যে করেই হোক যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির জন্য মরিয়া জামায়াত-পাকিপ্রেমীরা

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 10 Nov 2012, 02:52 PM
Updated : 10 Nov 2012, 02:52 PM

বাংলাদেশে আজ অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে চলার পরামর্শ দিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানী। তাঁর কথাটি একমাত্র পাকিপ্রেমীরা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী অগণিত দেশপ্রেমিক বাংলাদেশির প্রাণে রক্তক্ষরণ জাগানিয়া। মহান একাত্তুরের জ্বলন্ত মার্চ জ্বলন্ত মাতৃভূমির মুখ ভোলা কি কিছুতে সম্ভব ??? এগিয়ে যাবার ছলে আমরা আমাদের রক্তাক্ত সংগ্রামী ঐতিহাসিক সত্য পদদলিত করে কি করে হাত মেলাবো তাঁর সঙ্গে ? পাকিপ্রেমীরা অবশ্য অপেক্ষমান – তাঁর বাড়িয়ে দেয়া হাতটি ধরে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির জন্য মরিয়া লড়াইয়ে জামায়াতের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যেই – সন্দেহ নাই। কারণ তারাতো "আমরা ভাইভাই" সূত্রেই সেই পুরনো শকুণের দলের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সাথী – শয়তানের দল। তারাতো সেই পুরনো দোসর পাকিস্তানের। কিন্তু আমরা আজ এমন এক কঠিন সময়ের দ্বারপ্রান্তেই পোঁছে গেছি যে – আমাদের পদস্খলন ঘটা মানেই যুদ্ধাপরাধীদের শেষের ঘন্টা বাজার আগ মুহূর্তে আবারও একটি ক্ষমার অযোগ্য ভুল করার মতো অপরাধ-ই। যে ভুলের যে অপরাধের মাশুল হিসেবে খেসারত জাতিকে দিতে হবেই তখন অনেক চড়ামূল্যে। অনেক রক্তগঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে।

একাত্তুরের পাকিদোসর হয়ে আলবদর-আলশামস-রাজাকাররা যে লোমহর্ষক তান্ডবলীলা চালিয়েছে দেশমাতৃকা সহ মুক্তিযোদ্ধা ও মানুষের উপর তা কি হাজার চেষ্টাতেও ভোলানো সম্ভব কারও কথাতেই ??? যেন বা এ কোনও ছেলেভোলানো কল্পকথা !!! যে কেউ বললেই ছেলেমেয়েরা আজন্মের অতীত – অতীতের রক্তাক্ত-জ্বলন্ত ঐতিহাসিক জন্ম ভুলেই "ভাইভাই" হবার জন্য লোভার্ত হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে গলাগলি-কোলাকুলির জন্য সমস্ত ভুলে আত্মহারা হয়েই ছুট লাগাবে !!! বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম এতটা মাথামোটা দলের সঙ্গে দৌড়ুবে বলে ভাবলে তাদের ছোটই করা হয় শুধু না, অন্যায়ও করা হয়। কেননা তারা এখন জানে ইতিহাসের প্রকৃত খলনায়কদের। তারা নিশ্চয় তাদের দলেই ভিড়বেনা জেনেশুনেই। এটি আমার নিজস্ব ধারণা নয় – এ আজ আন্তর্জাতিক অভিমতও। তাই এদেশে আজকের তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের খলনায়কদেরও চিনেই তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। কেবল জামায়াত-শিবির-বিএনপি ব্যাতীত।

আমি কোনও বানোয়াট কাহিনী নিয়ে আসিনি। এসবই বর্তমানের জাজ্জ্বল্যমান একটি সত্যচিত্র। যাদের দ্বিমত রয়েছে তারা হয়তো বিস্তর সচিত্র প্রতিবেদনের তথ্যাদি নিয়ে একই কায়দায় মন্তব্য দিতে হাজির হবেন। সেতো মিডিয়া জুড়েই দেখছি। মধ্যরাত্তিরের টক-শো জুড়ে গলাবাজির সঙ্গে অসত্য অসততার সে এক যন্ত্রোণাদায়ক পর্ব। এই যে এইসব লিখছি – সে নিয়েও হয়তো আরেক ওয়াজ-নসিহত শুরুর যন্ত্রণাদায়ক পর্ব চলবে । তা চলতে থাকুক। আমি আদতে সাহিত্যের মানুষ হয়েও এখানে লিখি কেবল প্রজন্মর জন্যই দায়ভার হতেই। নইলে আমার আজ এখানে লিখার কথা না। কবিতার বদলে রাজনীতি বিষয়ে – ইতিহাস বিষয়ে লেখার কথা না। আমি কোনও গবেষকও নই।
হ্যাঁ, আমি অবশ্যই একাত্তুরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞাধারী একজন। এতেও যদি কারও সন্দেহের প্রশ্নও আসে আমার ধৈর্য্যচূতি ঘটার সম্ভাবনা একদমই নাই। আমিতো আমার প্রত্যক্ষ চেতনার কথাই লিখছি – একটাই চেতনা – বাংলাদেশ কোনও জামায়াত-শিবির-এর ঠাঁই না। ঠাঁই যে গেড়েছে তারা বাংলাদেশে আজ – যাদের প্রত্যক্ষ মদদে – সেই জোটের সম্পর্কে প্রজন্ম যাতে সজাগ থাকে তারই কথা লিখতে চাই। লিখতে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। কিছুতে যাতে যুদ্ধাপরাধীরা ছাড় না পায়। বিচারিক রায়টি যাতে ঘোষিত হয় এবঙ যথোচিত শাস্তিবিধান হয়। চাওয়া এই। বাংলাদেশ হতে পাকিপ্রেমীর শয়তানি যোগসাজশ চিরতরে বন্ধের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হবার এখনই সময়। আমারা নিশ্চয় আমাদের জন্মের ঐতিহাসিক অতীত ভুলবোনা। ভোলার কথাটি বলে যারা, তাদের সঙ্গে কিছুতে হাত মেলাতে চাইবোনা। চাইতে পারি কি না প্রশ্ন রাখলাম। প্রশ্নের জবাবটি তরুণ প্রজন্মই নিশ্চয় দেবে। নিশ্চয় আজকের তরুণ জানে – আমরা কোনও মা-বাপহীন জাতি না। আমাদের রয়েছে জন্মগত জ্বলন্ত ঐতিহ্যময় অতীত। সংগ্রামী-রক্তাক্ত ইতিহাস। আমরা কি সেই ইতিহাস পদদলিত করার কথা ভুলেও ভাবতে পারি ! পারি কি ইতিহাসের হৃদয় মাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথায় নেচে উঠতে ! এবঙ ইতিহাসের খলনায়কদের কিছুতেই ক্ষমার প্রশ্ন আসে কি ???

আজ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি বাংলাদেশের সন্মানিত অতিথি, আপনাকে অতিথি হিসেবে সালাম। কিন্তু আপনি আমাদের অতীত ভুলে এগিয়ে যাওয়ার কথাটি প্রত্যাহার করুন প্লিজ। আমরা আমাদের মহান ঐতিহাসিক স্বাধীনতার চেতনাকে প্রাণের চেয়ে অধিক ভালোবাসি। অতীত আমাদের অহংকারের রক্তাক্ত স্মৃতিমালায় গ্রন্থিত ইতিহাস। আমরা আমাদের জীবনবাজি রেখেই ঐতিহাসিক অতীতকে সযত্নে লালন করতে ভালোবাসি।

১০ নভেম্বর ২০১২ ইং