ডিজিটাল দুনিয়া আজ গ্রামগঞ্জেও পল্লবিত যথেষ্ট

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 5 Nov 2012, 05:47 AM
Updated : 5 Nov 2012, 05:47 AM

একসময় এই চিত্রটি কল্পনাও কঠিন ছিলো এদেশে। অথচ এখন বেশ কমন চিত্র বলাই যায়। অর্থাৎ ডিজিটাল দুনিয়া আমাদের বাংলাদেশে আজ ক্রমেই হাতের নাগালে এসে পৌঁচেছে। কিছুকাল আগেও ছিলো ধরাছোঁয়ার বাইরেই। গ্রামগঞ্জের স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা উপকরণ ডিজিটালি ডাউনলোড করে পড়ছে। এ যদি না ডিজিটাল অগ্রগতির চিত্র হয় – তো, অগ্রগতি কাহাকে বলে ? প্রশ্নটি অস্বাভাবিক কি ? বাংলাদেশের হাজার সমস্যার মাঝেও এই অগ্রগতির কথা অস্বীকারের মানে সত্যকে অস্বীকার করার মতো।

কয়েক মাস আগেই চট্টগ্রামে আমার শ্বশুরবাড়ি পটিয়া গেছি, সেখানে পড়শী আত্মীয় একজন স্কুল শিক্ষিকা (বেবী), তার বাড়িতে দেখা করতে গেছি, সে তার ল্যাপটপে ছেলের সঙ্গে আলাপরত, আমি যথেষ্ট অবাক হয়েছি। ভালো লেগেছে তারও অনেক বেশি। আশির দশকে পটিয়াবাসি টিভি দেখতে পেতোনা তেমন ভালো। গুটিকয়েক ঘরে যাওবা টিভি এসেছে, কিন্তু লো-ভোল্টেজের জন্য দেখাই যেতোনা বিটিভি। তখনতো কেবল বিটিভি-ই বাংলাদেশের একমাত্র চ্যানেল। আজ সেখানে অগণিত নিত্যনতুন চ্যানেলের জোয়ার প্রায়। কেবল সংযোগ নিলেই সব চ্যানেল ঘরে হাজির। শুধু রিমোট টিপে যা খুশি দ্যাখো। কোথাও নাই কোনও মানা। এ যদি ডিজিটাল অগ্রগতির নমুনা না হয়, তবে কাহাকে অগ্রগতি বলবো ? একি তাহলে ডিজিটালি স্যাটেলাইট দুনিয়া দ্যাখাই নয় ?

এবঙ মোবাইল দুনিয়া ? সেই ক্ষেত্রটিতে কি রীতিমতো বিপ্লব ঘটে যায়নি ? গ্রামগঞ্জের মা-মেয়ে-বধূরা দিব্যি এসএমএস পড়ছে, জবাব পাঠাচ্ছে, একি অভাবনীয় সফলতা নয় ডিজিটাল বাংলাদেশে ? এই কৃতিত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি প্রাপ্য না হন, কৃতিত্ব তবে কাহার প্রাপ্য ? মধ্যরাত্রির টক-শোতে চ্যানেল জুড়েই যাহারা গলাবাজি-গালিবাজি চালান, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রসিকতা করেই গলাকাটা যদিও বলেছেন, তবুও কিন্তু টক-শো বন্ধের কথাটি বলেন নি। অবাধে টক-শো চলছে ডিজিটালি দেখছে দুনিয়ার এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তবাসি সকলেই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড। এ যদি ডিজিটাল স্বাধীনতাভোগের অবাধ অধিকার না হয়, অধীনতা তবে কাহারে কয় ? প্রশ্নটি ওঠেনা কি ?

আজ যে মুহূর্তেই সর্বশেষ লেটেস্ট সংবাদ শিরোনাম মোবাইলেই চাইলেই পাওয়া সম্ভব বাংলাদেশে, কিছুকাল আগেও সেটি অসম্ভবের বিষয়ই ছিলো। এ আমাদের ডিজিটাল উন্নয়নের প্রযুক্তি নিশ্চয়। এর কল্যানে আমাদের জনজীবন সহজ যেমন হয়েছে, আবার এর অপব্যবহারের ফলে অপরাধও অনেক বেড়েছে। কিন্তু, অপরাধের বিষয়ে সজাগ-সচেতন থাকলে এবঙ অপরাধীর জন্য কঠোর শাস্তিবিধান হলেই অপরাধচক্র দুর্বল হয়ে আসবে। নেগেটিভ চিন্তার চেয়ে পজিটিভলি কাজ করলে তার সুফল অবশ্যই পাওয়া যাবে। এবঙ এই কাজটি এখন জরুরী ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বার্থেই। আর স্বার্থটি আমাদের সবার মঙ্গলের জন্যই।

এই যে আমিও মধ্যরাত্রিতে ডিজিটালি লিখছি সে আমার অবাধ স্বাধীনতার অবাধ অধিকার বলেই মানছি, কৃতজ্ঞতাও অনুভব করছি। এই অনুভবটি ছাড়া আমার আমি নিজের কাছে ছোটই হই নিশ্চয়। সে আমার কিছুতে করা সম্ভব নয়। যাহারা করে তাহারা ক্যামন মানুষ ? তাহারা কি জাত ? সেইক্ষেত্রে প্রযোজ্য এই বাক্যটি – আসলে তাহারা বড় নয় মোটেই, কেবল বড়-র মতো দেখায় ……….আমার এমন মনে হয়। যাহোক, হক কথাটি এই যে – আমরা কিন্তু অনেক দূর অগ্রসরমানতার দিকেই আজ অনেক সহজসাধ্য অন্তর্জালের ডিজিটাল জগতে ……….যার সঠিক ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত। অপব্যবহারে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কুফল বয়ে আনবে। অতএব অন্তর্জালের ডিজিটাল ভুবন হতে সঠিক মাত্রায় সুফল পেতে চাইলে তার কুফল সম্পর্কে জানতে হবে। তবেই সচেতনতাবোধ সম্পন্ন মানুষের হাতেই বিকশিত হয়েই চলবে সাফল্যময় ডিজিটাল দুনিয়া। সাফল্য মানেই সুফল। আমাদের বাংলাদেশ হয়ে উঠুক একটি অপ্রতিরোধ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমার আজকের চাওয়া এই।

৫ নভেম্বর ২০১২ ইং