মেগা সিটি ঢাকার মেট্রোরেল

মোঃ সোলায়মান ইসলাম নিলয়
Published : 27 Feb 2012, 05:35 AM
Updated : 27 Feb 2012, 05:35 AM

মেগা সিটি হিসেবে ঢাকা পৃথিবীর বুকে অনেক আগেই জায়গা করে নিয়েছে। মেগা সিটিতে থাকা দরকার : ২৫% রাস্তা, বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুত, তাপমাত্রা সহনীয় রাখার জন্য পুকুর-লেক, উদ্যান, আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা, পাবলিক বাস, পাতাল রেইল ও মেট্রো রেইল, নৌ পরিবহন সুবিধা, আন্ডার পাস – ওভার পাস, ২তলা – ৩তলা বিশিষ্ট রাস্তা, অভ্যন্তরীন রুটের বিমান ব্যবস্থা।

যা আমাদের আছে ৭% রাস্তা তাও ফুটপাথগুলো অবৈধ দখলে, সংস্কারের অভাবে রাস্তাঘাট জরাজীর্ণ। পুকুর লেক অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ। অপর্যাপ্ত পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি সহ নানাবিধ নাগরিক সমস্যা জর্জরিত প্রিয় মেগাসিটি ঢাকা। মেগা সিটি গড়ে ওঠার সাথে সাথে কিছু চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হয়। গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় যার ফলে বস্তির উদ্ভব হয়। দ্রুত শহর বর্ধিত হয়ে কৃষি জমি হ্রাস পায়। বায়ু দূষণ এর মাধ্যমে পরিবেশের দারুন ক্ষতি হয়।

আমাদের প্রানের শহর ঢাকাতে যেহেতু পর্যাপ্ত জায়গার সমস্যা যেহেতু পরিবহন খাত বিশেষ করে রেল ব্যবস্থার দিকে একটু বেশিই নজর দেওয়া দরকার। মাস কয়েক আগে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গতিশীল ও গন পরিবহন ব্যবস্থা বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিকীকরণ, সেবার মান উন্নয়ন ও কাজের সুবিধার্থে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক করে রেল মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হয়েছে। যার দায়িত্বে আছেন জনাব সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। কিছু দিন আগে মন্ত্রী সংসদে আমাদের সহ পার্শ্ববর্তী কিছু দেশের রেলের সময়ানুবর্তিতার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন। যাতে দেখা যায় –
ভারত – ৭৫ থেকে ৮০ %
পাকিস্তান – ৭০ থেকে ৭৮%
বাংলাদেশ – ৪৪%, বর্তমানে মন্ত্রী দায়িত্ব প্রাপ্তির পর ৬১ – ৭২%

আমাদের দেশে রেলের সময় সূচী নিয়ে একটি কথা প্রচলিত আছে – "ন'টার গাড়ি ক'টায় ছাড়ে', আশা করবো দক্ষ একজন রাজনীতিবিদ এর হাত ধরে আমাদের রেলের সঠিক সময় সূচী, যাত্রী সেবার মান, যাত্রীর নিরাপত্তা বৃদ্ধি, দুর্নীতি বন্ধ হবে। গনপরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে রেলের জুড়ি মেলা ভার। যে কোন পরিবহন ব্যবস্থা থেকে সস্তা, আরামদায়ক, নিরাপদ। মন্ত্রীর ঘোষনা মতে বহুদিন ধরে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি হয় না, লোকসান কমাতে ভাড়া বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আশা করবো উপরোক্ত সেবার মান বৃদ্ধির পর উক্ত ভাড়া বৃদ্ধির পদক্ষপ নেওয়া হবে।

পৃথিবীর ২০ টি মেগা সিটির তালিকা :
১. টোকিও ২. গুয়াংজু ৩. সিউল ৪. সাংহাই ৫. দিল্লী ৬. মুম্বাই ৭. মেক্সিকো ৮. নিউয়র্ক সিটি ৯. সাও পাওলো
১০. ম্যানিলা ১১. জাকার্তা ১২. লস অ্যাণ্জেলেস ১৩. করাচী ১৪. ওসাকা ১৫. কলকাতা ১৬. কাইরো ১৭. বুয়েন্স আয়ার্স ১৮. মস্কো ১৯. ঢাকা ২০. বেইজিং

ট্রেন একটি সাশ্রয়ী, আরামদায়ক, ঝুকিমুক্ত সেবা মূলক সরকারি গণপরিবহন প্রতিষ্ঠান। ট্রেন একটি সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান হলেও তার সেবা থেকে বাংলাদেশের মানুষ বঞ্চিত। ট্রেন ভ্রমণ পছন্দ করে না এবং মজার স্মৃতি নেই এমন লোক খুব কম আছে। উল্লেখিত মেগা সিটিগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের প্রথম এবং প্রধান যানবাহন ট্রেন। তাহলে আমরা কেন এই বাহনটিকে গুরুত্ব দিচ্ছিনা।

যাও একটি মেট্রোরেল প্রকল্পের মুখ দেখেছে শুরুর আগেই প্রস্তাবিত মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় বেড়ে গেছে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার। মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হবে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১২ ইং সালের মার্চ মাসে জাপানী সাহায্য সংস্থা জাইকার সঙ্গে এ ব্যাপারে ঋণ চুক্তি করা হবে। জাইকা উক্ত প্রকল্পে ১৮০ কোটি ডলার দেবে। বাকি খরচ সরকার বহন করবে রাজস্ব খাত থেকে।

মেট্রোরেলের যে অংশটুকু বিজয় স্মরণী দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তা সংসদ ভবনের পাশ দিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পথ চুড়ান্ত করা হয়েছে। এ পথের বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও পরিবেশবাদীদের আপত্তি আছে। আর বিজয় স্মরণীর পাশ দিয়ে পথ নেওয়ার আপত্তি ছিল বিমান বাহিনীর।

উত্তরা থেকে মেট্রোরেল পল্লবী, বিজয় স্মরণী, ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্তর, প্রেসক্লাব হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে। প্রথমে দোয়েল চত্তর থেকে বঙ্গবাজার, গুলিস্তান হয়ে সায়েদাবাদ যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী উড়াল সড়কের কারণে পথ পরিবর্তন করা হয়। এর পর বিমান বাহিনীর আপত্তির কারণে বিজয় স্মরণীর পথ পরিবর্তন করতে হয়।

সার্বিক বিবেচনায় বিজয় স্মরণী দিয়ে মেট্রোরেলের পথ সবচেয়ে উপযুক্ত ছিল। জাইকার সমীক্ষায় বলা হয়েছে মেট্রোরেল নির্মাণের পর এর মাধ্যমে ঘন্টায় গড়ে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। ২০ কিলোমিটার পথে ১৬টি ষ্টেশন থাকবে।

জাইকা সুত্র মতে ঠিক করা পথে মেট্রোরেল হলে সংসদ এলাকার ৫৫ মিটার ভেতরেও ঢুকতে হবে। সে ক্ষেত্রে লম্বালম্বি এ ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। আর সংসদ ভবনের জমি বাঁচাতে গেলে খামার বাড়ির ১২তলা তিনটি ভবন, ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ভাঙ্গা পড়তে পারে।

পরিশেষে বলা যায় গ্যাস চেম্বার হিসাবে পরিচিত মেক্সিকোর পরের অবস্থানে ঢাকা। গত সরকারের সময়ে যানবাহনগুলো সিএনজিতে রূপান্তর ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর কারণে মানুষ হাপানি সহ নানা শ্বাসকষ্ট থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ও আমরা আশা করবো অনেক চড়াই উৎরাই পার করে দেশবাসী সহ ঢাকাবাসীর প্রাণের দাবী মেট্রোরেলের কাজ সম্পন্ন হবে। যা যানজট নিরসনে হবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।