বিশ্বময় দিবস-এর হুজুগে বন্ধু দিবস যেন শুধুই হুজুগ না, আলাদা কিছু আবেদনও জানায় বলেই মনে করি। কেননা, বন্ধু শব্দের ব্যাঞ্জনা হৃদয়ছোঁয়া। পৃথিবীতে পারিবারিক বন্ধনের পরেই বন্ধুর অাসন। ছেলেবেলা হতেই বন্ধুর হাতটি প্রিয়তায় সবার সেরা। মায়ের কাছে / বাবার কাছে যে কথা হয়তো হয়না বলা – সে কথা দিব্যি বন্ধুকে বলা সহজ। বন্ধুকে হৃদয় খুলে না বলা কথাটি বলাই যায়।
এই যে বন্ধুকে পরম ভাবা তারও কিন্তু অনেক কারণ রয়েছে। একজন প্রকৃত বন্ধু পাওয়া জীবনে অনেক বড় পাওয়া। বন্ধুর বিপদে-অাপদে বন্ধু এগিয়ে অাসে সবার অাগে। যদি সে প্রকৃত বন্ধুই হয়। তাইতো প্রচলিত প্রবাদ –
“বিপদে বন্ধুর পরিচয়”
– সত্যিই তাই।
যদিও আজকের বিষম ধান্দাবাজ সময়ে অমল বন্ধুতা অনেক-ই জটিলতাময়। অনাকাঙ্ক্ষিত কত যে ঘটনা জন্ম দিয়েই যাচ্ছে ! যা শিশুমনে বন্ধুর ইমেজটি খানিক কলুষিত করছে। এ থেকে শিশুকে বাঁচানোর উপায় খোঁজা উচিত আজ সমাজে বিদ্বজনদের। আমরা রোজই খবরে বন্ধু-বন্ধুর সঙ্গে অন্যায় ঘটনার বহুবিধ ছবি দেখি আর সামান্য মতান্তর-ঈর্ষা-বিদ্বেষ-রাজনীতি ইত্যাদি কারণে খুনের বিষয়েও জানতে পাই। মনটা ভয়ানক মুষড়ে পড়ে।
আবার আমাদের কালের এবঙ বর্তমানের ছেলেমেয়েদের অনেক নির্মল বন্ধুতা একদম যে নেই তা কিন্তু মোটেও সত্য নয়। আজও বন্ধুতার প্রবল সহজিয়া একটি উচ্ছ্বল-উজ্জ্বল রূপ চারপাশের বাতাসকে নির্মল করে অনেকখানি। তখন চিত্রটি মুহূর্তেই বিষন্ন / ভারাক্রান্ত কারও হৃদয়কে বন্ধুর দিকে ফিরিয়ে অানন্দদিনে ফিরিয়ে নেয়। তখন সে হয় অানন্দেরই অপর উৎসধারা। এরকম যখন দেখি – তখন ফিরে পাই যেন বা নিজেরই বন্ধুতা-সখ্যতার অমল দিনগুলি। বিষম মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলার বন্ধুদের … মনের মাঝে আপনা হতেই গুনগুনানি বাজে মান্না দে গীত দারুণ প্রিয় এবঙ সুবিখ্যাত সেই সে গানের অসাধারণ সুরবাণী –
“কফি হাউজের সেই
আড্ডাটা আজ আর নেই …
আজ আর নেই …
কোথায় হারিয়ে গেলো
সোনালি বিকেলগুলো সেই …
অাজ অার নেই … ”
বিশ্বের সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুরা অবকাশে তুমুল আড্ডায় মাতামাতির ছবিগুলো আমায় মুগ্ধতায় আবিষ্ট করে। আমার বিবাহিত জীবনে দেখেছি আমার স্বামীর বন্ধুরা বেশ আড্ডাবাজিতে মেতে উঠতে ভালোবাসতেন। আমার খুব ভালো লাগতো। তখন তাদের প্রিয় ঐতিহ্যবাহী কলেজ ‘চট্টগ্রাম কলেজ’-এর পূণর্মিলনী-উতসবে আমিও গেছি স্বামীর সঙ্গে। জমজমাট অনুষ্ঠান-স্মৃতিচারণা উপভোগ করেছি যার নাম ‘আজিকে এ আকাশতলে’।
আমি আদতে খুব স্মৃতিতাড়িত মানুষ বলেই হয়তো আমায় এই বিষয়গুলো টানে … যেখানে যখনই এমন হৃতদিন-এর বিষয় পাই – নিজেও তার ভিতর আশ্চর্য অতীত ফিরে পাই। আমার স্বরচিত পঙক্তি মনে অাসছে – অাজকের কালের বিবর্তনে প্রযোজ্য হয়তো – ভেবেই দিচ্ছি –
শিরোনাম –
হৃদয়ে কালের বাজনা
– নুরুন্নাহার শিরীন
****************
তাইতো জ্বলতে আসি শ্যামছায়াতলে –
তাইতো বলতে আসি বহু হৃদিজলে –
এ কি সেই শান্ত গ্রামগুলি?
এ কি সেই সাধারণ পথ?
এ পথেই হেঁটে গেছি আগে?
এরকম-ই ছিলো বুঝি দেশ?
তখন যে শিশুরঙে মাঠগুলি আলো
তখন যে বন্ধুতায় হাঁটতেই সুখ –
তখন দেশের নামে হৃদয়ে অমল ঢেউ –
তখন আমরা গ্রামসুখী সাধারণ খুব।
আজ আমাদের অন্ধকার পাড়ি।
আজকের ঢেউগুলি অপয়ার ধাড়ি।
আজ যত চাই অমলের মাঠ –
আজ আলোগুলি জ্যোতস্নার লাশ।
তবু কোথাও হৃদয়চেরা ডাক দিলে পাখি –
জেগে ওঠে দগ্ধ নদ-নদী …
জ্যোতস্নার নতনীল জটিল কান্নায় –
ভিজে যায় বাংলার মাটি।
হ্যাঁ, সত্যি, আজও শ্রাবনমাখা বাংলাদেশের আকাশতলে খুঁজে বেড়াই অমলিন দিন … মনেমনে প্রার্থনা করি সকল বয়সে বন্ধুরা যে যেখানে থাক – বন্ধুরা সবাই অনেক ভালো থাক। বন্ধুরা অনেক আনন্দে থাক। কারও যেন কোনওদিন মনভাঙা / হৃদয়ভাঙা খবর না অাসে। অাজকের শুভকামনা এই।
১৪২১ বঙ্গাব্দ।।
ঢাকা। বাংলাদেশ।
৫ অগাস্ট ২০১২ ইং
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ এর ব্লগ বলেছেনঃ
তখন যে শিশুরঙে মাঠগুলি আলো –
তখন যে বন্ধুতায় হাঁটতেই সুখ –
তখন দেশের নামে হৃদয়ে অমল ঢেউ –
তখন আমরা গ্রামসুখী সাধারণ খুব।
ভাল লাগলো। অসাধারণ এ পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ আপু।
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, এত সুন্দর মন্তব্য করলে ভাই, অনেক শুভাশিষ।
পাগল মন বলেছেনঃ
আপু আমিও কিন্তু চট্টগ্রাম কলেজ এর ছাত্র। বন্ধুত্ব তো হয়েই গেল। খুব সুন্দর লিখেছেন।
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
পাগল মন, ওহ তুমিতো তাহলে আমার শ্বশুরবাড়ির বন্ধু, আমার স্বামী-ননদ-দেবর সবাই চট্টগ্রাম কলেজ-এর, আমি না, আমারতো কুমিল্লায় পড়াশোনা। অনেক শুভাশিষ।
হৃদয়ে বাংলাদেশ বলেছেনঃ
বোন শিরীন, “হাত বাড়ালেই বন্ধু, পা বাড়ালেই রাস্তা”
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
জ্বী বড়ভাই, যদি বাড়ালেই বন্ধুতা হয় প্রকৃত বন্ধুর আপদে-বিপদে-সুখে ও বেদনায় তবে রাস্তায় হাঁটতেও আনন্দ … তাইনা ? ভালো থাকুন।
সুলতান মির্জা বলেছেনঃ
আপু,
আমি আমার বন্ধু গুলো নিয়ে খুব গর্ব বোধ করি সবসময়। সেই ছোট বেলা এখনো পর্যন্ত আমার কোনও বন্ধু হাত ছাড়া হয়নি। আর ওদের বাসার খালাম্মা, ভাবীরা, আপু, ভাইয়ারা নিজেদের পরিবারের সদস্য এখনো আমাকে মনে করে। যাই হোক, এই সম্পর্ক মনে হয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শেষ হবে না।
সর্বোপরি আমি মনে করি একজন ভাল বন্ধু আপন ভাইয়ের চেয়ে ও বেশি আপন হয়।
ধন্যবাদ আপু বন্ধু দিবসে এত সুন্দর একটি পোস্ট দেওয়ার জন্য। ভাল লাগলো। ভাল থাকবেন।
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
সুলতান মির্জা, তোমার বন্ধুরা তোমার সঙ্গে থাকুক আজীবন, প্রকৃত বন্ধুতার কোনও তুল্য হয়না। শুভাশিষ।
জিনিয়া বলেছেনঃ
মানুষ বন্ধুদের জন্য আমার ও সেই একি প্রত্যাশা..আর আমার প্রিয় বই বন্ধুদের জন্য শুধুই প্রত্যশাহীন ভালোবাসা.।
ভাল থেকো..অনেক অনেক শুভকামনা।
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
জিনিয়া, হ্যাঁ, প্রত্যাশাহীন ভালোবাসাইতো প্রকৃত বন্ধুতা … বন্ধুরা ভালো থাক, অনেক আনন্দনে থাক … এ চাওয়ায় কোনও শর্তারোপের প্রশ্ন নেই, তাইনা? তুমি তোমার স্বামী-জাইম সহ অনেক ভালো থেকো, তোমার জন্য হার্দিক শুভাশিষ এই।
মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেছেনঃ
দিদি চমৎকার লেখা।বন্ধু দিবস শুভ হোক।
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
মশিউর, শুভ হউক সব … তুমি যে ভাই চমতকার লাগার কথা বললে সে আমার অনেক পাওয়া … শুভেচ্ছা।
মুজিব rahman বলেছেনঃ
আমিও চিটাগং কলেজ থেকে:)
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
ভাই মুজিব, অনেক শুভেচ্ছা।
নীলকন্ঠ জয় বলেছেনঃ
বন্ধু কি-
তা আমি জানি না,
বন্ধুত্ব কি-
আমি বুঝি না।
তবুও ভাবি বন্ধুত্ব নিয়ে…………
সেখানেই তো-
সুখ-দুঃখ সব এক হয়ে যাই
তারি ছোঁওয়া-
কষ্টগুলো হয়ে যায় মলিন
আনন্দগুলো তারি আকাশে ছড়িয়ে যায়
বন্ধুত্বই তো-রংধনুর মত রঙ ছরায়
সারাটা জীবন।
(আপু,আপনার লেখাটি আমাকে আমার হারিয়ে যাওয়া কিছু বন্ধুর কথা মনে করিয়ে দিল।অসাধারণ লেখা।) 😆
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
নীলকন্ঠ জয়, অনেক ভালো লাগলো ভাই তোমার কাব্য, তোমার মন্তব্য। অনেক শুভাশিষ।
নীলকন্ঠ জয় বলেছেনঃ
ধন্যবাদ নুরুন্নাহার শিরীন আপু।