তেজস্ক্রিয়ার ভয়াবহতা কী হতে পারে

নাহুয়াল মিথ
Published : 19 March 2011, 05:55 PM
Updated : 19 March 2011, 05:55 PM

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা হামলার শিকার হয় জাপান, যার ক্ষত এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় । এবার তাদেরকে পারমানবিক চুল্লী বিস্ফোরণ তেজস্ক্রিয়ার সামনে নিয়ে এসেছে ভূমিকম্প

জাপানে পারমানবিক চুল্লী বিস্ফোরণ :
গত ১১ মার্চ ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলের ফুকুশিমা-১ ও ফুকুশিমা-২ পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ডাইচি ও ডাইনি কেন্দ্র দুটিতে ভূমিকম্পের পরপরই সমস্যা দেখা দেয়। কেন্দ্র দুটিতে শীতক যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। শীতক যন্ত্র সচল করতে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়। ভূমিকম্পের কারণে তাতে ব্যাঘাত ঘটায় এই বিপর্যয়ের কারণ। পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পারমাণবিক চুল্লি শীতল করার ব্যবস্থা না থাকায় বিশেষজ্ঞ ও কর্মীরা ওই কেন্দ্রে সাগরের পানি ঢুকিয়ে চুল্লি ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে।চুল্লিতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সেখানে তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিক্রিয়া ঘটে। যা থেকে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস সৃষ্টি হলে ব্যাপক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পরে।
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর চুল্লি¬তে ১২মার্চ ও ৩ নম্বর চুল্লিতে ১৪মার্চ এবং ২ নম্বর চুল্লি¬তে ১৫মার্চ সকালে বিস্ফোরণ ঘটে। এছাড়া ওই কেন্দ্রের ৪ নম্বর চুল্লিতেও ১৫মার্চ বিকেলে আগুন লেগেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কান। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয়া ছড়াচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায়।

জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো জানিয়েছে, টোকিওর কাছে কানাগাওয়া এলাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় বায়ুতে নয় গুণ তেজস্ক্রিয়তার শনাক্ত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ওই দুর্ঘটনায় ৭ মাত্রা পর্যন্ত পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার সতর্কতা জারি করেছে। অতিরিক্ত তাপে পারমাণবিক চুল্লি সম্পূর্ণ গলে গেলেই কেবল ৬ বা ৭ মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়। ৪ বা ৫ মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয় চুল্লি আংশিক গলে গেলে। তেজস্ক্রিয়া ছড়ানো প্রতিরোধে ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারপাশের ৩০ কিলোমিটার আকাশপথকে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
টেপকোর হিসাবে, স্বাভাবিক সময়ে এক বছরে বাতাসে তেজস্ক্রিয়া ছড়ানোর সহনীয় যে মাত্রা তার আট গুণ ছড়িয়েছে এক ঘণ্টায়। ১৫ মার্চ সকালে মাত্র ৪০ মিনিটের ব্যবধানে তেজস্ক্রিয়া ১৯৪১ মাইক্রোসিভার্টস থেকে ৮ হাজার ২১৭ মাইক্রোসিভার্টসে পৌঁছেছে, বছরে সহনীয় মাত্রা যেখানে ১ হাজার মাইক্রোসিভার্টস।

আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা বলেছে, ১৫ মার্চ বিস্ফোরণের পর ঘণ্টায় ৪০০ মিলিসিভার্টসের চেয়ে বেশি তেজস্ক্রিয় নির্গমণ হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মতে, বছরে ১০০ মিলিসিভার্টসের চেয়ে বেশি মাত্রার তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে ক্যান্সার হতে পারে।

মানবিক বিপর্যয়:
পরমাণু প্রকল্পের চারপাশে ২০ কিলোমিটার এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে নেয়া হয়েছে।তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়ায় ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।৩ নম্বর চুল্লিতে বিস্ফোরণে ১১ জন আহত হয় যাদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিস্ফোরণে চারদিকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি ছড়িয়ে পড়ে।সিএনএন জানায়, তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের ফলে কমপক্ষে ১৬০ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণু কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়ার কারণে খাবার ও পানির মাধ্যমে ক্যান্সার হতে পারে। উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় বিকিরণ এক্ষেত্রে আরো বিপজ্জনক। তেজস্ক্রিয়া মানুষের শরীরের কোষের ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড)-এর গঠনে পরিবর্তন ঘটায়। তাতে দেহকোষের অসম বিভাজন ও বৃদ্ধি ঘটে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। পরিণতদের চেয়ে গর্ভজাত ও বাড়ন্ত শিশুদের দেহকোষের বিভাজন অনেক বেশি হারে হয় বলে তেজস্ক্রিয়তায় তাদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। শিশুরা দুধ বেশি খায় বলে তাদের শরীরে তেজস্ক্রিয়তা প্রবেশের ঝুঁকিও বেশি। বিস্ফোরণের ফলে মানুষ দীর্ঘ মেয়াদে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবের মুখে পড়তে পারে। মানুষের থাইরয়েড ও বোন ক্যান্সার এবং লিউকেমিয়ার ঝুঁকি বাড়বে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে। আবার বৃষ্টির সঙ্গে সাগরের পানিতে ও মাটিতে নেমে খাদ্যশস্য, পানি ও সামুদ্রিক প্রাণীতে চলে যায়। সেগুলো গ্রহণ করলে মানুষের শরীরে তেজস্ক্রিয় উপাদান প্রবেশ করে। তেজস্ক্রিয়া থাকা ঘাস খেয়েছে এমন গরুর দুধের মাধ্যমেও তেজস্ক্রিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়া এক সময় পানিতে যাবে এবং সমুদ্রের পানি ও জীবজগতে তা মিশে যাবে। আর বৃষ্টি হলে সুপেয় পানিতেও তেজস্ক্রিয়া মিশে যেতে পারে।

অথৃনৈতিক বিপর্যয়:
ভূমিকম্প ও সুনামি-পরবর্তী জাপানের অনেক কারখানায় উত্পাদন বন্ধ রয়েছে। ইলেট্রনিক যন্ত্রপাতি থেকে থেকে জাহাজ নির্মাণ পর্যন্ত প্রায় সব কিছুর উত্পাদন বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎসকটের পাশাপাশি অপরিহার্য অবকাঠামো, বন্দর ও অন্যান্য সুবিধাও বন্ধ । এ ছাড়া জাপানের শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। এতে নিক্কেই প্রায় ৯০ বিলিয়ন পাউন্ড পুঁজি হারায়। জাপানের শেয়ারবাজারের এ ধসের প্রভাব পড়ে ব্রিটেনসহ বড় বড় দেশের শেয়ারবাজারে।নিউইয়র্কের লেক সিকিউরিটিজের বাজার বিশ্লেষণ বিভাগের পরিচালক অ্যান্ড্রু বাখোস জানান, জাপানে ভূমিকম্পের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি জটিল হয়ে যাবে। এর ফলে বিশ্ব মন্দাও দেখা দিতে পারে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইস বলেছে, জাপানের এ ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ হবে কমপক্ষে ১০ হাজার ৬০০ কোটি পাউন্ড।বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, এ দুর্যোগের কারণে তাদের তিন হাজার ৮০০ কোটি পাউন্ডের ক্ষতিপূরণ গুনতে হতে পারে। ফলে তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হতে পারে।বিমা সংস্থা এয়ার ওয়ার্ল্ডওয়াইড বলেছে, গ্রাহকদের বিমার দাবি পূরণ করতে গিয়ে কোম্পানিগুলোর ৯ থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

পারমানবিক চুল্লী বিস্ফোরণের ইতিহাস:
বর্তমানে সারা বিশ্বে ৪৪১ টি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট চালু আছে বা বিদ্যূৎ উৎপাদিত হচ্ছে এবং উৎপাদিত শক্তি ৩৭৪,৬৯২ মেগাওয়াট। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ১০৪টি চুল্লি থেকে ১০০,৬৮৩ মেগাওয়াট, ফ্রান্স ৫৮টি চুল্লি থেকে ৬৩,১৩০ মেগাওয়াট, জাপান ৫৪টি চুল্লি থেকে ৪৬,৮২৩ মেগাওয়াট, রাশিয়া ৩২টি চুল্লি থেকে ২২,৬৯৩ মেগাওয়াট, দক্ষিন কোরিয়া ২১টি চুল্লি থেকে ১৮,৬৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। এছাড়া ভারতের ১৯টি চুল্লি থেকে ৪,১৮৯ মেগাওয়াট ও পাকিস্তান ২টি চুল্লি ৪২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে।

জাপানের পারমানবিক চুল্লী বিস্ফোরণকে ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের থ্রি মাইল আইল্যান্ডের পারমাণবিক প্রকল্পের দুর্ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল রাশিয়ার (বর্তমান ইউক্রেনে) চেরনোবিলে পরমাণু স্থাপনায় দুর্ঘটনার কারণে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে মারা যায় ৫৬ জন। পরে তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হয়ে ক্যানসার ও আন্যান্য রোগে মারা যায় প্রায় ৪ হাজার মানুষ।পরোক্ষভাবে এ পর্যন্ত মোট ৯৩,০০০ জন মানুষ মারা যায়। ভবিষ্যতে ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুকিও রয়ে গেছে। ১৯৯৯ সালে জাপানের আরেকটি বড় ধরনের পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে। টোকিওর কাছে একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে উচ্চামাত্রার ইউরেনিয়ামের ভুল ব্যবহারের কারণে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। এতে ওই কেন্দ্রের দুজন মারা যায় এবং আরও অনেক কর্মীসহ আশপাশের অনেক মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের খিস্তাম শহরে মায়াক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর তেজস্ক্রিয়তার মেঘ ছড়িয়ে পড়েছিল কয়েক শ মাইল এলাকা জুড়ে। ১৯৫৭ সালে ব্রিটেনের উইন্ড স্কেলে দুর্ঘটনা ঘটে । ১৯৬৯ ও ১৯৮০ সালে ফ্রান্সে পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লির নকশা প্রণয়ন সম্পর্কিত ভুলের কারণে দুটি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। ১৯৮৯ সালে স্পেনের ভেন্ডালুসে পারমাণবিক চুল্লির বিস্ফোরণ ফলে প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়। ২০০২ সালে আমেরিকা ও ২০০৩ সালে হ্যাঙ্কেরিতে পারমাণবিক চুল্লির বিস্ফোরণে যে ভয়াবহতার সৃষ্টি হয়েছে তা এখনো বিশ্ববাসীর মনে দাগ কেটে রেখেছে।

কী ভাবছে অন্যান্য দেশ:
জাপানে ভূমিকম্পের কারণে সম্ভাব্য পরমাণু বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে জার্মানি সে দেশের সাতটি পুরনো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সাতটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১৯৮০ সালের আগে থেকে চালু ছিল। এর আগে জার্মানির পুরনো ১৭টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয় ১৪মার্চ। আগামী তিন মাসে কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তার সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে। জার্মানির চাহিদার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বিদ্যুৎ আসে এসব পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। পুরনো এসব পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের দাবিতে ১৪মার্চ জার্মানির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে পরিবেশবাদীরা।

এদিকে সুইজারল্যান্ড তিনটি নতুন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে দেখতে সুইস সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে ১৪ম,মার্চ সেদেশের জ্বালানিমন্ত্রী ডরিস লুথহার্ড জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "নিরাপত্তা হচ্ছে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।"সুইজারল্যান্ডে ৫টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, যা দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে সুইজারল্যান্ড এ ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়।

ভারতে পরমাণু কেন্দ্রগুলোর দ্রুত বিকাশের পরিকল্পনায় পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ ঘাটতির অবসান ঘটানোর চেষ্টায় থাকা ভারতে এ সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।কিন্তু জাপানে পরমাণু কেন্দ্রে একের পর এক বিস্ফোরণ এবং তেজস্ক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ভারতেও পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথে ধীরে চলার ডাক আসতে পারে।

এদিকে স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির ঘটনায় সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়ায় চারটি পার্লামেন্টারি কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৪ মার্চ রাজধানী সিউলে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ফুকুশিমার পারমাণবিক কেন্দ্রটি কোরিয় উপদ্বীপ থেকে এক হাজার কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি তথ্যমতে, দেশটিতে বর্তমানে ২১টি পারমাণবিক চুল্লি রয়েছে। ২০২৪ সাল নাগাদ আরও ১৪টি চুল্লি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে সরকার। তাইওয়ানও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র কমানোর চিন্তা ভাবনা করছে।

কী করবে বাংলাদেশ:
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি এজেন্সি ২০০৭ সালের জুন মাসে বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বসানোর অনুমোদন দেয়। ২৪ শে সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয় ,বাংলাদেশের প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে রূপপুরে (পাবনা জেলায় অবস্থিত,ঢাকা থেকে ২০০ কি.মি. দূরবর্তী)। আরো জানানো হয় যে, ৬০০-১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। যার আনুমানিক খরচ হতে পারে ১.৫ বিলিয়ন ডলার। আর শেষ হবে সম্ভাব্য ২০১৫ সালে।

২০০৯ সালের ১৩ ই মে,বাংলাদেশ ও রাশিয়া একটি মেমোর‌্যান্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন আর রাশিয়ার পক্ষে তাদের সরকারি আণবিক শক্তি করপোরেশন (রোসাটম)। উল্লেখ্য বাংলাদেশ এর আগেও চীন ও উত্তর কোরিয়ার সাথে এ ধরণের চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।সর্বশেষ সরকারি তথ্যমতে, রূপপুরে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ১.৫-২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। আর সময় লাগতে পারে ৪-৫ বছর।

জাপানের মতো প্রযুক্তির শীর্ষে থাকা একটি দেশে পারমানবিক দুর্ঘটনা যেখানে ঠেকানো যায়নি সেখানে বাংলাদেশে বর্তমান প্রযুক্তিগত দক্ষতার সাপেক্ষে কোন ভরসায় আমরা ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে পারমানবিক চুল্লী বসানোর সাহস করছি।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি (শতাধিক) নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। পৃথিবীর সব দেশের মতোই তাদের দেশেও শক্তির চাহিদা বাড়ছে, তারপরও গত ৩০ বছরে তারা তাদের দেশে একটিও নতুন নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র করেনি। সেখানে ঘনবসিত পূর্ণ বাংলাদেশে পারমানবিক চুল্লী কতটা নিরাপদ?