বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র চার বছরের মাথায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্রে সপরিবার হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়ায় এদেশে সামরিক জেনারেলদের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের পথ খুলে যায়। প্রথম উদ্বোধন ঘটে জেনারেল জিয়ার হাত ধরে। জিয়ার রাজনৈতিক খায়েশ চরিতার্থের প্রক্রিয়ায় এদেশের ঐতিহ্যময় রাজনীতির ধারাটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। জিয়া সামরিক ছত্রছায়ায় দল গঠনের প্রথম উদাহরণ তৈরী করেন তার দল বিএনপি গঠনের মাধ্যমে। যা কেবল আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগের সেই 'পাকিস্তান' আমলেরই নব্য রূপ বলা যায়। কঠোর শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট এক বাংলাদেশে স্বাধীন রাজনীতির চর্চা ব্যাহত হয়ে কঠিনতম হয়ে ওঠে। মানুষের না ছিলো নিজস্ব দলের জন্য জরুরী কোনও পদক্ষেপের সুযোগ না অভিমত দেয়ার উপায়। তখন রীতিমত হাত-পা বাঁধা অবস্থানে এদেশের স্বাধীনতার ধারক-বাহক-লালনকারী মানুষ। অন্যদিকে জিয়া তার সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা মাফিক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন উপায়ে প্রশ্রয় দিয়ে তাদের জন্য বিদেশে উচ্চ পর্যায়ের সূযোগ-সুবিধাদির বন্দোবস্ত করে দেন। বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান বঙ্গবন্ধু প্রণীত '৭২ এর সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় আঘাত হেনে তাকে ধর্মীয় রূপ দেন। ফলে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের রাজনীতিতে আসার পথ খুলে যায়। জিয়ার আমলে দেশে যে অগণিত খাল কাটার হিড়িক পড়েছিলো যেন বা সেইসব কাটা খাল দিয়েই ঢুকে পড়া কুমিরের মতো বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও ঢুকে পড়ে নিষিদ্ধ জামাতগঙ।
জিয়া হত্যার পরে তাদের ধর্মের রাজনীতি আরও পাকাপোক্ত হয়। জেনারেল এরশাদের দল জাপার উত্থান ঘটে। তিনিও যথারীতি তার রাজনৈতিক খায়েশ পূরণের লক্ষ্যেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যান, ছাত্রদের অবৈধ অস্ত্রের মহড়া চলে শিক্ষাঙ্গনে। জিয়া-এরশাদের হাতে রাজনীতির চরিত্র হনন ঘটে এতটাই যে আজও জাতি তার খেসারত গুণে যাচ্ছে। এই দুই জেনারেল সৃষ্ট দুই দল বিএনপি ও জাপা সামরিক চিন্তা-চেতনা প্রসূত বলে তাদের কাছে গণতান্ত্রিক আচরণ কখনোই দেখেনি জাতি। আর জামাত? এই দলটিতো এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দল যারা ধর্মের নাম ভাঙিয়ে অপ রাজনৈতিক খেলা খেলেই চলেছে বিএনপির কাঁধে ভর করে। যে কারণে বিএনপির চারদলীয় জোটের আমলে জামাত মন্ত্রিত্ব পেয়েছে, আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তারা আহত চোখে দেখে গেছি। আরও দেখেছি জঙ্গিবাদের উত্থান সহ বোমা হামলার কলংকিত অধ্যায়। দেশের সম্পদ লুটের অন্যায়-বাণিজ্য। সে এক সংকটময় ক্রান্তিকাল।
অবশেষে স্বাধীনতার চল্লিশ বর্ষে এসে এদেশ আবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হাঁটছে। বলা যায় এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটি শিশুপ্রায়। অনেক ভুলভ্রান্তি থাকলেও তাকে আজ সচেতন-সামাজিক জনসমর্থনে এগিয়ে নিতে হবে একারণেই যেন আর কোনভাবেই কোনও সামরিক জেনারেলের অভ্যুত্থানের সুযোগ তৈরী না হয়। যেন কোনও ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের বিস্তার না ঘটে। সকল মিডিয়াকে সচেতনভাবে গণতান্ত্রিক ধারাটির সহায়ক পজিটিভ দূরদৃষ্টি নিয়ে কর্ম পরিচালনা করতে হবে। যাতে ভুলভ্রান্তি শুধরে একটি স্বচ্ছ জবাবদিহিতার প্লাটফর্ম হয়ে ওঠে এদেশের সব মিডিয়া। আর সরকারকে অবশ্যই সবচে' স্বচ্ছ হতে হবে। প্রতিটি সরকারী উদ্যোগ যাতে দক্ষ হাতে বিচক্ষণতায় পরিচালিত হয় সেই লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে। নইলে গণতান্ত্রিক বর্তমান অর্জনের সমস্তই আবারও অন্ধকারের থাবায় পড়বে। যা কিছুতেই কাম্য নয়। আশাকরি সরকার ও সকলের সহযোগেই টিকে থাকবে আমাদের সাধের শিশু গণতান্ত্রিক উত্তোরণের ধারা। আজকের চাওয়া এই। জয় হোক গণতান্ত্রিক চাওয়ার।