চারপাশে আজ অনৈতিক চালচিত্র

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 20 April 2011, 09:50 AM
Updated : 20 April 2011, 09:50 AM

আমাদের চারপাশভর্তি আজ নৈতিক স্খলনের বিষাক্ত বাষ্প। ঘর থেকে যে মেয়েটি / যে শিশুটি / যে মানুষটি বেরুবে নিত্যদিনের কাজে কি অকাজে তার সুস্থভাবে ঘরে ফিরে আসার জন্য প্রিয়পরিজন (যদি থাকে) শঙ্কিতচিত্তে প্রার্থনা করে। আর অভিভাবকহীনদের বেলায় শুভকামনার কেউ নেই — তথাপি তাকে তার দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে যেতেই হয়। কিন্তু পথে বেরুনো মেয়েটি / শিশুটি / মানুষটি যে কোনও কান্ডজ্ঞানহীন বেপরোয়া ট্রাক-বাসচালকের শিকার হবেনা কিংবা বখাটের অথবা কোনও নরপিশাচের — তার নিশচয়তা কই ! উপরন্তু রয়েছে চোর-বাটপার-যানসঙ্কট সহ আরও হাজার অজানা সংকটের বিস্তার।

নৈতিকতার স্খলন ঘর অব্দি বিস্তৃত আজ। সকালে পত্রিকা খুলেই শঙ্কানীল সব বড়-বড় হেডলাইন — রক্তাক্ত ছবি — যেমন: তিন মাসে যৌতুকের বলি ৬২, আত্মহত্যা ৭, স্বামীই ঘাতক ! অথবাঃ মহেশখালীতে পিতার হাতে ১৭ দিনের শিশু খুন ! এমনিতর ভয়াবহ সংবাদপাঠে কার না মনভার হয় ! চোখ ভিজে যায় ঘাতক মানুষের নির্মমতায়। কিন্তু না, আজকাল অনেকেরই চোখ-মন আর্দ্র হয়না। তারা হয়তো মানুষের নামধারী নৈতিকতা বিবর্জিত একদল মানুষ। যাদের জন্য প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে সুস্থ-মননশীল মানুষের স্বপ্নজয়ের লক্ষ্য। হৃদয় হোঁচট খাচ্ছে তার একান্ত মেধাবী চর্চায়। দিনদিনই যেন আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে সামাজিক মানুষের সংবেদনশীলতার মাত্রা। সমাজে ক্ষমতাবানের হাত নিজেদের বিলাস-ব্যাসনে যতটা মত্ত — ততটাই সঙ্কুচিত পথচলতি একজন বৃদ্ধের জন্য কি পথশিশুটির জন্য। বাঙালি হৃদয়ের বিশালতার কথা যেন ইতিহাসপাঠ্যসূচী মাত্র। রাজনৈতিক নীতিহীনতার কথা তো বলাই বাহুল্য। হিংসা-বিভেদ-বিভাজনে ছেয়ে আছে নীতিহীন রাজনীতি। সেইসঙ্গে খুনোখুনি। পবিত্র সংসদে খিস্তিখেউড় শুনে লজ্জায় অধোবদন হই বটে তবে যাদের লজ্জা পাওয়া উচিত তাদের বিন্দুমাত্র বিকার নেই।
আর আমরা যারা সামাজিক সুবিধাদি ভোগের মাধ্যমেই আজ কলম চালাই কি কীবোর্ড টিপে শেয়ার করি মনের কথা — চিঠির মানে আজ দাঁড়িয়েছে ইমেইলের দুছত্র মাত্র — তাতেও ঢুকে পড়ছে অনৈতিক কর্মকান্ড — মাতৃস্থানীয়/কন্যাতুল্যর মেইলেও অশ্লীল বার্তা পাঠাতে এতটুকু বিবেকে বাধছেনা একশ্রেণীর — এই ভয়ঙ্করের হাত থেকে কে বাঁচাবে আমাদের ভবিষ্য শিশুদের, মেয়েদের, মা, বধূজায়াবোনদের — ভেবে কেমন বিবমিষাময় অভিজ্ঞা থেকে আমার আজকের এই লেখা। তথাপি আমি কিন্তু আমার একান্ত মনন-মেধাবিচ্যুত হতে রাজী নই। রাজী নই স্বপ্নজয়ের লক্ষ্যে ভাসমান ডিঙির হাল ছাড়তে। তা যদি ছাড়ি তবেতো প্রায় ছাপ্পান্ন ছোঁয়া জীবনাকাশের সকল আলো নিভে যায় ! তাই চিলতে আলোকরেখাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে জানালায় একটি নতুন ভোরের আয়োজন দেখবো বলে — এভাবেই নিজের পথ খুঁজে নিতে চাই — বাঁচি যদ্দিন। সমমনাদের জন্যও আশার ভাষা আপাততঃ এই।