আমরা কিছু গর্দভ এবং আমাদেরকে দেওয়া ‘মুভি থেরাপি’

এস.এম.আখিউজ্জামান মেনন
Published : 10 April 2012, 02:41 PM
Updated : 10 April 2012, 02:41 PM

বেশ কিছু দিন ধরে মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে , সেটা হল সমাজের সবচে গর্দভ শ্রেণীর লোক কারা? আমি ব্যক্তিগতভাবে অবশ্য সামাজিক শ্রেণী বিভাগের ঘোর বিরুধি একজন মানুষ , যেহুতু এই সমাজেই আছি তাই এই শ্রেণী বিভাগকেই সামনে আনছি , এই জন্য আগেই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । যেখানে ছিলাম, গর্দভ শ্রেণীর লোক। পৃথিবীর সব দেশেই কিছু মানুষ থাকে যারা সরকার নামক রাষ্ট্র নামক যন্ত্রটি পরিচালনা করে ,কিছু মানুষ থাকে যারা গাড়ি-বাড়ি নিয়ে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে ,কিছু মানুষ থাকে যারা তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান এর বেবস্থা করতেই হিমশিম খায়, কিছু মানুষ থাকে যারা অনাহারে , ভিক্ষা করে জীবন-যাপন করে , কিছু মানুষ থাকে যারা সমাজের বিভিন্ন অসংগতির বিরুদ্ধে কথা বলে যায় ।

আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় : সমাজের সবচে গর্দভ শ্রেণীর লোক করা ? আমি বলব যারা সমাজের বিভিন্ন অসংগতির বিরুদ্ধে কথা বলে যায় তারা । কেন তার ব্যাখ্যা একটু পরে দিচ্ছি ।

আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শিল্প মনে হয় ছবি বা মুভি বানানোর শিল্পকে , এর কারণ আপনি অনায়াসেই বুঝতে পারবেন যদি 'টাইটানিক' ছবি দেখে কত কোটি মানুষ চোখের পানিতে তাদের বুক ভাসিয়েছে এই তথ্য যদি নিতে পারেন । শুধু এই টুকু চিন্তা করুন, একটি ছোট বাথটাবে এর থেকেও ছোট একটি খেলনা জাহাজ দিয়ে শুধুমাত্র শিল্পের জোরেই ক্যামেরুন সাহেব কত লোকের আবেগ হাতে নিয়ে ইদুর-বিড়াল খেলা খেলেছেন ।

আমার কাছে আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থাকে মুভি বানানোর শিল্পর মতই মনে হয় । যেমন একটি মুভি দেখে আমরা আলোচনা করি 'লিওনার্দোর' অভিনয়শৈলী অথবা 'কেটের' রোমানটিসিসম। আমাদের থেকে আবার যারা উচ্চ লেভেলের মুভি বিশারদ তারা হয়তবা মুভিটির বিভিন্ন খুত বের করার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকে । এক কথায় আমরা সবাই থাকি চরম ব্যস্ত । আমাদের এই ব্যস্ততার ভিড়ে আমরা ভুলেই যাই অথবা আমাদের ভুলানো হয় এই মুভি তৈরির পিছনের উদ্দেশ্য অথবা আমাদের আবেগকে পুঁজি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যবসার কথা।

এইটুকু পরেই কেও আবার আমাকে মুভি বিরোধি লোক বলে গালি দিয়ে বসবেন না , শুধুমাত্র প্রেক্ষাপটের কারণেই এই উদাহরণ এর দারস্থ হয়েছি , এই জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।
হ্যাঁ যেখানে ছিলাম , আমাদের সমাজেও প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে অজস্র মুভি , মুভি গুলুর নাম দেওয়া যেতে পারে 'বাকশাল মুভি' , 'মুজিবের ওআইসি যোগদান মুভি', '৭৫ মুভি' , 'জিয়ার উত্থান-পতন মুভি ' , 'একজন বিশ্ব বেহায়ার জীবন-বৃত্তান্ত মুভি' সহ আরও অনেক নাম । দেখুন আমরা মুভি দেখে জোলির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হই , কিংবা লিভ শ্রেইবারকে ঝেড়ে গালাগালি করি কিন্তু আমরা এটা চিন্তাও করি না এই চরিত্র গুলু পুতুল নাচের পুতুল বৈকি আর কিছুই না । আমরা কখনো এই মুভির পিছনের কাহিনী জানতে চাই না বা আমাদের জানতে দেওয়া হয়না। হ্যাঁ অনেক সময়ই ইনসাইড স্টোরি নামে আরও নতুন কিছু মুভি দেখানো হয় তা স্বীকার করছি ।

ঠিক এমনি ভাবেই আমাদের সমাজের 'বাকশাল মুভি' , 'মুজিবের ওআইসি যোগদান মুভি', '৭৫ মুভি' , 'জিয়ার উত্থান-পতন মুভি ' , 'একজন বিশ্ব বেহায়ার জীবন-বৃতান্ত মুভি ' ইত্তাদি দেখে মুভিগুলুর নায়ক-নায়িকাদের গালিগালাজ কিংবা প্রশংসা করে আমরা আমাদের ব্যস্ততম দিনগুলু পার করি । আমরা হয়তবা চিন্তাও করি না আমাদের এই সকল ডায়াজিপাম ঔষধ খাইয়ে নেপথ্যের পুঁজিবাদী দানবরা কিভাবে তাদের ফায়দা লুটছে ।

এই দানবগুলো সমাজের সকল শ্রেণীর লোকদের জন্যই ঔষধ তৈরি করে রেখেছে । যেমন ধরেন আপনি সমাজের ধনী শ্রেণীর কেও একজন তাহলে আপনার ঔষধ হচ্ছে বিলাসবহুল জীবন-যাপনের সপ্ন , আপনি যদি সমাজের বিভিন্ন অসংগতির বিরুদ্ধে কথা বলা কেও একজন হন তাহলে আপনার থেরাপি হচ্ছে 'মুভি থেরাপি ' আপনার জন্য দিনকে দিন তৈরি হবে 'তসবি হাতে এক রমণীর আগমন ' কিংবা ' দাড়িপাল্লায় ধান মাপা' অথবা 'সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড' নামক বহু মুভি । আপনি ব্যস্ত থাকবেন মুভি আলোচনা-সমালোচনায় আর পুঁজিবাদের দানবরা নীরবে তাদের ফায়দা লুটবে , কারণ তারা জানে আপনি আলোচনা-সমালোচনায় এতটাই ব্যস্ত যে, না আছে আপনার রাষ্ট্র যন্ত্রটার সামগ্রিক ত্রুটির কথা চিন্তা করার না আছে আপনার এই ত্রুটির বিরুদ্ধে কোন মতবাদ দাঁড় করানোর ক্ষমতা । আপনি হয়ত বা নিজেকে জনদরদি ,প্রতিবাদী , বুদ্ধিমান গোছের ব্যক্তি হিসেবে দাবি করবেন আর আমি আপনাকে বলব একজন উন্নত প্রজাতির গর্দভ ।

এ ছাড়াও ক্ষমতা , নারী , অর্থ , উন্নত কালচার , মানবতা , ধর্ম , স্বাধীনতা, সহ আরো বহু ঔষধ আছে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনের জন্য , অথবা আছে আমার মত কোনও এক গর্দভকে এই ধরনের আলতু -ফালতু লেখা লিখার তাড়না দেওয়ার ঔষধ ।