মাঝবয়সী লোকটির সেই করুন মৃত্যু এখনো ভাবায়ঃ আর কত নিরীহ প্রাণ এভাবে নোংরা রাজনীতির বলি হবে?

নাসিরুদ্দীন
Published : 22 Dec 2011, 04:37 PM
Updated : 22 Dec 2011, 04:37 PM

গত ১৮ ডিশেম্বর শুধু শুনেছিলাম যে ঢাকায় গোলযোগের রেশ ধরে সিলেটের চন্ডীপুলের বদিকোনায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে আর তাতে একজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।তখন ও বুঝতে পারিনি ঘটনাটা এত বীভৎস হতে পারে। ১৯ শে ডিশেম্বরের প্রথম আলোর ১ম পৃষ্টায় যখন ছবিটা দেখলাম তখন খুব বেশি খারাপ লাগল।আমার মনে হয় প্রথম আলোর সেই ছবি লাখো হূদয়কে পুড়িয়েছে।

ছবিতে শুধু দেখা যাচ্ছিল সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের যাত্রীবাহী 'সিলেট হবিগঞ্জ সুপার এক্সপ্রেস' নামের বাসের জানালা দিয়ে কালো জুতা পড়া একটা পা বের হয়ে আছে,হয়ত এটা ছিল সেই লোকটির নিজেকে বাচাঁনোর শেষ প্রয়াস। জুতা পরা মানুষটি জানালা দিয়ে বেরোনোর এক দফা বৃথা চেষ্টা করেছিলেন। জুতা দেখে অনুমান করা যায় লোকটি ছিল মধ্য বয়সী। জুতা পরা মানুষটার গন্তব্যস্থান ছিল সিলেট। বাসটি যাত্রীবোঝাই ছিল। আগুন দেওয়ার পর বাস থেকে সবাই বেরোতে পারলেও সেই মাঝবয়সী লোকটিআর বেরোতে পারলেন না। নিজে বের হতে না পারলেও বাসের জানালা দিয়ে বের করে রেখেছিলেন দুটো পা।তার সেই জুতা জোড়া এখন ও অক্ষত আছে।নির্মম মৃত্যুর চরম মুহূর্ত জুতা দেখানোর মতোই রয়ে গেল!

হৃদয়বান কয়েকজন যাত্রী তাঁকে বের করতে এগোলেই দুর্বৃত্তরা বাধা দেয়। গালিগালাজ করে দুর্বৃত্তদের হুমকি 'যে আগাইবা, তাঁরে ধরে আগুনে ফেলব… যাও ভাগো, আগে নিজেরে বাঁচাও…!' এই এক ভয়ে সহযাত্রীরা আগাতে সাহস করলেন না।

ঘটনার তিন দিন পর ও কোনো পরিচয় খোঁজে পাওয়া যায়নি লাশের । পুলিশ ছাইভস্ম হওয়া লাশ দুদিন মর্গে রাখার পর বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে সিলেট নগরের মানিকপীরটিলা গোরস্থানে। মানুষটার পরিচয় বের করার একমাত্র উপায় এখন এই এক জোড়া জুতা। কতটা দামি ছিল জুতা? নাকি কম দামি? জুতায় রং করা ছিল কিনা এসব দেখা হচ্ছে।

নিশ্চয় মৃত এই লোকটির আছে স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে-আত্মীয়-স্বজন,তারা হয়ত এখন ও তার পথ চেয়ে বসে আছে।তারা হয়ত বিষয়টা এখন ও জানতেই পারে নি।যে ঘাতকরা এই বাসে আগুন দিল তারা কি একটাবার মানুষের প্রাণের কথা চিন্তা করল না অথচ তাদের কেউ কোন ক্ষতি করেনি।শুধু রাজনীতির গোলাম হয়ে তারা এই কাজটি করল।

আমাদের দেশের জালাও পোড়াও রাজনীতি কবে শেষ হবে? যে কোন আন্দোলনের একমাত্র ভাষাই যেন ভাংচুর জালানি পোড়ানি।তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য তারা অনবরত এই রকম কাজ করছে।একটাবার তারা এর ফলাফলের কথা চিন্তা করে না।তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে যেন মানুষের প্রাণ নিয়ে হলে ও তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাছিল।এই রাজনীতিকে নোংরা ভেবে ঘৃনা করা ছাড়া কিইবা করার আছে আমাদের।