পুলিশ, জয়নাল এবং আমার একটি অরাজনৈতিক অনুধাবন

মিটন কিবরিয়া
Published : 7 July 2011, 09:46 AM
Updated : 7 July 2011, 09:46 AM

এইমাত্র জয়নালের উপর পুলিশের হামলার ভিডিও চিত্রটি দেখলাম। দেখে প্রচণ্ড ধাক্কা খেলাম। প্রথমেই বলে নেই- আমার এই লেখার উদ্দেশ্য বিএনপি, আওয়ামী লীগ কিংবা হরতালের রাজনীতি নয়। এই লেখার উদ্দেশ্য আমি নিজে এবং আমার মতো সাধারন মানুষ।

জয়নাল মার খেয়েছেন এজন্য আমি খুবই কষ্টবোধ করছি। তবে আতংকিত বোধ করছি নিজেকে এক দঙ্গল মারমুখি পুলিশের মাঝখানে কল্পনা করে। জয়নাল একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, রাজপথে মিছিলে হাজার ক্যমেরার মাঝখানে থেকেও যদি এইরকম পৈশাচিক আক্রমণের শিকার হন তাহলে আমার মতো কিবরিয়ার পোলার জন্য মাইর কোন ইস্যু না, পুরা গুষ্টির কেঊ বেঁচে থাকে কিনা সেটাই হবে আলোচনার বিষয়। হয়ত বা আলোচনা হওয়ার মতো বিষয়ই হবে না এইসব। আমজনতা বলে কথা।

পুলিশ আপনার বউকে রাস্তায় দেখলে চোখ টিপে দেবে। আপনার বোনের উদীয়মান যৌবনের দিকে লাঠি দেখিয়ে দৃষ্টিকটু ইঙ্গিত করবে, আপনার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মাঝেমধ্যেই হাতকড়ার ভয় দেখাবে এবং আপনি ভাল ছেলের মতো সবকিছু মেনে নিতে নিতে চিন্তা করবেন যে আর কটা দিন। তারপর তো বোনের বিয়ে হয়ে যাবে, আমরাও শহরে চলে যাব। খোদা হাফেজ মিস্টার কনস্টেবল। আপনি আপোষ করবেন এবং সময়মত পালাবেন এটা হচ্ছে আপনার সারভাইবাল পদ্ধতি। আমার অভিজ্ঞতায় আমি তাই দেখেছি। গ্রামের এবং মফস্বলের মানুষ কিভাবে এই বর্বর, অশিক্ষিত, ক্ষমতাধর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত বাহিনীর কাছে অসহায় তা জানতে হলে গবেষণার দরকার হয় না। দুই একজন গ্রাম্য দারোগার বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ লক্ষ্য করলেই সেটা আঁচ করা যায়।

পুলিশ যা কিছুই করুক তাদের কিছুই হয় না প্রমানের অভাবে। পুলিশের বিরুদ্ধে আপনি কি প্রমান করবেন? কে দেবে সাক্ষী? অতএব দোষ আপনার। পুলিশের খেলাপ হয়েছেন তো আপনি শেষ। বিচার, কারাদন্ড এইসব পরে হবে, আগে মাইর। পুলিশি হেফাজতে মাইরের যদি কোন প্রাইজ থাকে সেটা যে বাংলাদেশের পুলিশ পাবে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। এখন দেখছি প্রমান থাকলেও কিছু হয় না। জয়নালের মাইরের প্রমান মিডিয়ায় গিজগিজ করছে তারপরও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে। আগেই বলেছি রাজনীতি আমার লক্ষ্য নয় তারপরও বলি রাষ্ট্র যদি এইসব পুলিশের বিরুদ্ধে ত্বরিত ব্যবস্থা নিত তাহলে অন্তত সাধারন মানুষ স্বস্তি পেত। যেকোনো মানবিক বিবেচনায় এই হামলা বর্বর। হানিফের পাশবিক মানদণ্ডে এই হামলা মৃদু মনে হলেও সচেতন মানুষ একে পৈশাচিক বলেই মনে করে।

শেষ করব নিজের একটি অনুধাবন দিয়ে। দেশ ছেড়েছিলাম লেখাপডা করার জন্য। তাও বেশ অনেক দিন। মাঝে মাঝেই মনে হয় দেশ ছাড়াটা ঠিক হয়নি। বিদেশে যেসব কাজ করি তা নিজের যোগ্যতার মানদণ্ডে অনেক ছোটো। শুধু আমি নই- হাজার হাজার শিক্ষিত বাঙালি বিদেশে অনেক কষ্ট করে থাকে। আমার ধারনা এদের অনেকেই দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারত এবং চোখ বুজে এখানকার চেয়ে ভাল আয় করতে পারত। কিন্তু তারা দেশে যেতে চায় না। আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন কেন? নব্বই জন উত্তর দেবে দেশে নিরাপত্তা নাই। আমি সবসময় এদের কথার প্রতিবাদ করতাম, বলতাম উন্নত দেশে আমরা একই রকম নিরাপত্তাহীন কিন্তু আমরা টের পাই না। এইসব প্রমানের জন্য আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং পাওয়ার রিলেশন এইসব বিষয়ের মাধ্যমে নিজের যুক্তি শক্ত করার চেষ্টা করতাম। এখন মনে হচ্ছে আমি ভুল ছিলাম। বাংলাদেশের মানুষ যে কতটা নিরাপত্তাহীন তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো বাংলাদেশের পুলিশ।

***
মিটন কিবরিয়া
০৭/০৭/২০১১