জাগিয়াছে তুমুল রূপালি নির্জন শিখা চিরন্তন

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 26 Nov 2012, 03:30 AM
Updated : 26 Nov 2012, 03:30 AM

আজিকে ভোরে জাগিয়া দেখি জানালা ভেদ করিয়া জ্বলিতেছে শিশিরভেজা সোনালি রৌদ্রছায়ায় শীতের বার্তা। ক'দিন ধরিয়া রাজধানীর বুক জুড়িয়া কেবলই কিসব অদ্ভুতুড়ে আগুনমাখা দাউদাউ শিরোনামের ব্রেকিং নিউজ। দেখি এবঙ নির্জনে আকুল আশঙ্কায় পুড়িয়া ছাইভস্ম হইয়া যাওয়াদের হাহাকারের সঙ্গে ঐতিহাসিক একাত্তুরের জ্বলন্ত গন্ধ হাতড়াইয়া ফিরি। এবঙ তাহাতে নিজেও প্রায় পুড়িয়া যাইতে-যাইতে পুনরায় জানালা ভেদ করিয়া আসা শীতের বার্তার ঝাপ্টা খাইয়া সম্বিত ফিরিয়া পাই।

তথাপি কি জানি কি মহা দুর্যোগের ঘনঘটাময় অমঙ্গলের পদচিহ্ন দেখিতে পাই চারিপার্শ্বেই। উহারা মনুষ্য জাতি, অথচ বিবেক বর্জিত বলিয়াই নিজের মাতৃভূমির বঙ্গভূমির ইতিহাস অবজ্ঞা করিয়া, নিজের জন্মগত ঐতিহ্য পদদলিত করিয়া, দম্ভ ভরিয়া চোরাগোপ্তা মারদাঙ্গায় মাতৃভূমির বঙ্গভূমির ইজ্জত হরণকারীদের মুক্তির দাবীতে মিছিল করে। এবঙ উহাদিগকে পিছন হইতে উস্কানিদাতা কতিপয় মনুষ্য জাতি, যাহারা নিতান্তই দলসবর্স্ব জাতি। আদতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আর ইতিহাসের সংগ্রামী রক্তাক্ত অধ্যায়ের সহিত উহাদের রক্তের সম্পর্ক / নাড়ির সম্পর্কটি নাই। দলসর্বস্ব দলটির তখন অস্তিত্বই ছিলোনা বঙ্গদেশে। এবঙ আজিকার মিছিলকারী দলটির জন্মদাতারা সেই একাত্তুরের ঘাতক-দালাল দল, জামায়াতের আমীর-নায়েব-পাকিদোসর-রাজাকারগঙ। ভাবিতেও ঘৃণার আগুন জ্বলিয়া উঠে হৃদয়তলে। অস্থি-হাড়-মজ্জা-পাঁজর জ্বলিয়া পুড়িয়া খাক হইতে থাকে। কারণ আমরা একাত্তুরের সাক্ষী, বাঁচিয়া আছি অনেক যাতনা সহিয়া। আমাদের মহান স্বাধীনতার অবিসম্বাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় নেতাদের ঘাতকদল জঘন্যতম ষড়যন্ত্রের জাল রচিয়া নিষ্ঠুরতম উপায়ে হত্যা করিয়া চল্লিশ-চল্লিশ বর্ষ ধরিয়া স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক জান্তার সৃষ্ট দলের পৃষ্ঠপোষকতায় বহাল তবিয়তে রাজার হালে জীবন কাটাইয়া দাবড়াইয়া বেড়াইয়াছে রাষ্ট্রীয় ঝান্ডা উড়াইয়াই। অবশেষে আজিকে বিয়াল্লিশ বর্ষের বিজয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছাইয়া বিস্তর কাঠখড় পোড়াইয়াই অইসব চিহ্নিত পাকিদোসররা আইন মোতাবেক শাস্তিবিধান-এর শেষের ঘন্টা বাজিয়া উঠিবার কালেই কি না মুক্তির দাবীতে মিছিল !!! ইহা কোনও যুক্তিতেই খাটে কি !!! ইহাতো আজিকে একটি প্রধান জনদাবীও বটে। তাইতো জনতাও মিছিলকারীদের ঠ্যাঙ্গাইতে একাট্টা হইয়াছে। পুলিশ মার খাইয়া ধৈর্য ধরিয়া ঠেকাইতেছে / গ্রেফতারও করিতেছে। দেখিয়া শঙ্কাকুল হৃদয় চাঙ্গা হইয়া উঠিতেছে। মরিচা পড়া হৃদয়ে সূর্যোদয়ের আলোকচ্ছটা হৃদয়ের একুল-ওকুল-দুকুল ভাসাইয়া গাহিয়া উঠিতেছে জাগরণের গান –

"এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে –
জয় মা বলে ভাসাও তরী ………."

চারিপার্শ্বের ভস্মিভূত যাতনা-বেদনা সমেত এই শীতার্ত নির্জন প্রহর তুমুল রূপালি শিখা চিরন্তনসম জাগিয়া উঠিলো বলিয়া ………………!! এমনই শিশিরভেজা সোনালি রৌদ্রের বার্তা আসিয়া পড়িলো আজিকে আমারই একান্ত জানালায় বড়োই বিধূর রাগিনী ……………….!! আমি কি তাহা শেয়ার না করিয়া পড়িতে পারি একাকী ………………..!! না পারিনা। পারিনা বলিয়াই হৃদয় জাগাইবার প্রয়াসে একা একাই রচি জাগরণের সামান্য পঙক্তি – আর তাহাই সকলের সহিত ভাগ করিয়া নিতে চাহিয়া রাত্তির জাগিয়া বিডিনিউজের নিজের ব্লগে পোস্টের নিমিত্তেই ড্রাফট করিতেছি। জানি যে অচিরেই পোস্টটি পাবলিশড হইলে অনেকেই ইহার অংশী হইবে। বংশীবাদক জুটিবে কি না জানিনা, কিন্তু হৃদয়জাত অনুভুতি শেয়ার করিবার আনন্দ কিছুমাত্র কম তো নহে, এবঙ অই আনন্দ আমার শতভাগ-ই নির্ভেজাল। ঐতিহাসিক স্মৃতিমালারা নিশ্চয় আরও অনেক বেশি খাঁটি ও রত্নসম অমূল্য ধন। সে ধন আমাদের "শিখা চিরন্তন" – যা চিরদিন-ই হৃদয় হইতে হৃদয় প্রজ্জ্বলিত করিবে। ওগো শিখা চিরন্তন, তোমার শিখায় হৃদয় সেঁকা হউক আজিকে আবার – ইহার অধিক চাওয়া নাই আমার। আজিকার শীতার্ত নির্জন প্রহরে নিবেদন করিতে চাহিতেছি কেবল তোমারই স্মৃতির রক্তাক্ত জ্বলন্ত অশ্রুবিন্দু – একাত্তুরের সহস্র বেদনাগাথা – চিরকালীন শিখায়-শিখায় দাউদাউ লেখা কি না লেখা কবিতা –

জাগিয়াছে যখন ভারাক্রান্ত-জ্বলন্ত –
একাত্তুরের বিজয়ের রক্তজলের অজর দিন –
আহা কি করুণ আহা কি অনন্ত –
তখনইতো আবার জাগিয়া উঠিবার সেই সে আকুল বাংলামায়ের শিকড়জাগা রক্তঋণ।।
শিশিরে-শিশিরে জাগ্রত
সেই ভায়ের-মায়ের-বোনের শত রক্তঋণ।।

পিতার মহান স্নেহচ্ছায়া – অভয়বাণীর ঋণ।।
তারেই বলি – বাংলাদেশের হৃদয়দাতা – পিতৃঋণ।।

২৬ নভেম্বর ২০১২ ইং