রামুর সহিংসতা ও আমার কিছু কথা

মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা
Published : 3 Oct 2012, 06:21 PM
Updated : 3 Oct 2012, 06:21 PM

কক্সবাজারের রামু সদরে যে ঘটনা থেকে বৌদ্ধবসতিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, তার শুরুটা করেছিল ড. কুরশ আরিয়ামানেশ নামক ইরানীয় এক বাম রাজনীতিবিদ ও ইসলাম বিদ্বেষী অগ্নি উপাসকের ফেইজবুক ফ্যান পেজের মাধ্যমে। তার ফেইজবুকের পেজে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ একটি ছবি পোষ্ট করা হয় যাতে দেখা যায় একজন মহিলার দুই পা পাবিত্র কোরআন শরীফের উপরে রাখা। তার জন্ম হয়েছিল ১৯৩৪ সালে মাসহাদে এবং মৃত্যু হয় জুন ৩, ১৯৯৬ সালে উত্তর প্যারিসে। সে ছিল কট্টর অগ্নি উপাসক এবং সে ইসলাম ও মুসলমানদের মনেপ্রাণে বিদ্বেষী। সে রাজনীতির সাথেও সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা কালীন সে তার মত কিছু কট্টর অগ্নি উপাসক অনুসারী রেখে যায়। আর তার রেখে যাওয়া সেই ভক্তদের কেউ একজন "ইনসাল্ট আল্লাহ" যার স্লোগান হল "Islam is a death cult. Muslims worship a fake moon-god".

এই রকম আরও কিছু ফেইজবুক ফ্যান পেইজ হল- "Bahman Jazooyeh Ramhormozi", ড. কুরশ আরিয়ামানেশ "Dr Kourosh Aryamanesh", "Kab Ashraf", "Excuse me while I take an allah" , "Muslim Wisdom" স্লোগান – Ask a question and our Muslim community will answer it pictures are also encouraged. Inshallah , "International burn the Quran day 2011" "The Deadly Qur'an", http://www.fatwaonislam.com/, "Allah is their Imaginary friend", "The Final Crusade Against Izlam", "Evil Islam Should Be Banned", "Islam is of the Devil", "Islam is not the Religion of Peace", "Anti-Islam Alliance", "WE Hate Allah". আর সবচেয়ে মজার বিষয় হর প্রত্যেকটি পেইজের এ্যাডমিন এর কোন প্রকার ঠিকানা বা যোগাযোগ মাধ্যম দেয়া নেই। সব কিছুতেই কেমন যেন লুকোচুরি লুকোচুরি ভাব। আর এই সব কট্টরপন্থী লোকেদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্চের অগ্নি উপাসক ও ইহুদীদের সংখ্যাই শতকরা ৯৫ ভাগ। এবং তাদের মনমানসিকতাও অনেকটা বিকৃত মস্তিস্কের। যেমন – রোমানিয়ার "Vlad TepesJr" যার এককথা একবুলি হল "I have been driving around dressed as a Muslim spreading a solution of water & pigs blood around the streets of Luton. I dump loads of it in the soil too. I plan on doing this where ever there are Muslim Enclaves in the West."

আর একটি বিষয় হলো সম্পূর্ন ইন্টারনেট ঘেঁটে এমন কোন প্রতিষ্ঠান, ব্যাক্তির নাম খুজে পাওয়া যায়নি যা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা অন্য ধর্মকে হেয় করার জন্য পরিচালিত বা প্রতিষ্ঠিত। এমনকি ফেইজবুক এ খুঁজলেও এমন কিছু পাওয়া যায় না। বরং ইসলাম ও মুসলমানদেরকে এবং ধর্মী মূল্যবোধের উপর আঘাত এনে প্রতিনিয়ত দেশে বিদেশে ইহুদী-নাসারাদের কোটি কোটি, মিলিয়ন বিলিয়ন টাকা খরচ করছে।

তাদের মূল মন্ত্র, শয়নে, স্বপনে তারা এই কথা গুলোই জপতে থাকে অনেকটা ইরানী ফেইজবুক পেইজ "ইনসাল্ট আল্লাহ" এর পেইজ এ্যাডমিনের মত।
"Our God is Iran
Our Religion is Iranian
Our Religious Conviction is Knowledge and Wisdom
Our Great Philosopher and Teacher is Zartosht
Our Philosophy is based on Good Thoughts, Good Words, and Good Deeds
Our Faith is Logic
Our Cross is the Faravahar
Our Language is Persian
Our Love is Iranian Culture
Our Prophet is Koorosh The Great
Our Apostle is Ferdowsi The Great
Our Holy Banner is the Derafsh Kaviani
Our Holy Book is the Shahnameh (The Book of Kings)
Our Commandments are inscribed on Koorosh clay Cylinder
Our Mecca is Persepolis
Our Holy shrines are at Pasargad, Bistune, and Naqshe-Rostam
Our 11 Imams are Jamshid, Fereydon, Kaveh Ahangar, Dariush, Khashayar, Shapour, Khosrow-Parviz, Anushirvan, Bahram Goor, Yaqoub Leys, and Reza Shah Pahlavi
Our Imam 12 is Fouladvand
Our Ashura is Ghadesiyeh
Our martyrs are Ario-Barzan, Firooze Nahavandi, Bahmane Jazoyeh, Babake Khoramdin, Behzade Hamedani, Roozbahane Khorasani, Banu Kisia, Rostam Farokhzad, Sorena, Yazdegerd, and Mardaviz Zeyari
Our Jerusalem is Tisphone
Our Judas is Salman Farsi
Our Anti-Christ is Mohammad
Our Demons are Tazi Mullahs
Our Satan is Allah
Our Hell is Islam
Our Angels are the Iranian Freedom Fighters
Our Paradise is Norooz, Tirgan, Mehregan, Abangah, Esfandgah, Shabe-Cheleh, Sadeh, Sizdeh-Bedar, Charshanbeh-Soori
Our Temple is our own Heart
Our Sermon is History

We are True Iranians!"

"বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টা : ফেসবুকে কোরআন অবমাননার ছবি, রামু পটিয়া টেকনাফে বৌদ্ধমন্দিরে হামলা" শীর্ষক খবরটি পর্যন্ত রয়টার্স বা বিদেশী বিভিন্ন গনমাধ্যম, ইহুদী নাসারা নিয়ন্ত্রিত তারা বিকৃত করে উপস্থাপন করছে। তারা সত্য বা সঠিক তথ্য আড়াল করে মুসলামনদের বিদ্বেষ সৃষ্টি করার লক্ষে উস্কানি মূলক খবর প্রকাশ করছে। যে কেউ ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন রয়টার্স এর অনলাইন সাইট অথবা http://www.washingtonpost.com। এখানে ওয়াশিংটন পোষ্টে প্রকাশিত খবরের লিংকটি দেয়া হল – লিংক। সেখানে বলা হয়েছে এটা পরিস্কার নয় যে কুরআন পোড়ানোর ছবিটি এই বৌদ্ধ ছেলেটি নিজের প্রোফাইলে ট্যাগ করেছে কি না।

আর বাংলাদেশে যে ভাবে শুরু হয় – সহিংস ঘটনা শুরু হওয়ার ৩-৪ দিন আগে ফেসবুকের 'ইনসাল্ট আল্লাহ' নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে রামু সদরের বড়ুয়া পাড়ার যুবক উত্তম কুমার বড়ুয়া বিতর্কিত পবিত্র কোরআন শরীফের উপরে দুই পা রাথা মহিলার ছবিটি শেয়ার করেন। শেয়ার করার পর রামু উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি আনছারুল হক ভূট্টোও ছবিটি দেখতে পান। ছবিটি দেখার পর উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে তার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। মৎস্যজীবী লীগের নেতা ভূট্টো বিতর্কিত ছবিটি কেন উত্তম বড়ুয়া ফেসবুকে শেয়ার করেছে জানতে চাইলে উত্তম বড়ুয়া উল্টো তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে আনছারুল হক ভূট্টো 'তুমি দাঁড়াও, আমি আসছি' বলে মোবাইল রেখে দেন।

মোবাইল রাখার পরপরই মৎস্যজীবী লীগ নেতা আনছারুল হক ভূট্টো তার দলীয় ছেলেদের খবর দেন। পরে রাত ১০টার দিকে প্রথম মিছিলটি বের করেন তিনিই। ওই মিছিল থেকে বিতর্কিত ছবি ট্যাগকারী উত্তম বড়ুয়ার শাস্তি দাবি করা হয়। ওই মিছিলে আনছারুল হক ভূট্টো ছাড়া জেলা ছাত্রলীগ সদস্য সাদ্দাম হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন সভাপতি আজিজুল হক, যুবলীগ নেতা সাব্বিরের ভাই হাফেজ মোহাম্মদসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাই ছিলেন।

মিছিল শেষে রামু চৌমুহনী চত্বরে একটি সমাবেশও করেন তারা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম সেলিম, মত্স্যজীবী লীগ নেতা আনছারুল হক ভূট্টো প্রমুখ।
এই সমাবেশ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে 'দুষ্কৃতকারী'দের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া না হলে পরদিন রামুতে বৃহত্তর কর্মসূচিসহ হরতাল পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মাত্র ৫০-৬০ জনের ওই মিছিলটিই ছিল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম মিছিল।

প্রাপ্ত সূত্রগুলোর মতে, মিছিল ও সমাবেশ শেষে আবারও মিছিলটি রামুর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বড়ুয়া পাড়ার দিকে ঢুকে যায়। পরে ওই মিছিলেই আস্তে আস্তে লোক বাড়তে থাকে। একসময় তা হাজারে হাজারে হয়ে যায়। উত্তেজিত মানুষ তখন কেবলই বড়ুয়াপাড়া ও বৌদ্ধ মন্দিরসহ সংশ্লিষ্ট স্থাপনামুখী। হয়। আর সেই মিছিল থেকেই পরিস্থিতি আস্তে আস্তে উত্তাল রূপ নেয়।
এখন কথা হলো- এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের একে অপরকে দোষারোপ করা কেন?

পুনশ্চঃ সংগৃহীত ফেইজবুক লাইক পেইজ গুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ঐ সব পেইজ এ্যাডমিনরা তাদের পোষ্টকৃত কোন কিছুতেই কাউকে ট্যাগ করেন না এবং কোথাও শেয়ার করেন না। কিন্তু আমাদের কতিপয় জ্ঞানপাপী কর্নধার ব্যাক্তি বলেছেন ঐ অবমাননা কর ছবিটি উত্তম কুমার বড়ুয়ার একাউন্টে বিদেশীরা শেয়ার করেছে কিন্তু মূলত উত্তম কুমার নিজেই ইন্টারনেটের দুনিয়াতে প্রবেশ করে ঐ পেইজ দেখা মাত্রই নিজের ফেইজবুক একাউন্টে ট্যাগ করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাকে ছবিটি শেয়ার করার জন্য কেউ উদ্ভুদ্ব করেছে না নিজ উদ্যোগে নিজের পেইজে শেয়ার করেছে। এছাড়াও "Dr Kourosh Aryamanesh – دکتر کورش آریامنش" এর ফ্যান পেইজ www.facebook.com/Kourosh.Aryamanesh একটু ভাল করে পর্যবেক্ষন করলে দেখা যাবে, সেখানে আরও কয়েকজন বাংলাদেশী নাগরিক যাদের তথ্য গোপন করে ফেইজবুক একাউন্ট খুলে সেখান থেকে ছবি লাইক, ট্যাগ করেছে।

মহাজোটের নেতারা এজন্য 'মৌলবাদীদের' দায়ী করেছেন। অবিমৃষ্যকারী যুবকের বিরুদ্ধে কোনো কথা না বলে তারা প্রতিবাদী জনতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, রামুর ঘটনায় বিএনপির এমপি ও মৌলবাদীরা জড়িত, যারা বৌদ্ধ বিহারসহ বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তাদের দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর এ হামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তাদের কৃতকর্মের বিচারের হাত থেকে রক্ষার জন্য মরণকামড় হানার চেষ্টা করছে। দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে এ গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, চট্টগ্রামের পটিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাচ্ছে।

২ অক্টোবর: আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, রামুর বৌদ্ধবিহারে সহিসংতার ঘটনা প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবেই ঘটেছে। তিনি বলেন, "প্রশাসনের আন্তরিকতার চরম অভাব না থাকলে সুপরিকল্পিত এ হামলা হতে পারে না। তা না হলে কেন রাতভর সংখ্যালঘুদের বাড়িতে আগুন জ্বলল অথচ একটি ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি, গরম পানি, টিয়ার শেল কেন নিক্ষেপ করা হলো না? এটা সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। দেশ-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, 'এটা কোনো সাম্প্রদায়িক বা হানাহানির ঘটনা নয়। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক ও সুপরিকল্পিত একটি ঘটনা। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একটি কুচক্রীমহল ষড়যন্ত্রমূলক গুজব ছড়িয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই গোষ্ঠীর স্থানীয় কয়েকজন শীর্ষ নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এটা ঘটান। তাদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।'

শিল্পন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়া বলেছেন, একটি কুচক্রীমহল এ হামলা চালিয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন তাদের বিচার হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ এদেশের সম্মানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নষ্ট করতে কিছু স্বার্থান্বেষী ও উচ্ছৃঙ্খল সংগঠন উঠেপড়ে লেগেছে। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত এ সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত হতে দেয়া যাবে না। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে, দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ অঞ্চলের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে পুনরুদ্ধার করা হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুল-উল আলম হানিফ বলেছেন, "কক্সবাজারের রামু উপজেলার বৌদ্ধ বিহার ও বসতবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের সম্পৃক্ততা যাচাই করা হচ্ছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ এ ব্যাপারে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনার পেছনে তার কোনো ইন্ধন থাকলে তাকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।"

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমীর মুফতী ফজলুল হক আমিনী বলেছেন, "জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মৌলবাদ উত্থানের আশংকা প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে অন্যান্য মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ মহানবী (স.)-এর অবমাননার প্রতিবাদে জোরালো প্রতিবাদ করলেও তিনি তা করেননি। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রকাশের পরপরই কক্সবাজার রামু উপজেলার বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ঘটনা রহস্যজনক।"

১ অক্টোবর: কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল রামুতে বৌদ্ধ মন্দির ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যকে অবিবেচনাপ্রসূত, বালকসুলভ ও ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন।

১ অক্টোবর: কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা, বৌদ্ধবিহার ও হিন্দু মন্দির ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং উখিয়া, পটিয়া, টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের হামলার ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে বিএনপি।

সোমবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে আহ্বায়ক করে গঠিত আট সদস্যের এ তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া।

মহেশখালী কুতুবদিয়ার জাতীয় সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেইসবুকে পবিত্র কোরআন শরীফকে অবমাননা করে ছবি সংযুক্ত করার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা বৌদ্ধ বিহার ও বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের অবমাননাকারী এবং ওই কাজের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। যে গোষ্ঠি বা সম্প্রদায় ওই ইস্যুকে পুঁজি করে মন্দির ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানান।

রামুতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট নেতারা। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপত্তার দাবিও জানান তারা। এছাড়া কোরআন শরিফ অবমাননা করে ফেসবুকে পোস্টদাতাদের ধিক্কার জানান সংখ্যালঘু নেতারা।

কক্সবাজারের রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজিবুল ইসলামকে অবশেষে প্রত্যাহার করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর ওসিকে প্রত্যাহারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্ত রুখে দাঁড়ানো এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপসনালয় ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ-হামলা-লুটপাটের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত রোববার রাতে এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের জানমাল-ইজ্জত ও উপসনালয়কে পবিত্র আমানতের মতো সুরক্ষা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বিশৃঙ্খলাকারীদের কঠোর হাতে দমনের মাধ্যমে শান্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার এবং প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

১ অক্টোবর: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "তদন্তের আগেই কক্সবাজারের রামুর ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগ বাড়িয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যকে জড়িয়ে যে কথা বলেছেন এতেই মনে হয় এ ঘটনায় সরকারের মদদ রয়েছে। তারা বিরোধী দলকে সব সময় যেভাবে দায়ী করেন এ ঘটনায় সেভাবেই দায়ী করেছেন।

উপরের টুকরো সংবাদের বিষয়গুলো এবং সংগৃহীত তথ্য সমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ঘটনার সাথে সরকারী দল এবং বিরোধীদল পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করে যে ভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে নগ্ন মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছে তা কতটা যৌক্তিক?

বাংলাদেশের বাজেটের মতই, বাজেট ঘোষনার সাথে সাথে সরকারী দলের নেতা-কর্মীরা্আনন্দ মিছিল করেন আর বিরোধীদল গরিব মারার নয়া বাজেট, মানি না-মানবো না। এই স্লোগন দিয়ে মিছিল শুরু করে। তখন আমরা সাধারণ মানুষ অবাক হয়ে বলি – বাজেট ঘোষনার আগেই দুই দল রেডিমেট ব্যানার নিয়ে মিছিল শুরু করেছে।

আমরা দেশ প্রেমের বাইরে গিয়ে আর কতদিন কাঁদা ছোড়া ছুড়ির রাজনীতি করবো? আমরা কবে বলতে পারবো কালো কে কালো আর সাদা কে সাদা?

যাকে নিয়ে এত ঘটনা, সেই সোনার ছেলে এখন কোথায়? তার বিষয়ে এখনো আমরা কিছু তথ্য পাইনি। যতটুকু জেনেছি, ঘটনাস্থলে মুসলমানদের ছেলেরা গণগ্রেফতার হচ্ছে। আর ঘটনা সংঘটিত কারীর পরিবার পুলিশের গোপন হেফাজতে রয়েছে। আর ছেলেটির কোন তথ্যই নেই। যেটুকু আছে তা হল সেও ভাল আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এত বড় একটি কান্ড ঘটালো তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না করে তাকে কেন এখনে গোপন করে রাখা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত, উস্কানিদাতা সেই মৎস্যজীবী লীগের নেতারা ও তাদের কর্মীবাহীনীর নাম কি এজাহার ভুক্ত মালায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে? ইসলাম শান্তির ধর্ম। আর ধর্ম নিয়ে বাড়া-বাড়ি না করার জন্য হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) অনেক বার তাকিদ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন তার বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষনে তোমরা ততক্ষন পথভ্রষ্ঠ হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত আল-কোরআন ও আমার হাদীস আকড়ে ধরে রাখতে পারবে।

সেই পবিত্র কোর-আনের অবমাননা প্রতিবাদ করা একজন মুসলমানের ইমানী দায়িত্ব। কিন্তু প্রতিবাদের নামে গোটা এলাকায় আগুন জ্বালানো, হামলা, লুটতরাজ করা অবশ্যই ইমানের অংশ নয়। যারা এই কাজটি করেছে অবশ্যই আমরা তাদেরকে ঘৃনা করি। কিন্তু যার জন্য এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে তাকে আইনী হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করে মূল রহস্য উদঘাটন করার এখনই সময়।

ইমেইলঃ monzudna@gmail.com