হায়! শরৎ তুমি যদি আজ থাকতে কত ”বিলাসী” যে লিখতে পারতে

এস.এম.আখিউজ্জামান মেনন
Published : 4 March 2012, 08:25 PM
Updated : 4 March 2012, 08:25 PM

বয়স আমার তখন ছয় কিংবা সাত ঠিক মনে নাই তবে ঘটনার সবটুকু মনে আছে। তখন চট্রগ্রাম থাকি, পোর্টকলোনির আট নং রোড এ আমাদের বাসা ছিল।

দিনটা ছিল কোনও এক ঈদ-উল-ফিতর এর আগের রাত, আমাদের ওই এলাকায় তখন ঈদ এর চাদ দেখা গেলে একে অন্যকে রঙ ছিটিয়ে কিংবা জরি লাগিয়ে আনন্দ করার একটা রীতি প্রচলন ছিল। ওইবার আমিও অনান্য বন্ধুদের সাথে রঙ কিনেছিলাম কারও শরীরে মাখাব বলে। যথারীতি চাদ ওঠার পর রাস্তায় বের হয়েছি , দেখলাম একজন মাঝবয়সী লোককে আমার বন্ধুরা সবাই রঙ মারছে, জরি লাগাচ্ছে। লোকটাকে চিনতে পারলাম,আমাদের ঠিক কয়েক বাসা পরেই তাদের বাসা। আমি আমার বন্ধুদের দেখাদেখি আমার কাছে থাকা কিছু জরি তার শরীরে মেখে দেই। ওই লোকটি যখনই আমাকে দেখল সাথে সাথেই আমাকে মারার জন্য তেরে আসল । আমি ভয়ে দিলাম দৌওর । দেখি লোকটাও আমার পিছনে দৌড়াচ্ছে । দৌড়াতে দৌড়াতে আমি যখন পোর্টকলোনির সাত নং রোড এ তখন দেখি লোকটা হাতে অনেক বড় একটি রামদা নিয়ে আমাকে খুচ্চ্হে কিন্তু ঈদ এর আগের রাত হওয়াতে এলাকায় অনেক লোকজন ছিল তাই আমাকে দেখতে পারছিলনা (রামদাটি সে তার বাসা থেকেই এনেছিল )তারপর আমি কোনএক ভাবে বাসায় পালিয়ে আসি। প্রচন্ড ভয়ে দরজার এক কোনায় লুকিয়ে থাকি, আম্মা এসে জিগগেস করে কী হয়েছে , ভয়ে এমনকি আমার মুখদিয়ে কোনো কথাও বের হচ্ছিলনা। এর কিছুক্ষণ পরেই ওই লোকটি তার একজন ভাই এবং কিছু মাস্তান লোক নিয়ে এসে আমাদের বাসায় হামলা করে, আমার আম্মাকে অকত্থ ভাষায় গালাগালি করে। আমাদের সেই বাসাটার দরজায় এখনো লোকটার রামদার বাড়ির দাগ আছে।

সেই ঘটনার পরথেকে একটা প্রশ্ন আমার মাথায় অনেকদিন ঘুরপাক খেত তা হল ,লোকটাকে আমার অনেক বন্ধু রঙ বা জরি লাগাল তাদের সে কিচ্ছুই বলল না বরং তাদের সাথে সে আরও মজা করছিল কিন্তু আমাকে দেখে সে এভাবে খেপে গেল কেন ? অনেক দিন পর ঠিকই বুঝতে পারি এ যে সেই শ্রেণী বৈষম্যর ছোবল। আসল ঘটনা হচ্ছে পোর্টকলোনি এলাকাতে রেলওয়ে এবং পোর্ট এ চাকুরীজীবীরা বাস করে। পোর্ট এ চাকুরীজীবীরা কোনো এক কারণে (?) আসল বেতন তাদের অনেক কম হলেও প্রচুর বিলাসী জীবন-যাপনে অভস্ত। যে কারণে তারা রেলওয়ের সল্প-হালাল আয়ের মানুষদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল করতে অনেক পারংগম। তো আমার বাবা ছিলেন "রেলওয়ে সল্টগোলা" ইস্কুল এর টিচার আর ওই লোকটার বাবা পোর্ট এ চাকুরী করত। আমার সাথে যারা তাকে রঙ লাগিয়েছিল তাদের বাবারাও পোর্ট এ চাকুরী করত।

হায়! শরৎ তুমি যদি আজ থাকতে কত "বিলাসী" যে লিখতে পারতে।