিমালা তৈরী করা প্রয়োজন।আর পাশাপাশি বিদেশী পণ্যের আমদানির উপর শুল্কহার কমিয়ে দেয়া গেলেও হয়তো ক্রেতাদের কিছুটা সুবিধা হতে পারে।