ঢাবি’র “গ” ইউনিটে গোঁড়ায় গলদ

মহিতুল ইসলাম
Published : 29 Dec 2011, 11:02 AM
Updated : 29 Dec 2011, 11:02 AM

বাংলাদেশের গৌরব উজ্জ্বল বিষয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত একটি অন্যতম বিদ্যাপীঠ যেখানে প্রতিনিয়ত মেধাবীদের পদমুখর এবং একটি সুখী, সমৃদ্ধ, গনতান্ত্রিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে যার অবদান প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্ন থেকে অনস্বীকার্য।

বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ একাডেমীক মানোন্নয়ন তার কতৃত্ব যথাযথভাবে সমন্বিত রাখতে এবং বিজনেস ম্যাগনেট ও তরুন প্রজন্ম তৈরিতে অগ্রগামী ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি টানা দুইবার "গ ইউনিট" এ প্রশ্নপত্র ভুল হওয়ার বিষয়ে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ললাটে দুর্নামের কালিমাখা ছাপ অঙ্কিত হয়েছে, মনে হয় সেঞ্চুরি করতে আর ৫৮ রান বাকী!

কিন্তু প্রশ্ন কেন এটি হচ্ছে ? ভুল সচরাচর দুইভাবে ঘটে, ১.জানার অভাবে ২. জানে কিন্তু মানার অভাবে অথবা স্বভাবে। জানার অভাবে বলতে বোঝায় কোন বিষয়ে গভীরভাবে জানার সীমাবদ্ধতা । এটি আবার ভাল ছাত্র-ছাত্রিদের ক্ষেত্রে ঘটে, যখন সে শুধুমাত্র পরিক্ষার নম্বরের জন্য নিজেকে মনোনিবেশ করে। অন্নটির ব্যাখ্যা হল নিজেস্ব খামখেয়ালী ও পারিপার্শ্বিকতা থেকে উদ্ভূত হয়, যেমন আমরা জানি দুর্নীতি আন্তর্জাতিক ব্যাধি, তারপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন। সমস্যাটি কোথায় ? একদিন ভাইভা বোর্ডে জৈনক শিক্ষক এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন " বলতো আমি কে ?" ছাত্রটি নিচের দিকে তাকিয়ে বলল "সরি স্যার" । শিক্ষক তো রেগে আগুন, এতো বড় সুনামধন্য একটি পুরাতন ডিপাট'মেন্ট আর তোমরা সিনিয়র শিক্ষকদের চেননা? তোমাদের এখানে পড়ার যোগ্যতা নেই । বেরিয়ে যাও নন্‌সেন্স !!" ছাত্রটি বলল "স্যার আপনারা যখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আমরা তখন টিউশনিতে মগ্ন । চেনা তো দুরের কথা, সময়মত ক্লাস নিলে আমরা হব ধন্য" ।

আসলে ছাত্রটি ছিল হর্স পাম্পের মত তেজী ।সে বঙ্গবন্ধু বা ভাসানির মত হক কথা বলতে কুন্থা বধ করত না। তার নিজেস্ব স্লোগান "হক কথা বলব মাসী , তাই তর বাড়ি আসি বা না আসি" । কথাই বলে যত দোষ নন্দ ঘোষ , এ নন্দ ঘোষটি হল Co-curriculum activities । ছাত্রছাত্রীদের Co-curriculum activities বলতে টিউশনি, কোচিং , পাতি নেতা হবার স্বপ্ন ,রাজনৈতিক ,সামাজিক ও সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করা। অন্যদিকে শিক্ষকদের Co-curriculum activities বলতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়া, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইম- ধড় টাইম কাজ করা, সি আই এম এ , এ সি সি এ ইত্যাদি কোর্স সম্পন্ন করা। বিভিন্ন ফার্ম এর মহড়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটা মোটা মসনদে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক পায়তারা। আমার মনে হয় এই Co-curriculum ই কে "গ ইউনিটে" টানা দুইবার প্রস্নপত্র ভুল হবার বা রুটিন অনুযায়ী ক্লাস না হওয়ার জন্য প্রধানত দায়ী। আর যে Co-curriculum আমাদের প্রত্যেক সম্মানিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর হৃদয় মর্মাহত করেছে । বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ভাবমূর্তিকে দেশবাসির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে । তাইতো তাকে Co-curriculum না বলে (Cu -curriculum ) কু-কারিকলাম বলে সম্বোধন করি।প্রশ্নটি হচ্ছে Co-curriculum কোন পর্যন্ত করা উচিত ? প্রবাদে আছে "কেউ করে স্বভাবে আর কেউ করে অভাবে "। আমার মনে হয় এই পর্যন্ত করা উচিত , যখন Marginal harm to primary duty is zero অর্থাৎ প্রধান কাজকে যতক্ষণ না বাঁধাগ্রস্ত করে । ছাত্র-ছাত্রিদের যেমনটি উচিৎ প্রধান দায়িত্তকে অগ্রাধিকার দেয়া কেননা "ছাত্র নং অধ্যয়ণং তপ"

তেমনি শিক্ষকদের ও প্রধান দায়িত্তকে অগ্রাধিকার দেয়া । আরেকটি বিষয় হল আজকে যদি সত্যিকারের সেই ৭২ এর সংবিধান থাকত তথা সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সময়মত ক্লাস নিতে বাধ্য থাকেন ,তাহলে হয়ত হর্স পাম্পের মত তেজীছেলেটিকে নিচের দিকে তাকাতে হত না ।