বিজয় দিবসে গর্জে উঠেছিলো বাংলাদেশ

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 17 Dec 2012, 04:53 PM
Updated : 17 Dec 2012, 04:53 PM

কাল সমস্ত দিনরাত্রি ধরেই ঠায় দেখেছি বসে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের গর্জে ওঠা লাল-সবুজ-এর মেলায় মানুষের অবাধ স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল। দুচোখ ভরেই দেখেছি। মনটা ফিরে গেছিলো একাত্তুরে। যেন বা একাত্তরের গণজাগরণ-ই। লক্ষ মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে গভীর শ্রদ্ধায় শহীদ মিনারে মিছিল করে এগিয়ে যাচ্ছে। সবার হাতে প্ল্যাকার্ড / ব্যানার / ফেস্টুন / ফুল। মাথায় লাল-সবুজ পতাকার প্রতীক বাঁধা। প্রজন্ম যেন সত্যি-ই জেগেছে আবার সেই একাত্তরের গণজোয়ারের মতোই। তাদের চোখের মধ্যে সুতীব্র ঘৃণার আগুন ছিলো যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি। তাদের প্ল্যাকার্ডে / ব্যানারে / ফেস্টুনে লিখিত ছিলো –

"রাজাকারের হয়নি সাজা
মুক্তিযুদ্ধ হয়নি শেষ
গর্জে ওঠো বীর বাঙালী
গর্জে ওঠো বাংলাদেশ।।"

সেইসঙ্গে সহস্র বীর শহীদদের প্রতি গভীর বিনম্র শ্রদ্ধাবোধের ভাব গম্ভীর আয়োজনে শহীদ মিনার ফুলেফুলেই ছেয়ে গেছিলো। বাংলাদেশ একাত্তুরের পর কোনো বিজয় দিবসে এত জাগ্রত বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে জেগে ওঠেনি। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম যেন নতুন করেই একাত্তুরের চেতনায় জেগেছে। কন্ঠে তাদের নব অঙ্গীকারের আওয়াজে ঝঙ্কৃত হয়েছিলো একাত্তুরের সুর। সবার মনে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে তারা তাদের দাবীর ঝঙ্কার। বিয়াল্লিশতম বিজয় দিবসের দিনটি তাই স্মরণকালের একটি গণজাগরণময় দৃষ্টান্তরূপী দিন হিসেবে ইতিহাস গড়লো বলা যায়। শিশু-কিশোর-কিশোরী-তরুণ-তরুণী-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের মধ্যেই ছিলো একাট্টা এক দাবীর উচ্চারণ –

"যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই।।"

আমিও সেই দাবীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে উচ্চারণ করেছি –

"যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই।।"

অথচ কতশত বারই এই "বিচার চাই, বিচার চাই" লিখেছি, কিন্তু এমন একাত্ম হইনি। কেননা, এমন মিছিলতো তখন আর এমন করে লিখার সময় দেখিনি। মনেমনে কেবল একাত্তুরের অজস্র স্মৃতিমালা হাতড়ে ফিরেছি। লিখেছি সেইসব স্মৃতির জলছবি। তাদের স্বপ্ন, তাদের আর্তনাদ অনুভবই করেছি কেবল। যথাযথ জাগাতে পারিনি। একার পক্ষে সেটি অসম্ভবের পাহাড়চূড়ায় পৌঁছানোর মতোই অসম্ভব বিলাস। কিন্তু, এই যে বিয়াল্লিশতম বিজয় দিবসে ক্যামন একাকার একাত্তুরের চেতনায় সুতীব্র জেগে উঠলো বাংলাদেশ আবার, এইতো চেয়েছি এতোকাল ধরেই। আজ আমার এতোকালের সেই চাওয়া আশ্চর্যভাবে পূরণ হলো। হৃদয় দিয়ে কেবল অনুভব করছি সেই আশ্চর্য জাগরণ। এ বড়ো হৃদয় জাগানো অনুভব। এ বড়ো আগামীর নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার বাংলাদেশ।

পরম করুণাময়ের কাছে একান্ত প্রার্থনা – বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায় এ পথে, বিশ্ব অবাক-অবাঙ দুচোখে দেখে বাংলাদেশ বিয়াল্লিশ বর্ষের চাওয়া পূরণে এক উজ্জ্বলতম উদাহরণ রচেছে। এই প্রার্থনা পরম করুণাময় যেন শোনেন। যেন কবুল করেন – অপেক্ষা আজ তারই।

সেই অপেক্ষা ছাড়া আপাততঃ আর বলার নেই। লেখার নেই। কেবল অপেক্ষা এবঙ অপেক্ষাই। নিশ্চয় প্রিয় প্রজন্ম তাদের দাবীর প্রতি অনড় থেকে আদায় করে নেবেই দাবী। যেভাবে একাত্তুরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথে নেতার ডাকে এগিয়ে গেছে তরুণ সমাজ, তাদের সঙ্গে সমগ্র দেশ এবঙ জনগণ। আজও সেদিনের মতোই তরুণ সমাজ বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে নিশ্চয়, এমনই স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্নের হাত ধরেই লিখতে লিখতে ভেসে উঠছে প্রিয় বাংলাদেশের সোনালি ভবিষ্যত – সোনার বাংলা নামেই নাম, বেঁধেছিলেন কবিগুরু তারই তরে –

"আমার সোনার বাংলা আমি তোমার ভালোবাসি"

সে গান আমাদের জাতীয় সঙ্গীত বানিয়ে দিলেন মহান নেতা, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা পরম শ্রদ্ধায় গাই যখনই, তখনই বাংলাদেশ নামের স্বদেশ আমাদের জাগ্রত করে, ঝঙ্কৃত করে। আমরা আমাদের একাত্তুরের চেতনাকে হৃদয় দিয়ে রক্তের ভিতর গভীরতম ঢেউ রূপেই পাই। অমনি একাত্তুরের নরঘাতক রাজাকারের মুখ চিনতে পাই। তাদের প্রতি ঘৃণায় দ্রোহের আগুন জ্বলে অন্তরে। আজ যেমন সেই ঘৃণার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে তরুণ সমাজের বুকের ভিতর, তাদের সঙ্গে সমগ্র দেশবাসির ভিতর। তাই স্বপ্নের বাংলাদেশ আবার গড়বে তরুণ সমাজই। এমন স্বপ্ন দেখছি আবার।

সেদিন প্রিয় বাংলাদেশ হতে চিরবিদায় নেবে একাত্তুরের ঘৃণিত ঘাতক দল। বাংলাদেশের মানুষ বিয়াল্লিশ বর্ষের যাতনা ভুলবে। বাংলাদেশের মাটি পবিত্র হবে। কুলাঙ্গারের দল চিরতরেই পালাবে এদেশ হতে। কলঙ্কমুক্ত হবে জাতীয় ইতিহাস। হৃদয় গ্লানিমুক্ত হয়েই শান্তিতে ঘুমোতে যাবে।

এবঙ আর কোনও অশুভ-অশনি-অমঙ্গলের চোখ রাঙানি সইবেনা বাংলাদেশ। এই স্বপ্নটি ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। সবার মাঝে। অন্তর হতে প্রাণিত এক গুঞ্জন উঠছে প্রার্থনা সঙ্গীতের মতোই –

"প্রিয় বাংলাদেশ, জয়ী হও, জয়ী হও"
ছিনিয়ে নাও সেই সে জয় একাত্তুরের মতোই উজ্জ্বলতম জয়।।"

১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ইং