মধ্যপ্রাচ্যের মতো আন্দোলন(??)

মোঃ হাসেম
Published : 13 Sept 2011, 06:44 AM
Updated : 13 Sept 2011, 06:44 AM

অতি সম্প্রতি মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী তার এক বক্তব্যে বলেছেন-"মধ্য প্রাচ্যের মতো আন্দোলনের সৃষ্টি করে এই সরকারের পতন ঘটানো হবে"।এমন কথা তিনি এবং তার দলের অনেক নেতারা এর আগেও বলেছেন।বেগম জিয়া এবং তার দলের নেতারা বোধহয় জানেন না, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে সাম্প্রতিক গন বিস্ফোরন এবং ইতিমধ্যেই কয়েকটি দেশের সরকার পতনের অন্যতম প্রধান কারনটির কথা।জানলে তারা কোনদিনই এই দৃষ্টান্ত টেনে আনতেন না।

আমি মিশর আর লিবিয়ার কিছু কথা বলি।এ দুটি দেশে যথাক্রমে হোসনি মোবারক এবং কর্নেল গাদ্দাফি,সম্ভাব্য সকল প্রকার জোর জবরদস্তির মাধ্যমে,তাদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন কায়েম রাখেন যুগের পর যুগ ধরে।এই দুই স্বৈরশাসক তাদের সুদীর্ঘকালের স্বৈরশাসন ও জোরজবরদস্তির মাধ্যমে দেশ দুটিকে পরিনত করেন তাদের পারিবারিক সম্পত্তিতে এবং স্থায়ীভাবে পরিবারতান্ত্রিক শাসন করার জন্য,তাদের পরে দেশ দুটির শাসন ক্ষমতায় তৈরী করেন তাদের পুত্রদেরকে। এক পর্যায়ে অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে,দেশ দুটির সকল ক্ষমতার মূল চাবিকাঠিই তুলে দেয়া হয় তাদের পূত্র-কন্যা-স্ত্রীদের হাতে।আর মানুষের ক্ষোভের বাঁধভাঙ্গা স্রোতও ধাবিত হতে থাকে, যতটুকু না মোবারক-গাদ্দাফিদের দিকে,তার চেয়ে অনেক অনেকগুন বেশি তাদের পূত্র-কন্যা-স্ত্রী; বিশেষ করে ক্ষমতার সম্ভাব্য উত্তরাধিকারি পূত্রদের দিকে।যার বহিপ্রকাশই সাম্প্রতিক বিস্ফোরন-অতঃপর সুদীর্ঘকালের স্বৈরশাসক মোবারক-গাদ্দাফির পতন।আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি মোবারক-গাদ্দাফি পূত্রদের বিরুদ্ধে সে সব দেশের আপামর মানূষের(দালাল,চাটুকার,স্বার্থভোগী-সার্থান্বেষী চক্র বাদে)ভিতরে দাও দাও করে জ্বলা ক্ষোভের আগুনের বিস্ফারিত প্রকাশ।গন বিস্ফোরনের সূচনা পর্বে অন্তরালের শাসক হিসাবে,অবিভাবক সূলভ বক্তব্য নিয়ে,যখনই টিভি'র পর্দায় হাজির হয়েছে,মোবারক-গাদ্দাফি পূত্রধনেরা, তখনই "Who are you? বলে চিৎকার দিয়ে নিজের টিভির পর্দার ওপর ঝাঁপাইয়া পড়েছে সে সব দেশের মানূষ।"Who are you? চিৎকারে জুতার পর জুতা নিক্ষেপ করেছে টিভির পর্দায় ভাসমান পূত্রধনদের মূখের ওপর।যে সমস্ত ছবি গন বিস্ফোরন কালে সেসব দেশের অনেক মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।জনতার এই ক্ষোভের আগুনের কথা আঁচ করতে পেরেই,হোসনি মোবারকের পতনের আগেই,জান বাঁচাতে মিশর ছেড়ে পালিয়ে গেছে, একদার পরাক্রমশালী মোবারক-পূত্রধনেরা। লিবিয়াতেও একই অবস্থা।

আমাদের দেশেও,খালেদা জিয়ার জোট আমলে,"Who are you?" প্রশ্নটা প্রতিনিয়তই তোলপাড় করেছে অগনিত মানূষের ভিতরটাতে। এ আমলেও যখন দেখা যায়,সেনাবাহিনী দিবসের মতো রাষ্ট্রীয় কোন অনূষ্ঠানমঞ্চের কেন্দ্রে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর পাশে গলা উঁচু করে বসে আছেন,প্রধানমন্ত্রী তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়; যখন দেখা যায় রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাশে হেঁটে যাচ্ছেন বা বসে আছেন তার বোন শেখ রেহানা,তখনও কিন্ত এ দেশের অগনিত মানূষের ভিতরে প্রশ্ন জাগে-"Who are you?।

মিশর-লিবিয়ার মতোই, শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া এবং তাদের পূত্র-কন্যা বা পরিবারের সদস্যের বাইরে অন্য কারো-আমাদের সম্ভাব্য ক্ষমতার দাবিদার বড় দুটি দল 'আওয়ামীলীগ-বিএনপি' এর প্রধান, সংসদ নেতা এবং সরকার প্রধান(প্রধান মন্ত্রী/রাষ্ট্রপতি যে নামেই হোক) হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।এমন কি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সহ রাষ্ট্রীয় কোন পদ-পদবী পাওয়ার জন্যও,শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া এবং তাদের পূত্র-কন্যা-পরিবার পরিজনদের পছন্দ-অপছন্দের বিকল্প নাই।

আরো একটি প্রসঙ্গের কথা বলি।মনে হয় গত ২৩ জুলাই ছিলো,আমাদের স্বাধীনতার দ্বিতীয় প্রধান,তাজউদ্দিন আহমেদ এর জন্মদিন।কোন টিভির পর্দায়,কোন পত্রিকার পাতায়, বা কোন সরকারি বা দলীয় পর্যায়ে,কোথাও দেখা যায় নাই মহান এই নেতার স্মৃতিচারণে সামান্য কোন আয়োজন।অথচ হাসিনা-খালেদার পুত্রকন্যা এবং পরিবারের অনেকের-জন্ম-মৃত্যু দিবস, কারাবরণ-কারামূক্তিদিবস, বিদেশ যাওয়া-আসা দিবস (হয়তোবা ভবিষ্যতে বিবাহ দিবস, মুসলমানি দিবস ইত্যাদিও)ইত্যাদি নিয়ে কত আয়োজন কত হৈচৈ!!এসব ক্ষেত্রেও মানূষের ভিতরে অবশ্যই প্রশ্ন জাগে-"Who are you?।মিশর-লিবিয়ার মতো এই-"Who are you?" এর বিস্ফোরন এদেশেও একদিন না একদিন হয়তো ঘটবেই।

এখন কথা হলো তা যদি ঘটেই অর্থাৎ খালেদা জিয়াদের কথিত "মধ্যপ্রাচ্যের মতো আন্দোলন"এর ধাক্কাটা তাহলে কোথায় গিয়ে লাগবে,কার গায়ে বেশি লাগবে,কাকে এর জন্য বেশি মূল্য দিতে হবে-খালেদা জিয়ারা কি এক বার ভেবে দেখেছেন?মনে হয়না।ভেবে দেখলে তারা অন্তত মধ্যপ্রাচ্যের দৃষ্টান্ত টানতেন না। কেননা মোবারক-গাদ্দাফির মতো,এ দেশেও পূত্রধনদের তথা পারিবারিক শাসন কায়েম করার ষোলকলা পূরনে খালেদা জিয়া,শেখ হাসিনার চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে।