পাগলে মিথ্যা বলে না

মির্জা আরিফুর রহমান
Published : 18 August 2012, 06:49 PM
Updated : 18 August 2012, 06:49 PM

সত্য কদাচিৎ মিথ্যা হয়, তবুও সব কথ্য সত্য নয় । উদাহরন স্বরুপ বলা যায়, পাগলে যা বলে তা সত্য বলে কিন্তু সে যা দেখে বলে তা সত্য নয় । এর মানে চরম সত্যবাদী লোকেও নিজের অজান্তে মিথ্যা কথা বলতে পারে । এবং ইহা মোটেও দোষের নয়, কেননা যে লোকে ভ্রমকে সত্য মনে করে বলছে সে আর যাই হোক মিথ্যাবাদী নয় । 😛

আমাদের সমস্যাগুলো ও শুরু হয় এখান থেকে, ভ্রম এবং আবেগ এ দুটো অনুভূতি যে কোন জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট । বলা হয়ে থাকে যে অমুক লোকের সাথে বসবাসে,লেনদেনে কখনো মিথ্যা কথা বলতে শুনিনি..অথএব এ লোক যদি কোন অতিপ্রাকৃত সত্ত্বার কথাও বয়ান করেন তখন তা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেওয়া… বড়ই কঠিন । এখানে আরেকটি ব্যাপার লক্ষনীয় যে ভাল মানুষের মন্দ কর্মের মধ্যেও কিন্তু লোকে ভাল দিক খুজে । এটা অনেকটা এ রকম যে " যে যে মতে বিশ্বাস করে সে সেই মতের অগ্রহনযোগ্য সিদ্ধান্তকেও নিজের মনের মত করে গ্রহন করে " । এখান থেকে কারো প্রতি বা কোন মতের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি হলে …সেই ব্যাক্তি বা মতকে লোকে যে আবেগজনিত কারনেই বেশি ভালবাসে , তা স্পষ্ট হয় । যুক্তি নির্ভর মানুষের যে আসলে অভাব আছে ব্যাপারটা কিন্তু তা ও নয় । প্রত্যেকটা মানুষেরই কিন্তু নিজস্ব যুক্তি থাকে, বিশ্বাসে এবং ভালবাসা সর্বদা সেই যুক্তির কেন্দ্রে অবস্থান করে ।

আমরা দেখি যে বাবার অপরাধ কখনো কখনো ছেলে জানলেও , ছেলের আবেগ সেই অপরাধকে মন পছন্দ যুক্তিতে পরিবর্তন করে দেয় । মনে হয় আমাদের সামাজিক যত সমস্যা আছে তার মূলে এ দুটো অনুভূতি মুখ্য ভূমিকা রাখে । খেয়াল করলে দেখবেন, ছেলে যত অন্যায়'ই করুক না কেন বাবা-মা কিন্তু প্রায় সময়ই ছেলের পক্ষ নেয়, যেমন ছেলে বাবার পক্ষ নেয় । এমনকি আপনার ভালো লাগা কোন লোকের বিরুদ্ধে যদি তার অপরাধের সত্য সাক্ষ্য-প্রমানও দেওয়া হয় তথাপিও সাথে সাথেই আপনি তা কখনই গ্রহন করবেন না । নিদেনপক্ষে অভিযুক্তের সাথে'ত অবশ্যই কথা বলবেন । তাই, বিশ্বাস এবং আবেগের কাছে বিবেককে আসলে খানিকটা বা সাময়িকভাবে অন্ধই বলা চলে ।

এ'ত গেল ব্যাক্তিগত ব্যাপারে আমাদের ভাবনাগুলোর কথা…। একইভাবে ভেবে দেখেন , বিশ্বাস এবং আবেগ আমাদেরকে কিভাবে বিভিন্ন স্বতন্ত্র দলে বিভক্ত করে । উদাহরন স্বরুপ : বিভিন্ন জাতিগত,রাজনৈতিক এবং ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন উপদলগুলোর দ্বন্দ্বের কথা চিন্তা করুন । যদি বুঝতে পারেন, তাহলে বলতে মনে চায়…এই বিশ্বাস এবং ভালবাসা সবচেয়ে খারাপ দিক হল এ ব্যাপারগুলো, যার কারনে হাজার হাজার অন্যায়কে প্রতিনিয়ত প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে । অন্যায়ের পক্ষে হাজারও মানুষ সাফাই গাইছে । দেখা যায় যে পারস্পরিক বিশ্বাস যখন সামষ্টিক বিশ্বাসে রুপ নেয় তখন তা সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর রুপ ধারন করে…পৃথিবীবাসীকে নানা মতে,ধর্মে,দেশে বিভক্ত করে । তারপরেও বিশ্বাস এবং ভালবাসা হলো মানুষের সবচেয়ে সুন্দর গুনগুলোর মধ্যে অন্যতম । আমি মনে করি, আমাদের সকলের উচিত মনুষত্বের অপব্যবহার থেকে নিজেদের বাচিয়ে রাখতে সচেতন থাকা । বিশ্বাস এবং ভালবাসাকে আমাদের অমঙ্গলের জন্যে ব্যবহৃত করা থেকে সতর্ক থাকা । কেননা, আজকের ব্যাক্তিস্বার্থ আগামী জাতীয় স্বার্থে রুপ নিতে পারে..।

লেখার শেষে আপনাদের সাথে একটা কথা শেয়ার করতে চাই : "মানুষ যে যুক্তিতে এক বর্গগজেরও কম জায়গায় জন্মগ্রহন করে, শত সহস্র মাঈল সীমানা নির্ধারন করে, উক্ত স্থানকে নিজের স্বদেশ বলে অভিহিত করে ….সেই একই যুক্তিতে পুরো পৃথিবীটাকে স্বদেশ বলে অভিহিত করা যায় । অথএব , কেন আমরা সংকীর্ণ চিন্তা করব ? "