বিএনপি’র রাজনৈতিক হঠকারিতা

মহামানব মিল্টন বিশ্বাস
Published : 23 Feb 2013, 03:44 PM
Updated : 23 Feb 2013, 03:44 PM

প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তির মন্তব্যগুলো ইতোমধ্যে জামাত-শিবিরের পক্ষে গিয়েছে। আর স্পষ্টত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত জনতাকে উপহাস করে চলেছেন তারা। যদিও 'অনেক জ্বালাও-পোড়াও এবং হুমকি-ধামকির পর হঠাৎ করেই যেন চুপসে গেলো তাদের কর্মসূচির বেলুন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে 'কঠোর' কর্মসূচির হুমকি দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ১৮ দলীয় জোটের প্রধান নেত্রী খালেদা জিয়া। কিন্তু অনেক আলটিমেটাম শেষে গণসমাবেশ থেকে একেবারেই নির্বিষ ও গতানুগতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তিনি। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কৌশলগত কারণেই কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেননি খালেদা জিয়া। হরতালসহ রাজপথ-রেলপথ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়ে মঞ্চে এসে মত পরিবর্তন করেছিলেন তিনি। বিদ্যমান বাস্তবতায় ৭টি কারণে আপাতত 'দায়সারা' কর্মসূচি ঘোষণা করলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হলেই কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বিএনপি নেত্রী।' বিএনপির রাজনৈতিক হঠকারিতার স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় নানান তৎপরতা থেকে।

মূলত এর আগের কর্মসূচি প্রমাণ করেছে বিএনপি হঠকারী রাজনীতির সমর্থক। তিন মাস আগে আল্টিমেটাম দিয়ে একদফা সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচি পালনের হুমকি দিলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অপ্রয়োজনীয় কর্মসূচি যা মানুষের ভোগান্তির কারণ হবে তা দিয়ে চুপ করেছে বিএনপি। দলটির ভেতরে কোন্দল আর জামাত তথা মৌলবাদী দলগুলোর সঙ্গে দরকষাকষি আর কলহ আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভীষিকার জন্ম দিয়েছে। খালেদা জিয়ার বাড়ি ছাড়ার ইস্যু থেকে পরবর্তী প্রতিটি ইস্যুর হরতালই ব্যর্থ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দল ছেড়েছেন; অন্যান্য প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব। রাজপথে সরকার পতনের মতো আন্দোলনের সাংগঠনিক ক্ষমতা না থাকায় এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা ভাল হওয়ায় বিএনপি জনগণের কোন আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। গত বছর(২০১২) ১৩ জুন সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, এই সরকারের আমলে বিরোধী দলের ডাকা হরতালে পাঁচজন নিহত ও ৮৩ জন আহত হয়েছে। হরতালকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ৭৯টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এ ধরনের কর্মকা- এড়াতে সারা দেশে পুলিশি প্রহরা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপি-জামাত চারদলীয় জোট সরকার সামাজিক দুর্বৃত্তায়নকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ায় অতীতে দেশ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও লাগামহীন দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল। সে সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় উন্মত্ত জোটের মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের তা-বের কথা আমাদের সকলের মনে আছে। প্রধানমন্ত্রীর এসব কথার সূত্র ধরে বিএনপির রাজনৈতিক হঠকারিতার কিছু পরিচয় এখানে তুলে ধরা হলো।

বিএনপির নেতৃত্বে থাকা দুর্নীতিবাজদের জেলের বাইরে দেখতে চায় না জনগণ। তারেক, কোকো, খালেদা জিয়ার মামলার রায় ও শাস্তি দেখতে চাই আমরা। মনে রাখা দরকার, খালেদা জিয়া নিজেই কালো টাকা সাদা করেছিলেন। পরাজিত শত্রু পাকিস্তানিদের দালালি করে ও দুর্নীতির আসামি হয়ে এঁরা কীভাবে রাজনীতি করেন এ প্রশ্ন আমাদের। বিএনপি সবসময়ই সন্ত্রাসী কর্মকা-ে বিশ্বাসী। ক্ষমতায় থাকতে তারা পুলিশ দিয়ে বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে পিটিয়েছে। তার ওপর হাওয়া ভবনের 'কুখ্যাত তারেক' সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে হত্যা করেছে প্রগতিশীল নেতা-নেত্রীকে। বর্তমান রাষ্ট্রপতির স্ত্রী আইভি রহমানসহ অর্ধশত নেতাকে গ্রেনেড দিয়ে মেরেছে; শত শত মানুষকে পঙ্গু বানিয়েছে। আর এখন ক্ষমতার লোভে কীরকম হিংস্র আর পশু হলে ঘুমন্ত বাস চালকসহ নিরীহ পথচারীকে হত্যা করছে তা দেখে আমাদের বিস্ময় ও ঘৃণা জাগ্রত হচ্ছে। এই রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে। সন্ত্রাসীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। প্রশাসনের গণতান্ত্রিক আচরণকে দুর্বল ভাবলে সন্ত্রাসীরা ভুল করবে। অথচ বিএনপি-জামাতের নৈরাজ্য থেকে দেশ এখন মুক্ত হতে চায়; প্রজন্ম চত্বর সেই দাবিই জানাচ্ছে। নিপীড়ন-নির্যাতনের সব সীমারেখা অতিক্রম করেছিল বিএনপি-জামাত। এখন মানবতার দোহায় দিয়ে বড় বড় কথা বলে- এ সত্য তুলে ধরতে হবে বিশ্ববাসীর কাছে।

ঢাকার কয়েকটি সমাবেশের পরে জামাতের একাধিক হরতালে বিএনপি সমর্থন দিয়ে দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে বিরোধী দল মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তব ক্ষেত্রে আচরণে তা প্রকাশ করছে না। এর আগে ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে বিএনপির ডাকা হরতালের সময় বাস, সিএনজি ও পিকআপ ভ্যানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে; একই ঘটনা ঘটেছে সিলেট, চট্টগ্রামের রোড মার্চের সময় এবং বর্তমানে জামাতের হরতালে। হরতালের ফলে সম্পদ ও প্রাণহানির দায় কে নেবে? মহাজোট সরকারের চার বছরে দেখা গেছে বিএনপি কেবল বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতার রাজনীতি করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সেই ইস্যুতে তারা একাধিক হরতাল দিয়েছে। আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে না চাইলে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন হতে পারে সে কথাও তারা সংসদে উপস্থিত হয়ে বলেনি। তারা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনর্বহাল চাইচ্ছে। অথচ একসময় তারাই এ ধরনের পদ্ধতিকে উদ্ভট মস্তিষ্কের প্রলাপ বলেছিল। এজন্য তাদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনকেও বিএনপি মেনে নেয় নি। নির্বাচনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে জনগণের রায়কে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিল তারা। মূলত আন্দোলন করার জন্য তারা কোনো ইস্যু পাচ্ছে না। এজন্য জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে নেবার জন্য তাদের অপতৎপরতা চলচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের বিচার সম্পন্ন হয়েছে; বাকি আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াধীন, দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে- এসবকে নস্যাৎ ও সরকারকে নাজেহাল করে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে লিপ্ত বিএনপিসহ ১৮ দল। তারা এদেশকে পাকিস্তানের মতো সংকটাপন্ন দেশে পরিণত করতে চায়। তারা যদি কথায় কথায় আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের কথা বলে তাহলে আদালতের নির্দেশ মানতে অসুবিধা কোথায়? তাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, আদালতের অনেক রায় বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধেও গিয়েছে। সরকার আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মেনে নিয়েছে সে সব রায়।

বিএনপি আসলে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি চায় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু হোক এটা নিয়েও তাদের আপত্তি। এজন্যই তাদের রাজনৈতিক অপতৎপরতা চলছে। দেশের অগ্রসরমান অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য রাজনৈতিক হঠকারিতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। এসএসসি ও একুশের চেতনা দীপ্ত মাসে হঠকারি রাজনৈতিক কর্মসূচি মানে অর্থনীতির জন্য বিশাল ক্ষতি। হরতালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সবাই ব্যবসায়ী ও সাধারণ খেটে খাওয়া জনতা। হরতালে মন্ত্রী, আমলা, নেতা, চাকুরিজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হয় না; এমন কি যারা আহ্বান করে তারাও। গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে হরতাল হতে পারে প্রতীকী; ৬ ঘণ্টা হবে এর মেয়াদ। উপরন্তু দেখা গেছে হরতালে রাজপথে বিএনপি থাকে না। তারা জঙ্গি জামাতে দিয়ে নাশকতা চালায়। অথচ তারা দাবি করে হরতাল সফল হয়েছে। হরতাল এখন জনমতের প্রতিফলন নয়। মানুষের মনে ভয়ভীতি কাজ করে। আর আগের দিন বোমা মেরে, গাড়িতে আগুন দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। এজন্য হরতালে সাফল্য দাবি করার কোনো কৃতিত্ব বিএনপির নেই। জামাতের হরতাল প্রত্যাখ্যান করে দেখিয়েছে তাদের ঘৃণা করে জনগণ ।

বিএনপি বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালসহ ইলিয়াসকে ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কিসের জন্য? কার জন্য? হাইকোর্টে বাতিল হওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায় তারা। আর যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য সারা দেশের মানুষকে নাজেহাল করার অধিকার বিএনপি-জামাতের আছে কি? সব দায় সরকারের এটা ঠিক। বিরোধী দল উস্কানি দিলে তার দায় সরকারের ওপর বর্তায়। পুলিশকে মারলে তার জন্য পাল্টা পুলিশি এ্যাকশনের দায়ও সরকারের। সবই যখন সরকারের ঘাড়ে তাহলে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়া কেন? আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশ্বাস না করলে বিএনপির দলীয় চেয়ারম্যান প্রেস-কনফারেন্স করে তাদের অবিশ্বাসের ক্ষেত্রগুলো স্পষ্ট করতে পারেন। গুম-হত্যার ঘটনাকে কেউই সমর্থন করেন না অথচ আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই বিরোধীরা অন্য সব ইস্যুকে যুক্ত করে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে? অবশ্য এটা ঠিক বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ১৮ দলের মতো ঘটনা ঘটাতে ব্যর্থ ছিল আওয়ামী লীগ। সে সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হলে তিন দিনের হরতাল, হত্যা ও জ্বালাও পোড়াও কিছুই করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামাত জোট আমলে বিরোধী দলের জনসভা হলেই তার পাশে বোমা অথবা গ্রেনেড হামলার আশঙ্কা থাকত। বর্তমান সরকারের আমলে সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে; জঙ্গিবাদ দমন হয়েছে- এটা স্বীকার করতে তথাকথিত ১৮ দলও বাধ্য।

জামাতের নাশকতা ও ক্রমাগত হরতাল এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এতে আমদানি নির্ভর পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তবে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে দ্রব্যমূল্য সহনীয় আছে বলেই আমি মনে করি। এ পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ সমর্থনকারী রাজনৈতিক দলগুলো দেশের কথা বলে দেশ ও জনগণবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। আজকের সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করেন হঠকারী রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিহার করে রাজনৈতিক প্রতিবাদের বিকল্প ধারা খোঁজা দরকার। কারণ আমাদের মতো এই গরিব ও উন্নয়ন প্রয়াসী দেশ অস্থিতিশীলতার বোঝা বহন করতে পারছে না। তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে হরতাল-অবরোধ পরিহার করা উচিত। অন্যদিকে জামায়াত-বিএনপি জোটের ২০০১ সালের তা-বের আলামত ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারির হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা এবং অগ্নিসংযোগ এবং সাতক্ষীরার ঘটনা বিরোধী দলের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর ৩১ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল সাতক্ষীরার অগ্নিসংযোগ ও তা-বের ঘটনায় ছিল জামায়াতের প্রত্যক্ষ ইন্ধন। স্থানীয় একটি পত্রিকায় 'উস্কানিমূলক' খবর প্রকাশের পর কালীগঞ্জের ঘর-বাড়িতে যে আগুন জ্বলেছে, তাতে একইসঙ্গে পুড়েছে হিন্দু ও মুসলমানের পবিত্র গ্রন্থ গীতা আর কোরআন। ধর্মীয় মৌলবাদীরা সুযোগের সন্ধানে রয়েছে। তারই স্পষ্ট আলামত দেখা গেল সেখানকার ঘটনায়। স্কুলের ছাত্রদের দ্বারা অভিনীত একটি নাটককে কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি পত্রিকার উস্কানি বিএনপির রাজনীতির সংস্কৃতির পরিপূরক হয়ে উঠেছে। আবার ২২ এপ্রিলের পত্রিকায় হরতালের পাশাপাশি 'নতুন ইমামকে না মানার জেরে হিজবুত তওহিদের এক সদস্য খুন' হওয়ার সংবাদও লক্ষণীয়। অর্থাৎ নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক গোপন সংগঠনের কার্যক্রম যে থেমে নেই তারও দৃষ্টান্ত পাওয়া গেল বরিশালের একটি গ্রামের ঘটনা থেকে; যেখানে তারা নিজেদের মধ্যেই বিরোধে লিপ্ত হয়েছে। তবে এখন তারা প্রজন্ম চত্বরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনায় দেশকে অস্থিতিশীল করতে উন্মাদগ্রস্ত।

অথচ বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে হঠকারী রাজনৈতিক আন্দোলনের গুরুত্ব একেবারে নিঃশেষ। কারণ এর মাধ্যমে দাবি আদায় অসম্ভব। তাছাড়া কোন সমস্যার সমাধানও হচ্ছে না। বিরোধী দল যদি দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি চায় তাহলে সেই ধারা বজায় রাখার অন্তরায় নাশকতার সমর্থক হচ্ছে কেন? তারা বলে থাকে, হরতাল-অবরোধ-বিক্ষোভ গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু হরতাল-বিক্ষোভের নামে জনগণের জানমালের ধ্বংস ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার রাজনীতি আর কত দিন? জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনা করুন আর বিকল্প শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ভাষায় কথা বলুন। কিন্তু কার জন্য প্রতিবাদ? কিসের জন্য? এটাও পরিষ্কার থাকতে হবে। কথায় বলে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। উলুখাগড়া সেই সাধারণ জনতা। তাদের প্রতি সদয় হন। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাদের রাজনৈতিক হীন স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করেছিল; এ সরকারের আমলে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র খালাসের মামলা থেকে জানা যাচ্ছে ঐ ঘটনায় সেসময় সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে জড়িত করা হয়েছিল। প্রশাসনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য কিছু কর্মকর্তা এখনও সক্রিয়। এজন্য সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনের দৃঢ় অবস্থান থাকা দরকার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশৃঙ্খল জনতা ও অপরাধী মানুষকে নিয়ন্ত্রণ ও আইনের শাসনের পতাকার নিচে আনতে পারছে কিনা তা দেখার জন্য জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ব্যক্তিদের অবশ্য কর্তব্য বলে আমরা মনে করি।

গত চার বছরে জনগণের কোন দাবি নিয়ে সংসদে কথা বলে নি বিএনপি। সংসদে অনুপস্থিত থেকে বিরোধী দলের সাংসদরা সরকারের বেতন ভাতা ভোগ করছেন; বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। সংসদে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না- অভিযোগ করলেও জনগণের কোন ন্যায্য দাবি নিয়ে সংসদের বাইরে কথা বলতে দেখা যায়নি তাদের। অনলাইনের বিভিন্ন ব্লগে বিচিত্র মন্তব্যের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় মন্তব্য হচ্ছে- 'বিএনপির ফালতু কথায় জনগণ বিরক্ত।' এজন্য দেশের মধ্যে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অর্থ ব্যয়ের মহোৎসব ও নাশকতার ষড়যন্ত্র এবং তাদের তৈরি ভয়াবহ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে চায় সাধারণ মানুষ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি সম্প্রসারণের মাধ্যমে গত সাড়ে তিন বছরে দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে এবং ৬৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করা হয়েছে। ২০২১ সালে জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন করবে। এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য বিএনপি-জামাতের মতো দলগুলোর রাজনৈতিক হঠকারিতা দূর করতে হবে দেশ থেকে। অবশ্যই জামাতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা জরুরি ও অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ২২ ফেব্রুয়ারি তারা আমাদের পবিত্র শহীদ মিনার ও জাতীয় পতাকাকে অমর্যাদা করেছে।