শিরোনাম কী দেব ভেবে পাচ্ছিনা: একজন মুক্তিযোদ্ধার জীর্ণ পোশাক? নাকি যুদ্ধের একটি গল্প? কিংবা একজন ছাগুর অতীত -বর্তমান?

এস.এম.আখিউজ্জামান মেনন
Published : 26 March 2012, 06:29 PM
Updated : 26 March 2012, 06:29 PM

গত মাসের ১৪ তারিখ আমরা কিছু বন্ধু সিলেট ঘুরতে গিয়েছিলাম , থেকেছি রুস্তম নগর এর বিসিক এলাকার একটি রেস্ট হাউসে । সিলেট থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতের জন্য দুটি লেগুনা ভাড়া করেছিলাম । লেগুনা দুটি ভাড়া করে দিয়েছিলেন আমাদের এক বন্ধুর পরিচিত একজন । লোকটির নাম 'মঙ্গল' , সিলেটের শাহজালাল মাজার এলাকার পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তিনি । আমরা তিন দিন ছিলাম সিলেট , এই কয়টা দিন আমাদের ভদ্রলোক যথেষ্ট সাহায্য করেছেন ।

প্রথম যে দিন সিলেট পৌঁছাই অর্থাত্‍ ১৪ তারিখ সে দিন সন্ধায় মঙ্গল কাকার সাথে চা খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম রুস্তম নগর এলাকার এক দোকানে , এরই মাঝে ওই দোকানে এক বয়স্ক লোক দোকানে প্রবেশ করে। লোকটির পোশাকের জীর্ণতা কিংবা তার চেহারায় ফুটে ওঠা নিঃসঙ্গতা , অসহায়ত্ত যে কারোরই চোখে পরার মত।
দেখলাম লোকটি মঙ্গল কাকার পরিচিত । মঙ্গল কাকা লোকটিকে নিজের আপন চাচা বলে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন , এরই সাথে মঙ্গল কাকা আমাদের বললেন এই জীর্ণ পোশাকের অসহায় , নিঃসঙ্গ চাহনীর লোকটি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ।

যে জাতির স্বাধীনতা এনে দেওয়া মানুষগুলো যখন ছেড়া পোশাক পরে কিংবা ভিক্ষা করে দিন পার করে অথবা যে লোক দেশটাকে নিজ হাতে স্বাধীন করেছে সেই দেশে সেই বীর ব্যক্তিটিই যখন সবসময় মাথা নিচু করে চলা-ফেরা করে সেই জাতি কিংবা দেশের ভাগ্যে লাথি-পিছা যে অবধারিত সেটা জানাতে অবশ্য আজ লিখছি না ।

যেখানে ছিলাম, তো যখন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পেলাম তখন মুক্তিযুদ্ধের কোনও গল্প শুনার লোভ ছাড়তে পারিনি , তাই ওই দাদাকে (তাকে দাদা বলে ডেকেছিলাম ) মুক্তিযুদ্ধের একটি ঘটনা বলার জন্য অনুরোধ করলাম ।

দাদা বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বড় একটি নিশ্বাস ছেড়ে বললেন , কী বলব বাবা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা মনে করলেই তো আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা , তারপরও তোমরা যখন বলছ…..
"যুদ্ধের কোনও এক অপারেশনে সারাদিন এক পায়খানার ট্যাঙ্কির ভিতর পড়ে ছিলাম , কোন দানা-পানি পেটে পড়িনি সারাদিন , পায়খানার গন্ধে বমি করিচি কয়েকবার , পরের দিন পায়খানার ট্যাঙ্কি থেকে যখন বের হই তখন আমাকে নিজ হাতে গোসল করিয়ে দেন কর্নেল অলি "

এই টুকু ঘটনা বলার পরেই দাদা কান্নায় ভেঙে পড়েন , আমিও নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি । ইচ্ছে ছিল ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণটুকু শুনবো তার কাছ থেকে কিন্তু পরিবেশ ভারী হয়ে উঠায় আর হয়ে উঠেনি । হায়রে মুক্তিযুদ্ধ ! হায়রে স্বাধীনতা !

হায়রে অলি আহমদ, ক্ষমতার লোভ তোমাকেও শেষ পর্যন্ত ছাগু বানিয়েছে ।