আজ একটি অমূল্য মহতি উদ্যোগের সতীর্থ হয়ে ধন্য হলাম

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 2 Dec 2012, 08:19 AM
Updated : 2 Dec 2012, 08:19 AM

ইলিয়াস ভাই-র আহবানে আমরা সাড়া দিতেই অল্প কদিন সময়েই সবার কন্ট্রিবিউশনে ২০০০০ টাকা সংগৃহিত হলো এবঙ ব্লগাররা যথার্থ ভাবে দায়িত্ব পালন করলো। অবশেষে আগের ঠিক করা বিজয় মাসের প্রথম দিনটিতেই আমরা সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গেইটের সামনে পৌঁছে গেলাম। আমি, জয়, ইলিয়াসভাই, আইরিন, মজিবর ও মির্জা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর এর রিপোর্টার মামুন রশীদ এলেন। একজন ভারতীয় দর্শনার্থী, অত্যন্ত সদালাপী (নামটি এই মুহূর্তে মনে আসছেই না), তো, তিনিও আগ্রহ নিয়েই বাংলাদেশের ইতিহাসের সংগ্রহশালা দেখতে এসেছেন।

নির্মাণ কাজ চলছে জাদুঘরে। চলছে রঙের কাজও। তার মধ্যেই স্কুলের ছোট্ট ছেলেমেয়ের দল তাদের অভিভাবকের পদচারণা মুখর জাদুঘরের চারপাশ। আমরা চত্বরেই টেবিল-চেয়ার দখল করে চা পান করতে করতে প্রাথমিক আলাপচারিতা সেরেই ফরম পূরণ-এর কাজটি সারা হলো জয়কে দিয়ে। ট্রাস্টির তিনজন প্রধান কর্মকর্তা এলেন। পরিচিতি পর্বের পরেই আমরা আমাদের ব্লগারদের ২০০০০/টাকার চেক তাঁদের হাতে দিলাম। তাঁরা দিলেন মুক্তিযুদ্ধের স্মারক গ্রন্থ। আমরা সেই গ্রন্থটি আমাদের তরুণ সম্ভাবনাময় ব্লগার জয়-এর হাতেই তুলে দিলাম। একজন নবীন শিক্ষক হিসেবে জয় নিজের শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে চেতনা জাগিয়ে দেবে নিশ্চয়।

এরপর গরম সিঙ্গারা এলো। এবঙ তখনই রসমালাই হাতে ব্লগার মির্জা ঢুকলো। রসমালাই খেতেখেতেই তাঁরা অনেক আন্তরিক আলাপচারিতার বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্কুলিং প্রোগ্রামের বিষয়ে জানালেন। বীরাঙ্গনাদের জন্য তাঁদের বিশেষ উদ্যোগ-এর কথাও জানালেন। আমার খুব আগ্রহ জেগে উঠলো বীরাঙ্গনাদের খোঁজ-খবর সমেত তাঁদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তার কাজ সম্পর্কে। জানিনা আমরা আমাদের মহান বীরাঙ্গনাদের জন্য কিঞ্চিত সহযোগের হাতটি বাড়াতে পারবো কি না, তবুও আজকের অভিজ্ঞা হতে বিশ্বাস আন্তরিকভাবে চাইলে সামান্য পরিমানের হলেও কিছু না কিছু কাজ তো হয়। নিশ্চয় আমরা অচিরে আমাদের মহান বীরাঙ্গনাদের কাজে লাগতে পারবো সবাই মিলে চাইলে। আর স্কুলিং প্রোগ্রামেও ব্লগার যারা ইচ্ছুক তারা এগিয়ে এলে প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলের শিশুরাও মহতি উদ্যোগের অংশী হয়ে মহান ইতিহাসের ঐতিহাসিক তথ্য-সত্য সম্পর্কে জানবে, শ্রদ্ধাবনত হতে শিখবে। আজ যা খুব প্রয়োজন।

কেননা আমাদের জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশের শিশুরা ভুল ইতিহাস ও তথ্য জানে। যা জাতিগত চরিত্রের জন্যই ক্ষতিকর। একটি জাতির জাতীয় ইতিহাস এবঙ তথ্য অভিন্ন না হলে সে জাতি বিশ্বে একটি হাস্যকর অবস্থানেই গিয়ে দাঁড়ায়। আজ তেমন অবস্থান অনেকটাই দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য হাসিলের কারণে। একটি জাতির একটাই অভিন্ন ইতিহাস থাকতে হয়। অথচ আমাদের বাংলাদেশে তার চরমভাবে লঙ্ঘিত। দলীয় স্বার্থেই এদেশে ইতিহাস বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। এমন কি পাঠ্যবইয়ে পর্যন্ত মুদ্রিত করা হয়েছে ভুল ইতিহাসের পাঠ। যা বর্তমান সরকারের আমলে নতুন করে সংশোধন করা হয়েছে। শুদ্ধভাবে ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র সমেত পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করা হয়েছে। পুনরায় কোনও সরকার বদল ঘটলেও ইতিহাসবিকৃতি না ঘটার জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা আইন করেই করা উচিত।

এই লক্ষ্যেই কাজে নামার এখনই সময়। আগামীর শিশুরা একজনও কোনও ভুল ইতিহাসের পাঠ না পায় যেন, এমন উদ্যোগ জরুরী আজ, আমাদেরই জাতিগত জাতীয় ইতিহাস রক্ষায়। আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ কারও হঠাত ঘোষণাপাঠ মাত্র আরম্ভ হয়নি। একটি সুদীর্ঘ কাল ধরেই নীপিড়িত-বঞ্চিত জাতি সঠিক নেতৃত্বের জোরেই উঠে দাঁড়িয়ে মহান নেতার সঙ্গে আত্মত্যাগের লড়াইয়ে নেমেছে, পেরিয়েছে অনেক জেল-জুলুম-হুকুম-এর বিরুদ্ধে – "জয়বাংলা" শ্লোগানে একাত্মতা ঘোষণা করে। একটি পরাধীন জাতিকে সেই স্বপ্নের দিকে চালিত করেছেন ইতিহাসের মহান নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁরই দিকনির্দেশনায় পরিচালিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধ। এরচে' বড় সত্য বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রজন্মের ইতিহাসে নেই। তিনি না হলে পড়শি ভারত সহযোগ দেবার প্রশ্ন আসতো কি না সন্দেহ। এই বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির জন্মই হতোনা বঙ্গবন্ধু যদি না জন্মাতেন এদেশে। এসবই ভাবছিলাম জাদুঘরের অজস্র ছবিমালা, সচিত্র তথ্য, যুদ্ধকালের সংগ্রহশালা দেখতে-দেখতে। আইরীন ছবিও উঠিয়েছে। হয়তো পোস্ট দিলেই আবার দেখবো। দেখে-দেখে অশ্রুসজল ভারাক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও আবারও দেখতে মন চাইছে। একটি জাতির ইতিহাস আদতে এমনই। এই যে এমন একটি দিনে আমরা ক'জন ব্লগার একই পরিবারের অভিন্নতা নিয়েই অংশী হোলাম এক সুন্দর উদ্যোগের, উপলব্ধিও করলাম পারস্পরিক শ্রদ্ধা-স্নেহের উষ্ণ শীতের সকালটি, আমরা চাই এ সম্পর্কটি আরও অভিন্ন মাত্রায় আরও অধিক কাজের অগ্রগতির লক্ষ্যে এগিয়ে চলুক, সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে।

আজ বিজয়মাসে আমাদের মহান নেতৃত্বের ঐতিহাসিক সত্যানুসন্ধানে, সত্য অনুধাবনে, নিজের জাতিস্বত্ত্বার প্রতি গভীর ভালোবাসা ব্যাতীত বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে ইতিহাস চেতনা জাগবেনা। এবঙ এই চেতনা ছাড়া দেশের জন্য কোনও কাজে মমত্ব / ভালোবাসার অভাবে দেশ শিকড়জাত ফুলে-ফসলে ভরে ওঠার সম্ভাবনাময় দিগন্ত না ছুঁয়েই, কেবল অঙ্কুরেই শিকড়বিচ্যূতির কারণে চিটাধানে ভরবে মাঠ। আমরা সেটি চাইনা কিছুতেই। আমরা আমাদের ভবিষ্য শিশুদের জাতীয় অভিন্ন ইতিহাসের পাঠ শেখাতে ব্রতী হলেই শিশুরা নিশ্চয় ছুঁয়ে দেবেই অবাধ আকাশ। আজকের দিনের স্বপ্ন আমার এই।

পহেলা ডিসেম্বর ২০১২ ইং।