জাবি ছাত্রলীগে ‘ছাত্রদল’!!!

নাজমুজ্জামান নোমান
Published : 14 June 2012, 04:12 AM
Updated : 14 June 2012, 04:12 AM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের অধিকাংশ নেতাকর্মী ছাত্রদল থেকে এসেছেন। বিগত ৩ বছরে তাদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, টেন্ডার, যৌন হয়রানি, মুরগি চুরি, সাংস্কৃতিক কর্মীদের মারধরসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, এসব নেতাকর্মী এবার ছাত্রলীগের পদ পেতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এসব নেতাকর্মী সদ্য পদত্যাগী উপাচার্য শরীফ এনামুল হকের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।

জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগ কর্মী মাহতাব মেহেদী সম্রাট, সাইফুল ইসলাম শাকিল, ফেরদৌস, অর্নব ও মীর মশাররফ হোসেন হলের মনোয়ার হোসেন। সে সময় ছাত্রদলের কার্যক্রমে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন এসব নেতাকর্মী। এ সময় কারাবরণ করা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ অন্য নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। ছাত্রদলের মানববন্ধন, অনশন, বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ নানা কার্যক্রমে সক্রিয়া ভূমিকা রাখেন বর্তমানে ছাত্রলীগ নামধারীরা।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর সংগঠন পরিবর্তন করেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সরকার আজগর আলীর নেতৃত্বে মাহতাব মেহেদী সম্রাট, সাইফুল ইসলাম শাকিল, ফেরদৌস, অর্নব, মনোয়ারসহ শতাধিক নেতাকর্মী। অন্যরা রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও বর্তমানে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে ক্যাম্পাসে প্রভাব খাটাচ্ছেন।
ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তৎকালীন উপাচার্য সমর্থিত এসব নেতাকর্মী। সম্রাটের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতন, ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাকর্মীকে মারধর, মুরগি চুরিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ঠিকাদার, বাস মালিক, ক্যাম্পাসের খাবারের দোকান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম শাকিল ও মনোয়ার হোসেন। মাদক ব্যবসা, যৌন হয়রানি, র‌্যাগিং, গাড়ি ভাংচুর, প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ফেরদৌস ও অর্নবের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল প্রক্টরের উপস্থিতিতেই সাংস্কৃতিক কর্মীদের ওপর মারধর করেন তারা।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে মূলধারার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ফেরেন। তিন বছর ক্যাম্পাসে প্রভাব খাটিয়ে চলা বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারী এসব নেতাকর্মী এ সময় সশস্ত্র অবস্থায় মহড়া দেয়। তাদের প্রতিরোধের মুখে হলে প্রবেশ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাকর্মীরা।

ছাত্রলীগের কামাল উদ্দিন হলের নেতা মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, কতিপয় সুবিধাবাদীর বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে মাহতাব মেহেদী সম্রাট ও সাইফুলসহ অন্যরা বলেন, শুরু থেকেই তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা ছাত্রদলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি জাকিরুল ইসলাম বলেন, সুবিধা আদায়ের জন্য ছাত্রদলের বেশকিছু নেতাকর্মী সে সময় সংগঠন পরিবর্তন করে।

ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শাফিন বলেন, তৎকালীন প্রশাসনের সহায়তায় এসব নেতাকর্মী ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অনুরোধ করেন।

বিশ্ববিদ্যাল ছাত্রলীগের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে আসেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রেীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান জীবন, পাঠাগার সম্পাদক দেলোয়ার রহমান দীপু, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মুকিব মিয়া। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান জীবন বলেন, ছাত্রলীগে থাকতে হলে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মানতে হবে। এখানে অনুপ্রবেশকারীদের ঠাঁই নেই।