দুঃখিত মি.গভর্ণর

এস.এম.আখিউজ্জামান মেনন
Published : 15 March 2016, 02:19 AM
Updated : 15 March 2016, 02:19 AM

বাস্তবতা চরম স্বার্থপর নাকি আমরা বাস্তবতাকে আবেগের চশমার ভিতর দিয়ে দেখতে চাই? যেমনটা কৃষণ চন্দের 'কালু ঝাড়ুদার' গল্পে লেখক বলেছেন, ব্যাটা কালু মাথার ভিতরটায় সারাটাক্ষণ ঝাড়ু হাতে উপস্থিত হয় (নিজের ভাষায়), ঠিক তেমনি আমার অহল্যারুপ অনুর্বর মস্তিষ্কে অদ্ভুতুড়ে উদ্ভট সব প্রশ্নের কিলবিলানো উপস্থিতি 24/7।

প্রশ্নটাও জ্বালাচ্ছে ভীষণ দু'দিন ধরে। ঝেটিয়ে বিদায় করার আগে প্রশ্ন'খানা'র উৎপত্তি-কারণ জানা যেতে পারে।
ইতিহাস নাকি নায়ককে খল আর খলকে নায়ক বানানোর গল্প-সংগ্রহশালা। আজকের মহা প্রভাবশালী পুরুষ কালকে হয়ে ওঠে অভিসম্পাত-প্রাপ্ত অসুর। ইতিহাসে আজকে যে মনুষ্য-শিকারি সিংহ দিনের উল্টানিতে সে হয়ে পড়ে কাঁটা-খাওয়া বিলাই।

রাস্তায় রাস্তায় তৈল চিত্র বিক্রি করে খাবার জোটানো সিট গ্রস্থ মানুষটা যখন নীল রক্তের সর্বব্যাপী প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ঐশ্বরিক দায়িত্ব তত্ত্ব নিয়ে জর্মান জাতির সামনে দিনের পর দিন হাত-পা ছুড়ে, চোখ-মুখ বাঁকিয়ে জ্বালাময়ী সব বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি সমগ্র-জাতি পূজ্য ব্যাক্তি, কিছু বছরের পাল্টানিতে সেই পূজিত ব্যাক্তিই হয়ে উঠলেন বাইবেল বর্ণিত এডাম (যেন সে ফিডার খাওয়া বাচ্চা)-কে- প্ররোচিত করা ইভের মত চরম ঘৃণিত মানবে।
বিশ্বাস করুন, ৫৭ নামক শব্দটায় ভীষণ ভয় আছে আমার তাই বাঙলাদশের ইতিহাস থেকে কোন উদাহরণ টানতে যাচ্ছি না।

তবে বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত 'ব্যাংক হ্যাকিং' ইস্যু থেকে খানা এক আলোচনা করাই যায়।

ভদ্রলোক গভর্নর সাহেব আরকি! একদা তার জীবন বৃত্তান্ত শুনিয়ে সারা দেশের মানুষের চোখের পানি টপটপিয়েছিলেন। কৃষক পুত্রের জগৎকঠিন নির্মমতা মিশ্রিত ঝড়-তুফান পেড়িয়ে গভর্ণর পদের আসীন হওয়ার জীবন কাহিনী যখন facebook নামক বস্তুর আওতায় এলো তখন হাজারে হাজারে, লাখে লাখে মানুষের সেই কাহিনী শেয়ার করার ধুম ছিল ইতিহাসখ্যাত। সেই একই ব্যাক্তির সেই একই বেহুলা-লখিন্দর রূপ করুণ কাহিনী হ্যাকিং পরবর্তীতে হয়ে উঠলো 'চরম' হাসি-ঠাট্টার বিষয়ে!

যদিও ঘটনায় গভর্নর সাহেবের কতটুকু সম্পৃক্ততা আছে ঘটনার সহিত কিংবা হ্যাকিংরোধে তিনি কি করতে পারতেন অথবা তিনি ইতোমধ্যে চার্লি চ্যাপলিনের মত ঘুমের ঘোরে (the bank, চ্যাপলিনের ছবি, ১৯১৫) হ্যাকারদের আচ্ছা পিটুনি দিচ্ছেন কিনা সেটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়, আলোচ্যবিষয় হচ্ছে সুপার/ডুপার নায়ক অনন্ত জলিলের খল+খল নায়ক মিশা সওদাগার হয়ে ওঠার কাহিনী।

শুরুর আলোচনায় আসা যাক, বাস্তবতা কি এতোটাই স্বার্থপর যে কৃতজ্ঞতা বর্জিত বীর ছুড়ে ফেলা তার নিয়মিতকার কাজ?

আমার মনে হয় তা সত্য নয়। বাস্তবতা বাস্তবতাই। বাস্তবতা বহুলাংশে কার্য পরম্পরা নির্ভর। বাতাস বুঝে ৬ কিংবা ১১ দফা যেমন সুপার হিট হওয়ার মত আবার উলটা বাতাসে দূর্বল নেতৃত্ব তেমন আস্তাকুড়ে জায়গা হবে তাই স্বাভাবিক। স্বাভাবিকতা যদি নির্মম হয় তবে বাস্তবতাকে নির্মম ডাকাই যায়।

ব্যাক্তিগত জীবনেও অনেককে বলতে শোনা যায়, 'আমি (মহা দরদী, মানবদরদী) তার (কোন এক) জন্য এত কিছু করলাম আর সে কিনা আমার সাথে এমন অকৃতজ্ঞ আচরণ করলো?' (আহা! আহা! বলি হায় হায়- পুরা একখানা কারবালার জারি তৈরি করার মত ঘটনাই বটে)। কথা খুবই পরিষ্কার- আপনে যতদিন দুগ্ধ্যদানে (নিজেকে গরু ভাবতে পারেন) সক্ষম ততদিন আপনার তোয়াজ নিশ্চিত, যেদিন আপনি সেবাদানে অক্ষম সেদিন আপনার পশ্চাৎপৃষ্ঠে কষা লাথি। মানবতা কিংবা 'হজং বজং' এসব আর নাই দুনিয়ায়, তাই এসবের নাম করে বেকুব নামপ্রাপ্ত হতে চাইলে তা আপনার সিদ্ধান্ত। আর মূল কথা কষা লাথিটা কিন্তু সত্যিই আপনার পাওনা কারণ অজ্ঞতার ফল এই হয়। কথা পরিষ্কার, যদি নিষ্কাম কর্ম (উপনিষদের আশ্রয় চাইলে নিতে পারেন) পালনে সক্ষম হন তাহলে অযাচিত দুঃখ আপনার জন্য না কিন্তু যদি কোনরূপ ফললাভের কোন 'ভালো' ( তা কি সেটা অসংজ্ঞায়িত) কাজ করে থাকেন তবে ভুল যেকোন একটি পদক্ষেপেই আপনার শারীরিক কিংবা চারিত্রিক পোস্টমর্টেমের জন্য যথেষ্ট।

দুঃখিত মি.গভর্ণর।।