তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বিএনপি’র শক্তি দেখানোর হরতাল!!

মোঃ হাসেম
Published : 4 June 2011, 03:44 PM
Updated : 4 June 2011, 03:44 PM

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে যারা ছিলেন এক সময়ে এর প্রবক্তা,সেই শেখ হাসিনারা এখন ক্ষমতায় এবং এর বিরুদ্ধে। আর "পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়" বলে যারা ছিলেন কঠোরভাবে এর বিরুদ্ধে,সেই খালেদা জিয়ারা ক্ষমতার বাইরে আছেন বলে,একই রকম কঠোরভাবে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে।হাসিনা-খালেদা,এই দুই নেত্রীকে নিয়ে এই আমাদের নির্মম পরিণতি।

৫ই জুন তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার দাবিতে খালেদা জিয়াদের হরতাল।যে বা যারাই,কারনেই হোক আর অকারণেই হোক,হরতাল ডেকে দিলেই,অসহায়ের মতো দেশের মানূষের তা মেনে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা ।কেননা গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারের কথা বলে হরতাল ঘোষনা করে, ঘোষনাকারিদের পক্ষ থেকে,তা পালন বা বাস্তবায়িত করার জন্য চালানো হয় নানান প্রক্রিয়ায় জোরজবরদস্তি ও চাপ।সৃষ্টি করা হয় নানান ধরনের নৈরাজ্যকর অবস্থার।রাজ পথে ভাংচুর,গাড়ী পুরানো,এমনকি রাজপথে মানূষ পুড়িয়ে মারা,মানূষ ভর্তি বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়ার মতো নির্মমতার মাধ্যমে তৈরী করা হয় পেনিক এবং ভয়ভীতিকর এক অবস্থা।

৫ই জুনের হরতালেও,বিএনপি তাদের শক্তি প্রদর্শনের কথা ঘোষনা করেছেন।স্বয়ং খালেদা জিয়া,হরতাল কর্মসূচি কঠোরভাবে পালনের জন্য সবধরনের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন।হরতালের দিন সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়ে,গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কঠোর ভাবে এই হরতাল পালন করার নির্দেশ ও দেয়া হয়েছে।বিএনপি'র সহযোগী জামায়াতের পক্ষ থেকেও এই হরতাল পালনে অনুরূপ ঘোষনা দেয়া হয়েছে।যাকে এক কথায় বলা যায়,গণতান্ত্রিকতার নামে শক্তি প্রয়োগ,জোরজবরদস্তি তথা চরম অগনতান্ত্রিক আচার-আচরন।

সন্মানীয় পাঠক লক্ষ্য করুন-"গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শক্তি প্রয়োগ (?)এর মাধ্যমে কঠোর ভাবে হরতাল পালন"!! শক্তি প্রয়োগ আবার গণতান্ত্রিক হয় কি করে? আর কঠোর ভাবে হরতাল কর্মসূচি পালনের সব ধরনের প্রস্তুতি গুলি কি?সে কি আরো বেশি ভাংচুর,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি? আরো বেশি মানূষ পুড়িয়ে মারা,আরো বেশি যাত্রিবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া ?হরতালের দিন সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ কেন? হরতালতো পালন করবে জনগন, এমতাবস্থায় সকল নেতা কর্মী মাঠে থাকতে হবে কেন?তা থাকলে তো,নিজেদের দ্বারাই নিজেদের হরতাল ভাঙ্গা হয়ে যাবে!তাহলে এমন নির্দেশ কি এই জন্য যে,কেউ যদি হরতাল পালন না করতে চায়,তাকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে হরতাল পালন করতে বাধ্য করা? এই যদি হয় অবস্থা,যা খালেদা জিয়ারা প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েই মাঠে নামছেন,তাহলে এমন হরতাল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হয় কি করে?

হরতাল যদি গণতান্ত্রিক হতো,হরতাল আহ্বানকারীরা যদি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতো-গণতান্ত্রিক আচার আচরন করতো,তাহলে হরতালের প্রতি মানুষের ক্ষোভ-বিদ্বেষ কমে আসতো,সহনশীলতা তৈরী হতো।এ প্রেক্ষিতে হরতাল আহ্বানকারী এবং সরকার উভয় পক্ষের বিবেচনার জন্য কিছু প্রস্তাবনা রাখা হলোঃ

১) হরতাল আহবান করে,আহ্বানকারীরা তাদের ডাকা হরতালের পক্ষে শান্তিপূর্ন উপায়ে পচার প্রচারণা চালাতে পারবে।কিন্ত কোন নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী বা ধ্বংসাত্মক কোন কাজ করা যাবেনা।

২) হরতাল শুরু হওয়ার ৭২ ঘন্টা পূর্বে হরতাল সম্পর্কিত সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করে দিতে হবে।

৩) হরতালের দিন কোন প্রচার-প্রচারণা বা পিকেটিং চালানো যাবেনা।হরতালের দিন মাঠে নামার বা পিকেটিং এর নামে কোন প্রকার নৈরাজ্য সৃষ্টি করার তো দরকার নাই।ইতিমধ্যেই প্রচার-প্রচারণায় মানূষ তো জানেই-হরতাল এবং কি কারনে হরতাল।সুতরাং যার খুশি হরতাল পালন করবে,যার খুশি করবে না,এরজন্য কাউকে প্ররোচিত বা কোন প্রকার বল প্রয়োগে বাধ্য করা যাবেনা।

এই বিধি-বিধানগুলি মেনে চললে বা চলতে বাধ্য করলে, হরতালে তেমন কোন অসুবিধা মানুষের হবেনা। হরতাল অনেকটাই সহনীয় হয়ে যাবে।