যার যা করণীয় সে কাজ যদি মনোযোগ দিয়েই করতো সে

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 3 July 2012, 06:47 PM
Updated : 3 July 2012, 06:47 PM

আজ ক'দিন ধরেই ভাবনা জুড়ে আছে একটি ভাবনাই, আহা, যার যা করণীয় সে কাজ যদি মনোযোগ দিয়েই করতো সে .. তবে কি আজকের জগতময় হতাশাব্যাঞ্জক খবর এত সংক্রামক ব্যাধ হয়ে মনকে ব্যাধিগ্রস্ত করতে পারতো ! না, নিশ্চয় পারতোনা। এইতো সদ্য সরকার কর্তৃক রংপুর-এর জনগণের বহুকালের আশাটি পূর্ণ হবার খবরটি জানার সঙ্গেসঙ্গেই মন রংপুরবাসির আনন্দনের অংশী হতেই মনে হলো, যাহোক, এ্যাদ্দিনে একটি যথাযোগ্য কাজের কৃতিত্বের দাবীটি অবশ্যই এ কাজে সংশ্লিষ্ট সকলের। যার মানে কিন্তু অত্যন্ত্য পরিষ্কার, এবঙ তা এই যে, কাজের প্রতি যথার্থ মনোযোগী হলেই তাতে সাফল্য আসে। এবঙ তার সুফল ভোগ করতে পায় মানুষ। অথচ মানুষ এই সহজ বিষয়টি সহজে পালন করতে না পারার ব্যার্থতা ক্রমশঃই মানুষকে পৌঁছায় হতাশার সীমায়। কেন যে মানুষ এমন সহজ বিষয়কে কঠিন করে ফেলে! হয়তো বা নিজের স্বভাব দোষেই মানুষ এমন। কিন্তু স্বভাবদোষ নিশ্চয় সারানো যায়, যদি হওয়া যায় যার যা কাজ সেই কাজের প্রতি একান্ত নিবেদিত এবঙ নিষ্ঠাবান। যা হয়তো কঠিন, তবে সেই যে কবির ভাষায় "কঠিনেরে ভালোবাসিলাম" .. তেমন ভালোবাসাই কেবল মানুষকে করতে পারে যথার্থ সাফল্য মন্ডিত। যাতে অর্জিত হয় নিজের সঙ্গে জড়িত অন্যেরও কাঙ্ক্ষিত চাওয়া পূরণ। আর এমন অর্জনের আনন্দমূল্য এতটাই বেশি যে তার কোনও পরিমাপ হয়না। আজ আমার বলবার এই যে, আমাদের অনেক মেধা সম্পদ রয়েছে, যাদের শুধু সঠিক কাজটিতে লাগানো গেলেই অর্জিত হতে পারে অমূল্য সব অর্জন। তারা স্বভাবদোষেই হউক আর সঠিক কাজের অভাবে হউক হতাশাগ্রস্থ যাতে না হয় সেই দায়িত্ব যতখানি রাষ্ট্রের ততখানি নিশ্চয় আমাদের 'পরেও। আমরাই যদি চারপাশের অসহিষ্ণুতায়, হাজার নেগেটিভ চিন্তায় পজিটিভ ধারণা উস্কে দেয়ার বদলে নেভাতে ততপর থাকি তবেতো সহজ কাজটি আর সহজ থাকেইনা। সে চলে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে যোজন দূরে .. যেন সে চীনের প্রাচীরসম অসম্ভবের পাহাড় ছোঁয়ার মতোই সুকঠিন যন্ত্রণা যার অপর নাম বেদনা। এই যন্ত্রণাদায়ক বেদনাপর্ব ঘটেই চলেছে আমাদের অনেক সাধের একটি প্রজেক্টের বেলায়। নামটি তাহার "পদ্মা"। যে পদ্মা হতে পারতো ষোল কোটির "পরাণের সেচন বাহন" সেখানে সেতু রচনা আজ "দূরের বাদ্য" হয়েই বাজছে .. আবার শোনাতেও চাইছে আশা জাগানিয়া কোনও এক নতুন সুর। যদিও ছিন্ন তারে নতুন সুরটি লাগতে চাইছেনা যেন .. তবুও আজ যদি আমরা সবাই মিলিত হই একই চাওয়ায় .. অই সুরটি নতুন করেই লাগবে নিশ্চয়। যেরকম একদা সাড়ে সাত কোটির হৃদয় হতেই উঠেছিলো একই সুর

"কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধকারে নতুন সূর্য ওঠার এইতো সময় .."।

এইভাবেই জাতিগত অর্জনে এক একটি জাতি এগিয়ে যায়। আগামী এসে নিজের হাতটি বাড়িয়ে দেয়। পুরনো তার কাজের সূত্রটি ধরিয়ে দেয় নতুন হাতে। নতুন মনোযোগ পেলেই সে তরতরিয়ে বাড়ে। নচেত ছিন্ন পাতার তরণী হয়েই ভেসে যায় দূর থেকে দূরে। দূরের বাদ্যটুকুও শোনাই যায়না তখন। এই দেশে আজ এটি-ই প্রায় রেওয়াজ বলা যায়। পুরনো পরিকল্পনার পরী উড়ে যায় নতুন-এর দাপটে। পড়ে থাকা কল্পনা জুড়ে সিলমোহর সেঁটে দিয়েই চিরতরে ঝেঁটিয়ে বিদায় পর্বটি ক্লোজ করার মতো ঘটনা জন্ম নেয়। ক্লোজ-আপ হাসির মহড়া চলতে থাকে .. জনগণের কিন্তু হাসি পায়না আর। এভাবে সাধের আশায় সিলমোহর পড়ায় স্বপ্নভঙ্গের বেদনা আর ঊর্ধ্বগতির বিশ্ব-বাজারের আগুনে হতভাগ্য জনগণের তখন মরণদশা। রামগরুড়ের ছানার মতোই হাসতে তাদের মানা যেন। কেননা হাসি তখন কেবলই বেদনা জাগানিয়া যন্ত্রণাকর সব ঘটনা।

এইসব বস্তাপচা ঘটনা দেখিতে চাইনা আর। চাই নতুন করে কি করে শুরু সম্ভব নতুনের সঠিক সেতুবন্ধ তারই জন্য নতুন ডাক আসুক আর ডাক শুনেই নতুন উদ্যোমে আজই শুরু হউক আমাদের নিজস্ব জাতিগত মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ। এইদেশে মেধার ঘাটতি নিশ্চয় নেই। প্রয়োজন কেবল একটি ডাক-এর .. এবঙ জাতি সেই ডাকের অপেক্ষায় .. রাষ্টের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থেকে সেই ডাকটি পেলে মেধাবী স্বপ্নবান তারুণ্য নিশ্চয় ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের মেধাশক্তি দিয়েই দেশকে এগিয়ে নেবে। কোনও পরাশক্তির দুয়ারে ধর্ণা ধরতে হবেনা বাংলাদেশকে আর। এর বেশি বলার নেই আজ।