জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক তানভীর রায়হানের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা এবং এ সংক্রান্ত কিছু কথা

মরতুজা খালেদ মিলটন
Published : 14 Oct 2011, 04:06 AM
Updated : 14 Oct 2011, 04:06 AM

গত মঙ্গলবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকালের খবর পত্রিকার সাংবাদিক তানভীর রায়হানের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা চালিয়ে তার ডান হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সকালের খবর পত্রিকায় জানানো হয়েছে ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদীর নেতৃত্বে ৫-৬ জনের একটি দল এ হামলা পরিচালনা করে। তানভীর এব্যাপারে স্থানীয় থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।

সন্ত্রাসীরা সেখানেই থেমে থাকেনি। তারা এখন তানভীরকে মোবাইল ফোনে মামলা প্রত্যাহার করার হুমকী দিচ্ছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, সাংবাদিকের ওপর হালার বিষয়টি নিন্দনীয়।

বিশ্বাস করুন আমি খুব আবেগ তাড়িত হয়ে ওঠেছি। আমি এতোক্ষন যে নির্যাতিত সাংবাদিকের কথা বলেছি সে আমারই ছোট ভাই। আমার মা ওর গায়ে কখনও হাত ওঠায়নি। ছোট বেলায় ওর একটা কঠিন রোগ হয়েছিল। সেই থেকে তানভীরকে আমরা কেউ গাল-মন্দ কথা পর্যন্ত বলিনা। আজ আমার সেই ভাইকে কিছু ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী দ্বারা লাঞ্চিত হতে হলো! আমার মা ঘটনাটা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং ঢাকায় ছুটে এসেছেন।

আমি ব্যক্তিগতভাবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন করেছি। বাস্তবতার নিরিখে আমি অন্য পেশার সাথে যুক্ত হয়েছি। আমার ছোট ভাই তানভীর রায়হান সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশুনা না করেও বেশ সফলতার সাথে সাংবাদিকতা করছে। এজন্য আমি এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা গর্ববোধ করি। আমার সেই ভাইকে ওরা বুকের ওপর পা দিয়ে পিষিয়েছে! …..না জানি ও কতো কান্না করেছে!

আমাদের এ কান্না দেখার কেউ নেই। আমরা তিন ভাই এক বোন। আমার ইমিডিয়েট ছোট ভাই ইমরান আহমেদ। সে আইনে মার্ষ্টাস করে লন্ডনে একটা বিশ্ববিদ্যলয়ে বার এ্যাট ল কোর্স করছে। তার পরের জন হলো একমাত্র বোন নাইমা আক্তার। সেও ইংরেজীতে মার্ষ্টাস করেছে। আমাদের বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। মোট কথা বেশ কষ্টের মধ্য দিয়েই আমাদেরকে মানুষ হতে হয়েছে। তাই আমরা কোন ভাই-বোনই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হইনি। তবে আমাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সম্মান এবং রাজাকারদেরকে ঘৃণা করতেই শিখিয়েন।

আজ আমাদেরকে লাঞ্চিত হতে হচ্ছে। কার কাছে এ অভিযোগ দেবো। বর্তমান সরকার তো অনেক বড় ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা তারা বার বারই বলেছেন। তাহলে একজন সংবাদকর্মীকে এভাবে মধ্যযুগীও কায়দায় মার খেতে হয় কেন? গুটি কয়েক উশৃঙ্খল ছাত্রলীগ কর্মীদের এতো ক্ষমতা! তাদের লাগাম টেনে ধরা কি খুবই অসম্ভব? তাহলে আওয়ামী লীগের সাথে অন্য মন্দ দলের পার্থক্যই বা থাকলো কিসের?

আমরা সাধারণ তাই এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। তবে আমরা এটাই জানি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে বিকশিত হওয়া দলটির নেতারা এখনও দলের আদর্শকে বসর্জন দেননি। তাই আশা করছি তানভীর রায়হানকে যারা হুমকি-ধুমকী দিয়ে তার পথ চলাকে বাধগ্রস্ত করছে তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। আর সরকার যদি তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ধরেই নেব যে দেশে নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই।