অসাধারনকে বুঝতে হলে

মির্জা আরিফুর রহমান
Published : 28 Jan 2013, 06:24 PM
Updated : 28 Jan 2013, 06:24 PM

কোন বিষয়কে মানুষ কখন অসাধারন ভাবে ? যখন মানুষ ওই বিষয়ের সাথে পরিচিত হয় । যেমন, আমার মত সাধারন লোকেদের দৃষ্টিতে রকেটগুলো কিভাবে চলে , ওগুলো থেকে মহাকাশে মানুষজন কিভাবে ল্যান্ড করে , কিভাবে মহাকাশে স্টেশন ধরনের কিছু মানুষ বানালো …। এই সব কটি ঘটনাই অসাধারন ঠেকছে । এর কারন আমি এসব সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানি না এ কারনে নয় কারন আমি বিষয়গুলো সম্পর্কে পত্র-পত্রিকাতে টুকটাক খবর পাই । গুগলিং করে যা পাই তাই পড়ার চেষ্টা করি, বোঝার চেষ্টা করি । মোদ্দাকথা, মানুষ যে বিষয় সম্পর্কে ভাল করে জানতে থাকবে সে বিষয়ের অসাধারনত্ব ও বুঝতে থাকবে । যারা কম জানে তারা কম তো বুঝবেই …নাকি ? কোন বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা যখন ওই বিষয়ের কথা আমাদের মাঝে তুলে ধরেন তখন আমরা ওই বিষয়ের সম্পর্কের জানার পরে বলি যে ওয়াও বিষয়টা সত্যিই অসাধারন !! এক অর্থে পৃথিবীতে নিজের দুচোখে যত বস্তুই দেখি সবই অসাধারন লাগে । কেননা প্রতিনিয়তই আমরা চেনা-জানা বিষয়গুলোর নতুন নতুন বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানতে পারছি । মানে জানাটাই অসাধারনত্বের প্রতীক ।

যা বলতে চাচ্ছিলাম আমরা যে বিষয়ের সাথে পরিচিত নই , যে বিষয় সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানশূন্য । সেই সমস্ত বিষয়গুলো কিন্তু মোটেই অসাধারন কোন কিছু নয় । সাধারণত অস্তিত্বহীন সত্ত্বা কখনই অসাধারনত্বের প্রতীক হতে পারে না । কিন্তু যদি বিশ্বাসগুলোর কথা বলি…তাহলে আমরা অসংখ্য বিষয়কেই অসাধারন আখ্যায়িত করি । যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি সেহেতু অস্তিত্বহীন বিষয়গুলোও অস্তিত্ব লাভ করে । যেমন ধরেন স্বর্গ একটি অসাধারন আনন্দদায়ী জায়গা, নরক একটি অসাধারন বেদনাদায়ী জায়গা । যারা এসবে প্রচন্ড বিশ্বাস করেন তাদের মধ্যে এ সমস্ত স্থান দেখার ভ্রমও সৃষ্টি হতে পারে…এটা মোটেই আশ্চর্যজনক নয় । তবে সময়ভেদে কল্পিত স্থানের অসাধারনত্ব ভিন্ন ভিন্নভাবে ফুটে উঠে ….এক্ষেত্রে বাস্তবের বিজ্ঞানের একটি অসামান্য ভুমিকা রয়েছে। এ পর্যায়ে দেখেন স্বর্গের কোন সেবাটা অসাধারন এমন প্রশ্ন যদি আজ থেকে ৫০০ বছর আগের কোন লোকদের করেন তাহলে তারা হয়ত বলবে যে স্বর্গে অসামান্য সুন্দরী রমনী আছে, স্বর্গের বাতাসকে যেখানে নির্দেশ দেব সে আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে, যা আমি খেতে চাই তা আমার সামনে হাজীর হবে …ইত্যাদি, ইত্যাদি । আর বর্তমানকালের আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন স্বর্গে কি চাস ? আমি বলব এমন একটা স্মার্টফোন যেইটা আইফোন থেকেও কোটিগুন উন্নত হবে(এইটা আমার সীমাবদ্ধতা যে কোটির উপর চিন্তা করতে পারি না) । আরও বলব যে আমার একটা ক্রিকেট টিম থাকবে যেখানে ব্রাডম্যানের মত পাচ জন ব্যাটসম্যান এবং অ্যমব্রোস,ওয়াসিম,ওয়ার্ন,মুরালী মানের বোলার থাকবে … অবশ্যই আমিই হব সে টিমের বেস্ট প্লেয়ার 😛 ।

এবার দেখেন আমার চিন্তা এবং ৫০০ বছর আগের মানুষের মধ্যে চিন্তায় কতটুকু পার্থক্য! এখানে যা পার্থক্য তার মূলে রয়েছে ৫০০ বছরের আগের মানুষটার ভাবনা…। ব্যাপারটা সহজভাবে বললে আজ থেকে ৫০০ বছর পরের কাউকে যদি তার পাওয়ার ইচ্ছার কথা জিজ্ঞেস করতে পারতাম তাহলে সে বোধহয় এমন অনেক কিছু চাইবে যা এখন আমরা চিন্তাই করতে পারছি না । এটা অসম্ভব কিছু নয়…..যদি আজ থেকে মানুষের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে…..বিজ্ঞান ঠিক এই জায়গাতেই সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে ৫০০ বছর পরের মানুষের আকাংখাও আমার অনুরুপ হতো । বিজ্ঞান গত ৫০০ বছরে অনেক এগিয়ে গেছে বলে আজ আমার চিন্তা আর আগের লোকেদের চিন্তার মধ্যে ভিন্নতা এসেছে । তাই আমার আজকের চিন্তার ভিন্নতার জন্যে এখানে মানুষের পাবার ইচ্ছার এবং বাস্তবায়নের চেষ্টার একটি অসাধারন ভুমিকা আছে ।

এখানে স্বর্গের কথা বললাম বিষয়টা খোলাসা করার জন্যে । ধর্মের পক্ষে-বিপক্ষে কিছু বলার মত প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না । প্রত্যেকটা বিশ্বাসের ভাল খারাপ দুটো দিকই আছে…কি ভালো আর কি খারাপ তা আমাদের নিজেদের জ্ঞানেই বুঝতে পারি । মুল বিষয়টা হলো কোন বস্তু অসাধারন হওয়ার পিছনের কারন সে বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা….বিষয়টা সম্পর্কে জানা, পরিচিত হওয়াই একমাত্র কারন । না দেখা…না জানা বস্তু হঠাৎ করে দেখার পরে আপনাকে চমকে দিতে পারে কিন্তু অসাধারণত্ব বোঝাতে পারে না ।