সরকারের প্রতি আবেদন: দয়া করে সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যেতে দেবেন না

মাধুরী শিকদার
Published : 14 May 2015, 04:09 AM
Updated : 14 May 2015, 04:09 AM

ছোটবেলা থেকেই ইতিহাস ছিল আমার পছন্দের বিষয়। আর এটা শুরু হয়েছিল আমার মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে শুনে। আর ইতিহাসের প্রতি ভালোলাগা থেকেই আমি খুব খবরের প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম। যদিও সেটা তখন শুধু মাত্র রেডিও পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। আর তাই প্রতিদিন অন্ততঃ দুইবার আমার বিবিসি শুনতেই হতো। এমনি করেই বেড়ে ওঠা। আর বেড়ে উঠতে উঠতে আমি আমার দেশের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে অভিভূত হতাম। অভিভূত হতাম ইতিহাসের এক মহানায়কের গল্প শুনে। মাঝে মাঝে আমার এখনো আফসোস হয় কেন আমি মুক্তিযুদ্ধের আগে জন্মগ্রহণ করিনি। তাহলে আমি গর্বের সথে বলতে পারতাম আমি সেই আলো আর বাতাসে বেড়ে উঠেছি, যে আলো আর বাতাসে প্রতিনিয়ত মুক্তির আলো খুঁজছেন আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু। হ্যাঁ, তিনিও এই একই আলো আর বাতাস গ্রহণ করতেন।

আজও ১৫ই আগষ্ট আমার কাছে বছরের সবচেয়ে কষ্টের একটি দিন। আজও আমি এই রাতটাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারিনা। কি এক দুঃসহ কষ্ট এসে আমার উপর ভর করে। আমি সেটা কাউকে বোঝাতে পারিনা। স্বাধীনতা পরবর্তি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলার জন্য প্রথম আঘাত ছিল ১৫ই আগষ্ট হত্যাকান্ড। যার মূল্যও বাংলাদেশীদের কম দিতে হয়নি।এরপর দেশের ক্ষমতায় সামরিক শাসক এসেছে, এসেছে অন্য রাজনতিক দলও। কিন্তু সব রাজনতিক দলের কাছে সবাই সবকিছু প্রত্যাশা করেনা, করতে পারেনা। আমিও পারিনি একটি দেশ তথা সরকারের কাছে একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে যে প্রত্যাশা সেটা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের কাছে প্রত্যাশা করতে। বর্তমান সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা ছিল আকাশ প্রমাণ। আমার কাছে সেটা আকাশ প্রমাণ মনে হলেও জানি সরকারের সেটা পূরণ করা খুব কঠিন কিছু ব্যাপার নয়।

আমি সবসময় একজন নাগরিক হিসাবে সুস্থভাবে পথচলার নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম আমার বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা আমার আপনজন ঘরের বাইরে গেলে নিরাপদে ঘরে ফিরে আসার নিশ্চয়তা। আমি যখন ঘর থেকে বের হব কোন জনবহুল পরিবেশে যাওয়ার জন্য, তখন আমার মা যেন আমাকে নিশ্চিন্তে, হাসিমুখে আমাকে যেতে দিতে পারে এমন একটি পরিবেশ প্রত্যাশা করেছিলাম। চেয়েছিলাম দ্ব্যর্থহীণ ভাবে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা। আমি আমার মতামত প্রকাশ করে নির্বিঘ্নে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতে পারবো। আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি স্বচ্ছ প্রশাসন ব্যবস্থার, যেখানে প্রশাসন সত্যিকার ভাবে জনগনের বন্ধু হবে। যেখানে বিচার ব্যবস্থার দিকে কেউ আঙুল তুলে অভিযোগ জানাতে না পারে এমন একটি বিচার ব্যবস্থা চেয়েছিলাম। ২০০১ এ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আমি প্রথমবার সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের পাশের গ্রামগুলো অন্য জেলার অধীনে আর যেখানে বিএনপির আধিপত্য বেশি থাকায় ওই গ্রামগুলোর সব সংখ্যালঘু জনগন আমাদের গ্রামগুলোতে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। সেদিন আমার বারবার মনে হয়েছিল আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে এমনটা নিশ্চয়ই হতোনা। কিন্তু, আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি আমার এই মনে হওয়াটাও পরে ভুল প্রমানিত হয়েছিল।

আজ বারবার আমি আমার এই ছোট ছোট চাওয়াগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। প্রতিটা মুহূর্ত এখানে দুশ্চিন্তায় কাটাতে হচ্ছে। এখানে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে গেলে হয় সেটা মৌলবাদের বিপক্ষে যাচ্ছে নয়তো প্রশাসন তথা সরকারের বিপক্ষে যাচ্ছে। আর যেহেতু আমার মতামত কারো না কারো বিপক্ষে যাচ্ছে তাই হয়তো আমাকে শংকিত থাকতে হবে।

কিন্তু, আমি মোটেও আর শংকিত থাকতে চাইনা। আমি আমার এই চাওয়াগুলো পূরনের প্রতিশ্রুতি চাই। কারন, আমি জানি আমার চাওয়াগুলো বর্তমান সরকারই সবচেয়ে ভালোভাবে পূরন করতে পারে। আর কারো কাছে আমি ভালো কোনো কিছুই প্রত্যাশা করিনি কখনো, আর করবোও না। কারন জানি সেখানে শুধু মন্দেরই বসবাস। আর এখানে কিছুটা হলেও সত্য আর সুন্দর এখনো আছে। জানিনা সেটা কোন এক রহস্যজনক কারনে অন্তরালে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আশা করছি সেই রহস্যের বেড়াজাল থেকে সবটুকু সুন্দর আর সত্যের আলো বেড়িয়ে আসবে খুব তাড়াতাড়ি। সরকার চলমান সব সংকটের অবসান ঘটাবে অতি দ্রুত এই প্রত্যাশা রাখছি। নইলে খুব বেশি দেরী নেই যেদিন সত্যি সত্যিই সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে। আর এমনটা হলে আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদ, ২লক্ষ মা-বোনদের সম্ভ্রম আর বহু যুদ্ধাহতের সকল ত্যাগ বিফলে চলে যাবে। ব্যর্থ হবে আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধুর সকল স্বপ্ন, সকল ত্যাগ তিতিক্ষা।