তারেক-জয় বন্দনা এবং তারেক জিয়ার বারোদিন ব্যাপী জন্মদিনের উৎসব(!!)

মোঃ হাসেম
Published : 25 Nov 2011, 11:51 AM
Updated : 25 Nov 2011, 11:51 AM

খালেদা জিয়া তনয় এবং বিগত আমলের হাওয়াভবন কেন্দ্রিক বিতর্কে বহুল বিতর্কিত,তারেক জিয়ার বারদিন ব্যাপী জন্মদিনের উৎসব(!!)।বলা যায় বারদিনব্যাপী মতলববাজ-স্বার্থসন্ধানীদের তারেক বন্দনা ও চাটুকারিতার মহোৎসব।ইতিমধ্যেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিয়ে এদের (মতলববাজদের)কেউ কেউ ছুটে গেছেন লন্ডনে।দেশের ভিতরেও,কে কত বড়,কত রংবেরঙ্গের কেক কাটবেন এবং "আমাদের ভাবি প্রধানমন্ত্রী, উদিয়মান মহান নেতা,তারুন্যের প্রতিনীধি" ইত্যাদি কে কত ভারী ভারী বিশেষনে তাকে(তারেককে) বিশেষায়িত করবেন-এই মর্মে চলছে এক উৎকট প্রতিযোগিতা।সব কিছুকে ছাড়িয়ে স্বনামধন্য সাবেক এক ভিসি সাহেবতো (এমাজুদ্দিন সাহেব)তারেক জিয়াকে একেবারে তার (ভিসি সাহেবেরও) শিক্ষাগুরুর আসনেই বসিয়ে দিয়ে,বলেছেন-তারেক জিয়া নাকি তাকে (ভিসি সাহেবকে) নতুনভাবে দেশকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন!!এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং টক শো তারকা,জনাব নূরুল কবীর, তার এক মন্তব্যে বলেছেন-"এখনি যদি বারদিনব্যাপী একজনের জন্মদিন পালন করা হয়,তাহলেতো এই তারেক জিয়া যখন প্রধান মন্ত্রী হবেন(যার ঘোষনা মতলববাজ মওদুদ আহমেদরা ইতিমধ্যেই দিয়েই দিয়েছেন),তখনতো বার মাস ধরে আমাদেরকে কেবল প্রধানমন্ত্রী তারেক জিয়ার জন্মদিনের উৎসবই পালন করতে হবে।যথার্থই বলেছেন সৎসাহসী কথক জনাব নূরুল কবীর।জনাব নূরুল কবীর আরো যা বলতে পারতেন, তারেক নামের এই মানূষটির নামের পাশ থেকে-'খালেদা জিয়ার তনয়'-এই কথাটি বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে-এমন যোগ্যতার এবং এমন গুনধর একজনের জন্য যদি 'বারদিনব্যাপী' জন্মদিনের উৎসব পালন করা হয়, তাহলে তুলনামূলক বিচারে,'বারমাস এমনকি বারবছর ব্যাপী' জন্মদিন পালন করার অনেক মানূষ বিএনপিতেই আছে।কিন্ত ভাগ্যের নির্মম পরিহাস জাতির গর্ব,এমন খ্যাতিমান এবং বরেন্যদের জন্মদিন,মৃত্যুদিন সহ কোনদিনেরই কোথায়ও কোন নাম নিশানা পর্যন্তও নাই। জন্মদিবস-মৃত্যুদিবস,বিদেশে যাওয়া-আসাদিবস,গ্রেফতার-মুক্তিদিবস, ইত্যাদি আরো কত রঙ্গবেরঙ্গের দিবস,সব কেবলই খালেদা-হাসিনার এবং তাদের পুত্র-কন্যা,নাতি-নাতনি এবং পরিবার-পরি্জনদের জন্য।

বিএনপিতে তারেক জিয়ার আদলে,আওয়ামীলীগেও সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে বাড়াবাড়ি-মাতামাতি এবং হুজুগে মত্ত,আওয়ামীলীগ এবং আওয়ামীলীগ ঘরানাররাও। তাদের কাছে এর করুন পরিনতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি।মিশর,লিবিয়ার অতিসাম্প্রতিক অবস্থার কথা আমাদের সবারই জানা।সে দেশগুলির জনমানূষেরা যতটুকুনা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলো,তাদের সুদীর্ঘকালের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক-গাদ্দাফির বিরুদ্ধে,তার চেয়েও অনেক অনেক গুন বেশি ক্ষুব্দ হয়ে উঠছিলো,বাবার সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসাবে আত্নপ্রকাশ করা তাদের(মোবারক-গাদ্দাফির)পুত্রদের বিরুদ্ধে।মোবারক-গাদ্দাফির শাসনের শেষদিকে,সে দেশগুলিতে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা, পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে,সে দেশগুলির জনমানূষেরা এতোটাই ক্ষেপে উঠছিলো যে, টিভি'র পর্দায় মোবারক-গাদ্দাফির পুত্রধনদের মূখ দেখা মাত্রই "Who are you ?" গর্জনে জুতার পর জুতা নিক্ষেপ করে,ঝাপিয়ে পড়তো টিভি'র পর্দার ওপর। এর পর চূড়ান্ত ফলাফলতো আমরা ইতিধ্যেই দেখেছি।মোবারকের আগে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে তার পুত্রদের।আর গাদ্দাফির পুত্ররা কেউ কেউ হয়েছেন জনরোষের নির্মমতার শিকার,কেউ পালিয়ে গেছেন অন্য কোন দেশে,এবং সর্বশেষে একজন ধরা পড়ে অপেক্ষায় আছেন বিচারের কাঠঘড়ায় দাঁড়ানোর জন্য।এর পরেও নানান কারনে শেষমূহুর্ত পর্যন্তও তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর এবং তাদের পক্ষে চাটুকারের অভাব কিন্ত মোটেই ছিলোনা।কিন্ত জেগে উঠা জনতার ক্ষোভের কাছে সবই ভেসে গিয়েছে বালির বাধের মতো।

বাস্তবতা হলো,পরিবর্তিত ধ্যানধারনায় এ যুগের মানূষ কোথাও কারো একক কতৃত্ব এবং এক ব্যাক্তির দীর্ঘকালের শাসন পছন্দ করেনা।সে যত ভালো শাসকই হোকনা কেন।মানূষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি পরিবর্তন চায়। গনতন্ত্রের বাওতাবাজিতে, উত্তরাধিকারের শাসন,পরিবারতন্ত্র কায়েম মানূষের আরো বেশি অপছন্দের। এর বিরুদ্ধে মানূষ ক্ষুব্দ হয়। দিনে দিনে ক্ষোভ দানা বাধে। আমাদের দেশ এবং দেশের মানূষ ও এর বাইরে কিছু নয়।দুই দলের কিছু মতলববাজ চাটুকার ছাড়া এ দেশের মানূষও, তারেক-জয়দের নিয়ে এই মাতামাতি ও এমনতর উন্থান একদম পছন্দ করেনা। তাদেরকে(তারেক-জয়)ঘিরে মতলববাজ চাটুকার বলয়ের দাপটে চুপ হয়ে থাকলেও, মিশর-লিবিয়ার মতো "Who are you?" প্রস্নের,জমাট বাধা ক্ষোভের বিস্ফোরনের সম্ভাবনা,আমাদের দেশেও উড়িয়ে দেয়ার কোন কারন নাই।তারেক-জয়দের নিয়ে মেতে উঠা মতলববাজ চাটুকারদের এব্যাপারে চিন্তাশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়।