আজ বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 12 June 2012, 08:55 AM
Updated : 12 June 2012, 08:55 AM

২০০১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বে শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য "মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার; আসুন শিশুশ্রম নিরসন করি"। আন্তর্জাতিক তথ্যমতে বাংলাদেশে আনুমানিক ৮০ লক্ষাধিক শিশুশ্রমিক-এর মধ্যে ১৬ লাখেরও অধিক শিশু বহুবিধ ঝুঁকিময় কাজ করেই জীবন চালায়। গৃহকর্মী থেকে বিভিন্ন কলকারখানা-গার্মেন্টস-বিড়ি ফ্যাক্টরী আর ইটভাঁটায় শিশুরা অমানবিক শ্রম দিচ্ছে। তাদের বয়স কমের অজুহাতে বেতন কম দেয়ার প্রথা এদেশে। শুধু তা-ই না, শিশুরা মালিকদের হাতে অনেক নির্যাতনেরও শিকার হয়। গৃহকর্মী শিশুর 'পরে প্রায়-প্রায়ই অনেক নির্মম অত্যাচার-এর ঘটনা আমরা জানতে পাই পত্রিকাপাঠে / টিভি সংবাদে। এইসব ঘটনার শিকার শিশুরা অনেকে মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ে। এবার এমনও ঘটেছে মৃত শিশুকে অন্য কোথাও ফেলে দেয়া হয়েছে। খুব মর্মপীড়াদায়ক হলেও সত্য যে এদেশের আর্থসামাজিক বৈষম্যগত অবস্থানের কারণেই শিশুর পারিবারিক বলয়ে হেসেখেলে-বেড়িয়ে পাঠের বয়সটিতে তারা এভাবে শ্রমজীবী শিশুতে পরিণত হওয়া কেবল নয় নির্মম অমানবিক জীবন নির্বাহিত করতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা যদিও নিজেকে সচেতন নাগরিক ভাবতে ভালোবাসি, আদতে সেটি সত্য নয় বলেই মনে করি। আমরা যদি প্রত্যেকে আমারই বাড়িতে নিয়োজিত শিশুর দিকে হার্দিক হাত বাড়িয়ে তাকে আমার শিশুটির মতোই ভেবে পুষ্টিকর আহার-শিক্ষার সুযোগটুকু দিই তাতে কি খুব আর্থিক সঙ্কটে পড়বো, না কি তাতে আমার নিজের শিশুর ভাগে কম পড়বে, না কি সমাজিক প্রথা লঙ্ঘিত হয় ভেবেই তা করা উচিত নয় এমন এক খোঁড়া যুক্তির মধ্যে সন্তুষ্টিলাভ করে চরম অসচেতন-অমানবিক সামাজিক মানুষ হই! আমার মাথানত হয়ে যায় এমন সামাজিক লেবাস সাঁটা মানুষ পরিচয়ের অবস্থানে!

এমন দিনে একটি শুভ সংবাদ এই যে সরকার সুদীর্ঘকাল পরে হলেও এদেশের অসংখ্য শ্রমজীবী শিশুর প্রতি দায়বদ্ধতা অনুধাবন করেই আজ "জাতীয় শিশুশ্রমনীতি নিরসন ২০১০" এর চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে। অচিরেই এই নীতির আলোকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর ক্ষেত্রে করণীয় কাজটি পরিচালিত হবে। তা যেন শিশুদের যথার্থভাবে দিকনির্দেশনার কাজ করে তাদের বিকশিত হবার পথ করে দেয়। এবঙ আমরাও যেন আজ থেকেই নতুন শপথে উজ্জীবীত হই যে আমাদের চারপাশের শ্রমজীবী শিশুর জন্য আমরা আমাদের মধ্যযুগীয় আচরণ-দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন এনে সমাজটাকে নতুন পথে এগুতে সহায়ক ভূমিকা নেবো। প্রতিটি বাড়ি থেকে আজই শুরু হোক শিশু গৃহকর্মীর দিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তাকেও মানুষ ভাবার … তার প্রতি মমত্ব অনুভব-এর নতুন চেতনায় শপথ-এর যে তারও আছে আমার শিশুটির মতোই আনন্দজীবনের অধিকার … এই শপথ আজ আমার, আপনার, সবার হোক।

১২ জুন ২০১২ ইং