পুলিশের লাঠি পেটা

মোঃ হাসেম
Published : 8 July 2011, 12:26 PM
Updated : 8 July 2011, 12:26 PM

বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মাননীয় সাংসদ জয়নাল আবেদিন ফারুকের ওপর পুলিশের বর্বরতায়,দলমত নির্বশেষে সমগ্র জাতি চরম ভাবে মর্মাহত।বিগত আমলেও,বিরোধীদলের শীর্ষ নেতাদেরকে পর্যন্তও,রাজপথে ফেলে গরু-ছাগলের মত বেধড়ক পিটানোর,পুলিশের এমন বর্বরতার দৃশ্য ও চোখের সামনে জাজ্বল্যমান।এর আগের আমলেও রয়েছে একই দৃষ্টান্ত।পুলিশের এই নিকৃষ্ট স্বেচ্ছাচারিতা ভাবতে ও অবাক লাগে। কোন বাছ-বিচার,না করে পুলিশ যে কারো গায়ে হাত তুলবে,যে কারো পিঠে লাঠি মারবে,যে কারো কলার চেপে ধরবে-এ কোন মানূষের কাজ নয়,এ পাশবিকতা-আদিমতা।মানুষের প্রতি পুলিশের এমনতর পাশবিক আচরনের বিরুদ্ধে অনেক নিন্দার ঝড় তোলা হয়েছে,অনেক প্রতিবাদ করা হয়েছে,কিন্ত কোন পরিবর্তনের ছোঁয়া দেখা মিলেনি।এ প্রসঙ্গে বরেন্য লেখক-সাহিত্যিক প্রয়াত আহমেদ ছফার 'পুলিশ' নিয়ে একটি উক্তির কথা মনে পড়ে। বলছিঃ-

একবার রাস্তা পারাপার জনিত কারনে,পুলিশ তাকে(আহমদ ছফাকে)রাজপথে কান ধরে উঠা-বসা করায়।ব্যাপারটি দেখে জনাব আহমদ ছফাকে চিনতে পারা উপস্থিত জনতা,উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর মারমুখী হয়ে উঠলে,তিনি এই বলে উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত করেন যে "দেখ ওরা তো পুলিশ,মানূষ হলে না হয় কথা ছিলো"।

প্রয়াত জনাব আহমদ ছফার কথা যথার্থই বটে!টিভির পর্দায় দেখা যায়,একজন মিছিলকারী,একজন পিকেটার, পুলিশের ভয়ে বা পুলিশকে মান্য করে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে,এর পরও তার রেহাই নাই,পুলিশ পিছু ধাওয়া করে তাকে লাঠিপেটা করছে এবং ধরে টেনে-হিঁচড়ে ভ্যান গাড়িতে তুলছে। বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মাননীয় সাংসদ জয়নাল আবেদিন ফারুকের বেলাতেও এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।গায়ের জামা খোলা অবস্থায় খালি গায়ে তিনি দৌড়ে ন্যাম ভবনের দিকে চলে যাচ্ছেন,পুলিশ এখানেই থেমে যেতে পারতো। না থামে নাই,পিছু ধাওয়া করে তাকে ধরা হয়েছে এবং নির্মমভাবে পিটানো হয়েছে।পুলিশের এই বাড়াবাড়ি এবং অতিউৎসাহী কর্মকান্ড ক্ষমার অযোগ্য।

অন্যদিকে পুলিশের পক্ষেও কিন্ত কিছু বলার আছে।আমাদের স্বনামধন্য অনেক মাননীয় সংসদ সদস্যদের,পুলিশ-শিক্ষক-কর্মকর্তা-প্রকৌশলী-ডাক্তার পিটানোর মতো মাস্তানি-সন্ত্রাসি কর্মকান্ডও কিন্ত কম সুবিদিত নয়।দৃষ্টান্ত হিসাবে এই মর্মে কক্সবাজারের সরকার দলীয় সাংসদ আব্দুর রহমান বদিকে নিয়ে,গতকালের (০৭-৭-১১) প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি কার্টুনের কথা স্বরনীয়।যেখানে সরকার দলীয় এই সাংসদের বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ পিটানোর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মাননীয় সাংসদ জয়নাল আবেদিন ফারুকের ওপর পুলিশের ক্ষমার অযোগ্য বর্বরতার চরম নিন্দা করেও,বলার কিন্ত অবকাশ আছে যে,তিনি(জয়নাল আবেদিন ফারুক)যা করেছেন,তার পদমর্যাদা ও অবস্থান বিবেচনায় তা কি সঠিক ও যথাযথ ছিলো?তিনি নিজে আইন অমান্য করেছেন,গাড়ী ভাংচুর করতে চেয়েছেন,পুলিশকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন,এমনকি পুলিশের গায়ে হাতও তুলেছেন।যা পুলিশকে এমন হীন ও নিন্দনীয় পর্যায়ে নেমে যেতে প্রভোক করেছে।একই চিত্র কিন্ত এর আগের শেখ হাসিনার সরকারের আমলে,জনাব সাদেক হোসেন খোকার ওপর পুলিশের বর্বরতার বেলাতেও দেখা গেছে।জনাব খোকাও কিন্ত আগে পুলিশের ওপর আক্রমন করেছিলেন,পুলিশের গায়ে হাত তুলেছিলেন।সে সময়ের ভিডিও ফুটেজ দেখলেই এর প্রমান মিলবে।

পুলিশের ওপর সাধারনত আমাদের একটা খারাপ ধারনার কারনেই হোক বা অন্য যে কোন কারনেই হোক,উল্লেখিত সব ঘটনার,অন্য দিকটা কিন্ত খুব একটা সামনে আসেনা বা নানান কারনে সামনে আনা হয়না।পুলিশের নিন্দা করার সাথে সাথে এই অন্য দিকটাও কিন্ত বিবেচনার বিষয়।কেননা 'সন্মান,শ্রদ্ধা,মান্যতা' বিষয় গুলি পারস্পরিক ব্যাপার।আর কথায়,বক্তব্যে-মন্তব্যে এবং ব্যবহারে-আচরণে,নিজের সন্মান সবার আগে নিজেকে রাখতে হয় এবং বুঝতে হয়।তা না হলে সাংসদ, মন্ত্রী,প্রধানমন্ত্রী যেই হোক না কেন তার সন্মান কেউ রক্ষা করেনা।সময়ে হয়তোবা মানুষ তাদের ভয় করে এবং চুপচাপ থাকে,কিন্ত সুযোগ পেলেই যথাযথ জবাব দিতে ছাড়েনা।