এবং ইমরান এইচ সরকার

এস.এম.আখিউজ্জামান মেনন
Published : 10 Jan 2016, 08:11 PM
Updated : 10 Jan 2016, 08:11 PM

ইমরান এইচ সরকার তার নিজস্ব facebook একাউন্টে তুরাগ নদী তীরে জমায়িত লাখো মুসল্লির ছবি শেয়ার করে লিখেছেন- "তুরাগ তীরে আখেরী মোনাজাতে দেশ ও মানবতার কল্যাণ কামনা করলো লাখো মুসল্লি। মানবতার জয় হোক। দুনিয়ার সকল মানুষের মঙ্গল হোক। আমিন।" তার এই পোস্টে হাজার হাজার লাইক আর কমেন্টের বন্যা দেখা দিয়েছে বেশ অল্প সময়েই। কমেন্টগুলো ভরে উঠেছে শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ইমরান এইচ সরকারের প্রশংসায়। অনেকেই ইমরান এইচ সরকারের এহেন ঈমান 'ফিরে' আসায় যারপরনাই খুশি, অনেকে আবার তাকে তাবলীগে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন, এহেন অনুরোধে আমাদের এই মহান ডাক্তার বলেছেন, তিনি বহুবার তাবলীগে সময় দিয়েছেন তাই নতুন করে তার তাবলীগে আর যোগদানের প্রয়োজন নাই। অনেকে বলেছেন, ইমরান সাহেব আগে অনেক ধার্মিক ছিলেন আর যেহেতু ধার্মিক লোকদের শয়তান কু-মন্ত্রণা দেয় তাই সে খানিকটা 'বে-পথে' গিয়েছিলেন, অবশেষে তিনি আবার সঠিক পথে ফিরে এলেন। আরো আছে ইমরান এইচ সরকার কি ঠিকমতো নামাজ পড়েন কিংবা ডাক্তার সাহেবের ভণ্ডামি হঠাৎ কেন জাতীয় প্রশ্নযুক্ত কমেন্ট। ইমরান সাহেবও যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন(চলমান) এবং তিনি আমাদের এও জানাতে ভুলেন নাই যে তিনি প্রতিবারই তুরাগ তীরে যান এবং তিনি ইহজীবনে কখনো ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলেন নাই।
ডাক্তার মশায়ের কপাল ভালোর দিকে আরো যাবে তিনি যদি ধর্মীয়(আপাতত সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকদের কথাই মাথায় রাখুন) ছবি নিয়মিত শেয়ার কিংবা আপলোড করতে পারেন। বেচারা ডাক্তার সাহেব গত প্রায় তিন বছর যেহেন গালি গালাজ শুনেছেন তাতে তার এই পড়ন্ত বয়সে(আধা-রাজনৈতিক) একটু জনগনের 'দোয়া' মনে হয় দরকার।ডাক্তার সাহেব কিছু বললেই কিংবা লিখলেই এবং তা facebook এ আসলেই জনগন তাকে ন-আস্তিক বলে গালি দিবে,তার জন্মের বিভিন্ন ন-লৌকিক কাহিনী তুলে ধরবে অথবা কনডম সাপ্লাইয়ার বলে গালি দিবে কিংবা লাকী আপা সহ অসংখ্য নাম অজানা নারীর সহিত তার ন-প্লেটনিক সম্পর্ক তুলে আনা যেন নিয়মিত চিত্র ছিল। আমারাও হয়ে পড়েছিলাম ক্লান্ত, আমরা শহীদুল জহির না যে প্রতিদিন কাগজ বিক্রেতার সাথে নিয়মিত ক্লান্তিকর কথাবার্তায় ও জীবনের অসম্ভব উত্তেজনা খুঁজে পাবো(চতুর্থ মাত্রা,শহীদুল জহির)। আমাদের মানুষিক তৃপ্তির জন্য ইমরান এইচ সরকারের দরকার ছিল এমন ১৮০ ডিগ্রি কোণে ঘুরে কিছু একটা করা। যেমনটা অনেকেই বহু আগে শুরু করেছেন। ভয়ানক জ্ঞানী এবং নামকরা facebook সেলিব্রেটিরা যাহাদের নাম একদা রামদার নীচে ছিল তারা কিন্তু ইতোমধ্যে ৬০০ এর অন্তর্গত সালগুলোকে মহিমান্বিত করা শুরু করে দিয়েছেন। যেইসব facebook সেলিব্রেটি ঠিক বছর এক আগেও facebook এ কিছু লিখলে শুধুমাত্র লাল মলাটের বই পড়া লোকদের উচ্ছ্বাসিত মন্তব্যের সাথে লাইক বাগাতেন তারা ভূমিকম্পের পর মধুর আওয়াজে হৃদয় জুড়ানোর পোস্ট দিয়ে এই মাটির মানুষের সমর্থনে ভেসে গিয়েছেন। এদের সকলের পথ প্রদর্শকরা যারা একসময় শনিবারের ঠিক একদিন আগে দুপুরজুড়ে স্টাডি সার্কেল করে মহা মনীষীর চারিত্রিক পঙ্কিলতায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতেন তারাই কিন্তু আরো বহু আগেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে অফুরন্ত পানি ফোয়ারা সংগৃহীত জল খেয়ে আসছেন কিংবা সর্বগ্রাসী হিংস্র সাম্রাজ্যবাদের ধ্বংসে কোন এক নির্দিষ্ট মতবাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে দিনের পর দিন পত্রিকার পাতা ভরাচ্ছেন।
এই মাটির মানুষদের পড়তে পারলে ডাক্তার সাহেব সহ বিভিন্ন বিপরীত-ডান পন্থীদের এবং নব্য গজানো facebook সেলিব্রেটিদের মনে হয় একটি নির্দিষ্ট চেহারা আমাদের সামনে প্রতিষ্ঠার পর তার উলটা পথে হাটতে হতোনা কিংবা ভন্ড ট্যাগ (আগামী অবশ্যই আপনাদের এই নামে ডাকবে, এ ইতিহাসের শিক্ষা) খেতেন না। এই মাটির মানুষেদের মত ভন্ড লোকজন সারা বিশ্বে খুব কমই আছে, তারা যাবতীয় অ-ধর্মীয় কাজ করবে আবার মাঝে মাঝে এবাদতেও শরিক হবে, এবং এই মাঝে মাঝে এবাদতে শরীক হওয়ার দরুণ তারা প্রচন্ড সত্যের পথে নিজেদের দাবী করে যারা (তাদের মতে) 'অন্ধকারের' পথে তাদের গালি গালাজ প্রয়োজনে জীবন নাশ করতে পিছপা হবেনা।
এইচ সরকার সাহেব, আপনার আন্দোলনজনিত ব্যাস্ততা যেহেতু কম(পত্রিকার ছবিতে দেখি গোটা দশেক মানুষ আপনার সাথে তাই মনে হচ্ছে) তাই একটু সময় করে নাহয় এ মাটির মানুষের চরিত্র ভেবে দেখবেন,কাজে দিবে।
যদিও জীবনের মায়া বড় মায়া তাই জীবনের নিরপত্তা রক্ষার্থে সত্য জ্ঞানের স্পর্শহীন জনগণের চাহিদা মাথায় রেখে কাজ করায় আমাদের আপত্তি তোলা অযৌক্তিক। আশা করতে পারি সর্বোচ্চ যে,ভবিষৎ আমাদের এ মাটির পালস না বোঝা শাসিতের সরকার কিংবা 'কীসব' নিরপেক্ষ তত্ত্ব কপচানো আন্দোলনকারী না দেখাক। কারণ এসব তত্ত্ব কপচানো লোকেরা যখন উলটা পথে হাটা শুরু করে তখন মানব সভ্যতার অসাধারণ মানুবিক এই তত্ত্বগুলো হাসির বস্তু হয়ে ওঠে যা মেনে নেওয়া আমার মত অনেকেরই কষ্টকর হয়ে ওঠে।।
লেখার শেষে এসে শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসির কথা মনে পড়ছ, তৎকালীন শাসকের খড়গহস্ত থেকে বাঁচতে শওকত ওসমান তাঁর এই বইকে আলিফ লায়লার সকলেরই ন-জানা আসল বই থেকে হারিয়ে যাওয়া এক রজনীর গল্প বলেছেন বইয়ের প্রারম্ভে।
ঘাড়ের উপর কামারশালার শ্রেষ্ট সম্পদের ঝলকানি এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের ৫৭ সংখ্যার উপর অত্যাধিক প্রেম থাকায় শওকত ওসমানের দেখানো পথে…………