শারদীয়া পূজা ও ঈদ-উল-আজহা উদযাপন এবঙ ছুটি আনন্দময় হোক

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 22 Oct 2012, 09:55 AM
Updated : 22 Oct 2012, 09:55 AM

এবারের পূজা ও ঈদ-উল-আজহা প্রায় একই সময়ে পড়েছে বলে ছুটির বাড়িযাত্রা অনেক আগেই চলছে। রাজধানী ঢাকাও ফাঁকা ক্রমেই। চারপাশ হতেই ক্যামন আনন্দ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। একদিকে পূজার আয়োজন। অপর দিকে আসন্ন ঈদের প্রস্তুতি। বড়ো ভালোলাগায় ভর্তি। যদিও জগতের অনেক আশঙ্কা-অশনিময়তাও কিছুমাত্র কমেনি। তবু পার্বন বলে কথা। সেক্ষেত্রে আনন্দের কমতি নেই কোনও। হাজারও সমস্যা-সঙ্কট নিয়েই পালা-পার্বনে মানুষের আনন্দমুখ দেখতে আনন্দযাত্রা দেখতেও বড়োই সুখ। সেখানে যেন হঠাত বিপদ-আপদ হাজির না হয় এই প্রার্থনা। প্রতি বছর পূজা কি ঈদের ছুটিতে এদেশে বাস-ট্রেন-লঞ্চের টিকিটের কালোবাজারি আর লক্ষর-ঝক্কর লঞ্চ-বাসের গায়ে রঙের চড়া প্রলেপ চড়িয়ে উপচে পড়া যাত্রীবোঝাই যাত্রাদৃশ্যে মনটা আশঙ্কায় কেঁপেই ওঠে। বাসের ছাতে ট্রেনের ছাতে ওঠায় নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেই মানুষ ওঠে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও অনেক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করাটি জরুরী। যাতে আনন্দযাত্রা বিসর্জনের বেদনাযাত্রা না হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষ সজাগ থাকলেই মানুষ নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছুবে এবঙ প্রিয়-পরিজন-এর সান্নিধ্যে আনন্দঘন ছুটির দিন কাটিয়ে আবার রাজধানীতে যানজট বাড়িয়ে কর্মব্যস্ততায় জড়িয়ে যাবে।

এইতো জীবনের একটি বাস্তবতা। জটিল-কঠিন-ছুটন্ত এক জীবনে বছরে মাত্রই দুটো সুযোগ আসে। একটুখানি দীর্ঘ ছুটির ফুরসতে বাড়ির সবুজ ছাওয়া শান্ত-সহজ বাতাস খাওয়া প্রাণ জুড়ানো কয়েকটি দিনের মধুরতম স্মৃতির রেশ ধরেই আবার কাটিয়ে দেয়া অনেক মাস অনেক কঠিনের আবর্তে। এইতো জীবন। বৃত্তবন্দী জীবন। তার মধ্যেই আবার কত কি আচমকা উটকো হামলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত-অযাচিত হুমকি। কত কি অসুখ। কত মৃত্যুর পরোয়ানা। কত যে আচাভুয়া আশ্চর্য অভিজ্ঞাও। সমস্ত নিয়েই আমরা তবুও স্বপ্নের দিকে এগুতে চাই। যে স্বপ্ন সততঃ মধুর। মনে পড়ছে একসময় আমিও সপরিবারে ছুটেছি ঈদে বাড়ির পথে। এখন পথের ধকল সইতে পারিনা বলে ঢাকায় ঈদ করতে হয় বাধ্য হয়েই। অথচ তবুও মন ছুটন্ত বাড়ির পানেই। আহ কত না মধুর আনন্দ স্মৃতি। কত না নির্মল পারস্পরিক শ্রদ্ধা-স্নেহের সম্পর্কের বন্ধন। আজ হয়তো বহুবিধ যান্ত্রিকতায় খানিকটা দূরত্ব খানিকটা জটিলতার চক্রে পড়েই কারও-কারও ক্ষেত্রে যেন বা –

" রেললাইন বহে সমান্তরাল …"

অন্তরাল রচেছে, তবু, অম্লমধুর সম্পর্কটিও জিইয়ে রাখা সম্ভব আন্তরিক ইচ্ছের জোরে। তখন হয়তো আবার বহু ভাঙন জর্জরিত সংসারেও নতুন করেই আনন্দজোয়ার বইবে। এমনতো ঘটেই আকছার আমাদেরই চারপাশে। আমার বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি যাত্রায় এমন-ই শতেক অভিজ্ঞার বিষয় যদি লিখতে যাই মহাভারত হবে। তারচে' ছুটির কথাই বলি – তখন ঈদে বাড়িযাত্রায় আনন্দের সঙ্গেই অনেক তিক্ত বিষয় এসে যেতোই। তার-ই একটি অন্যতম বিষয় দীর্ঘ জগাখুচুড়ি পাকানো বিশাল যানজট। যেন বা জানজট ! সুদীর্ঘ জানজটের কবলে ভোগান্তি যে কত প্রকার ! অসহ্য-বিরক্তিকর দীর্ঘপাড়ি। বিশেষ করে ঈদ-উল-আজহা পালনের কারণে বাড়িযাত্রা বড়োই তিতিবিরক্তির চরম হয়ে উঠতো ট্রাকভর্তি গরুছাগল-এর প্রাণান্ত টানাহেঁচড়ার পেছনে আট-দশ ঘন্টাও পড়ে থাকার অভিজ্ঞা বিস্তর। এমনও হয়েছে, ভোর বেলার যাত্রা মধ্যরাত্রির শেষে ঠেকেছে। কিন্তু তারপরেও বাড়ি পৌঁছার সঙ্গেসঙ্গেই বাড়ির লোকজনের আন্তরিক আদর-আপ্যায়নে মুহূর্তে দীর্ঘ পথযাত্রার সকল ধকল মুহূর্তেই উধাও। বিধ্বস্ততা সুদ্ধোই গালগল্পে-আনন্দে মেতে ওঠার মধুরতম স্মৃতিরা ভিড় করছে … আহ কত না মধুর প্রহর …অবিকল কবির গানের ভাষায় যেন কথা কইছে –

" মধুর তোমার শেষ যে না পাই …"

স্মৃতি সততঃই মধুর। এই সত্যটি হৃদয় দিয়েই অনুভব করছি বারংবার। বারংবার পূজা ও ঈদ-এর ছুটির বহুল আনন্দ-সমারোহময় স্মৃতির প্রতি অসীম আকুলতা নিয়েই বলি –

পূজার সমারোহময় ঢাকের বাদ্য এবঙ ঈদ-উল-আজহা যেন আবহমানতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রচে এদেশে। দুর্গতিনাশিনী দশহাতে এদেশ হতে সকল দুর্গতি বিনাশ সাধনে সফল হোক। অর্থাৎ মনের সকল গ্লানি বিসর্জনের মধ্য দিয়েই জেগে উঠুক নতুন আলোর ভোর।

একইসঙ্গে ঈদ-উল-আজহা হতে প্রকৃত আত্মত্যাগের শিক্ষাটি যেন অর্জন করে মুসলমান প্রত্যেক মানুষ। সামর্থবান মানুষ যেন চড়ামূল্যের পশুক্রয়ের প্রতিযোগীতা প্রদর্শন না করে। এবঙ ক্ষমতা জাহিরের বদলে নিজের একটি সেরা অর্জন-এর অংশীদার করে আশপাশের বঞ্চিত মানুষদের। ঈদ-উল-আজহা কিন্তু পোশাক কেনাকাটার ধুমের জন্য না, আত্মত্যাগের জন্য। মুসলমান এইটুকু হৃদয়ঙ্গম করতে পারলেই জগত হতে মুসলমানের উগ্র ইমেজ বদলে দেওয়া কঠিন না।

আমার আজকের হার্দিক চাওয়াটি কেবল এই। এবঙ এইখানে সে চাওয়াটি শেয়ার করছি এই ভেবেই যে নিশ্চয় এখানে আমরা মনের চাওয়ার শেয়ার করতেই লিখছি। আরও একটি জরুরী বিষয় –

কুরবানীর বর্জ্যে চারপাশের পরিবেশ দূষিত যাতে না হয় এই বিষয়ে সবার সচেতনতা পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখুক এমন একটি আবেদনও রাখলাম।

এবঙ চাই যে ছুটির আনন্দন ছড়িয়ে পড়ুক সবার মনে …এবঙ সবখানে। পূজার শুভেচ্ছার সঙ্গেই ঈদ-উল-আজহার শুভেচ্ছা জানাই সকল বন্ধু-স্বজন-পাঠক-ব্লগার ভাইবোনকে। সকলের জীবন সুন্দর আনন্দময় হোক। সকল অসুন্দরের বিনাশ হোক।

২২ অক্টোবর ২০১২ ইং