আজ কি অজস্র মেঘবিন্দুরা কাগজের ডানা হবে…

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 19 June 2012, 11:16 AM
Updated : 19 June 2012, 11:16 AM

অাষাঢ় মানেই সঘন মেঘ অঝোরে ঝরে পড়ার রূপালি জলের গান। যখন অাষাঢ় তখন চারপাশ সে এক থৈথৈ অথই অাকাশতলে ভেসে যাওয়া বাংলার গ্রাম-নদী-নালা-শহর-গঞ্জ। লোকজনের জলকাদা পেরিয়ে হাট-বাজার-অফিস-অাদালত-ইস্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা – সে বড়ো ভোগান্তির। অথচ, অাষাঢ়প্রিয় কবিদের কবিতা পাঠে সেসব নেই। অাষাঢ় বাংলার কবিকূলের প্রিয় অানন্দচিত্রঘন চিত্রকলাময় কবিতাভর্তি মাস।

এ বছর আষাঢ় আসামাত্র ঢাকার আকাশ জুড়েই মেঘ। প্রথম দিনেই ধূলিধূসর চারপাশ এক পশলা বারিধারায় ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। অতঃপর কখনও শুধুই মেঘাকাশ। আবার কখনও যান্ত্রিকতায় বেশ একটা অন্যরকম স্বস্তির ভেজা হাত কপালে রাখার মতোই অনুভূতি ছড়িয়ে যাচ্ছে। যদিও চারপাশেই বিস্তর অনাকাঙ্ক্ষিত-অস্বস্তিকর যত তমসাভর্তি গুমোটবার্তা .. তা থেকে খানিকটা দূরে সরে বসার নিমিত্তেই যেন বা এসেছে সে এমন মেঘবার্তা নিয়ে ! মনের মাঝে গুনগুনাচ্ছে বাদল দিনের প্রিয় গানের কলি ..

"আজি ঝরো-ঝরো বাদল মুখর দিনে .."!

অঝোর ধারা না হোক অন্ততঃ ভিজে যাওয়া নাক্ষত্রিক হাতছানিটি হয়েই না হয় গানখানি বাজুক .. এই ভেবেই আজ আমার শব্দাকাশে জ্বলছে ঝরো-ঝরো মেঘবিন্দুরা .. যেন কোনও এক সুদূর আগামীর হাতছানিতে খসে পড়বে তপ্ত ধরায় বিপুল তরঙ্গ রে হয়ে !

জানি, সেদিন আমি কোথাও নেই ! তো, তাতে কি ! বাদল দিনের মেঘবার্তায় ঠিক জ্বলবে কোনও-কোনও হৃদিজলে ভাবের আলোকিত কবিতা কিংবা গান। অথবা কবেকার কালিদাসের কাল হতেই ধেয়ে আসবে জখমিত যত পূর্বমেঘ-উত্তরমেঘ ! জাগাবে ভাসমান যত মনভুবনান্তের অগণিত বেদনাবিদ্ধ জ্বর-জরাক্রান্ত ঊষর হৃদয়ের মুষড়ে পড়া সুতীব্র ধূসর মেঘের দেশলাই ! যেন বা সে গানের বজ্রবিদ্যুতভর্তি চিরন্তনী ! কেবল সেতারে একটি টোকা পড়ার কাঙ্ক্ষায় অপেক্ষমান ! কি যে ব্যাঞ্জনা তার সে কেবল কালের জখমিত মেঘ-ই জানে ! কবিগুরুর গানে তারই বাণী –

"বজ্রমাণিক দিয়ে গাঁথা অাষাঢ় তোমার মালা"

জানিনা, এ আমার অন্যায় কি না .. যে আমি অযথাই ধান ভানতে শিব-এর গীত গাইছি কি না .. ! তবুও আজ রাজধানীর মেঘভর্তি চিলতে আকাশই আমায় দিয়ে এমনতর খেয়ালি-হেঁয়ালির বিদ্যুতমাখা শিখাময় গুঞ্জনাদিও খানিকটা কাব্যের মতো মায়াবী হয় কি না .. তারই প্রিটেস্ট পরীক্ষা নিয়েই ছাড়বে মনে হয় ! আমিও আদতেই বিষম মেঘাচারী ও কুনোর হদ্দ বলেই এমনটি আমার বেলায় এ যাবতকাল ফি-বর্ষায় ঘটেই যায় ! তা যাক। এই বাহুল্যময় জীবনে তারও কিছু না কিছু প্রয়োজনীয়তা অাছে। হয়তো সে খুব অগোচরেই রয়ে যায় ! বহুকালের গুঞ্জনাদি ভেদ করে হয়তো বহু বর্ষাকাল পেরিয়ে আচমকা কোনও পুরনো জঞ্জাল থেকে পাওয়া হয় সেই রূপোলি ভেজা হাতের স্পর্শের মতোন ছেঁড়া ধুলিমলিন কাগজের ডানাটি ! সে তখন বাজে ও বাজায় বর্ষাপ্রিয় হৃদয় থেকে হৃদয়ে

"আজি ঝরো-ঝরো বাদল মুখর দিনে .."!

আজকের সকল মেঘ যাক আগামীর তুমুল রূপোলি মেঘের সম্ভাবনাময় আকাশ থেকে আকাশে নিজস্ব আগুন জ্বেলে .. আমায় না চিনুক। শুধু, মহাকালের গভীর ক্রন্দন থেকে বর্ষার আগুনিয়ার বার্তাটি নিক নচিনে .. এমন ভাব এসে ভর করেছে আজ আমার মনে-মনে .. !

আষাঢ়। ১৪২১ বঙ্গাব্দ।