যারা চায়নি প্রজন্ম জাগুক এইভাবে একাত্তুরের চেতনাজয়ী জয়োধ্বনিতে

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 1 March 2013, 04:58 AM
Updated : 1 March 2013, 04:58 AM

বিয়াল্লিশ বর্ষের অপূর্ণ একটি চাওয়ার পূর্ণতা দিতেই শাহবাগের প্রজন্ম শপথের অটল সংকল্পে সর্বস্তরের জনগণের হৃদয়ে একাত্তুরের চেতনা জাগিয়ে দিয়েছে শ্লোগানে-শ্লোগানে। সারা বাংলাদেশেই ছড়িয়ে গেছে আশ্চর্য অহিংস আন্দোলনের ঢেউ। এ আন্দোলনে কোথাও কেউ দলীয় কোনও রাজনৈতিক একটিও অভব্য আচরণ করেনি। একটাই জোরালো শপথ এই আন্দোলনের – একাত্তুরের যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের ফাঁসি চাই –

"রাজাকারের ফাঁসি চাই – অন্য কোনও বিচার নাই।"

তরুণ প্রজন্মের এমন উচ্চারণে একাত্তুরের রক্তক্ষরা ইতিহাসের পুনর্জাগরণ নতুন করেই রক্তক্ষরণে জাগিয়ে দিয়েছে জনমন। যে ক্ষত বহন করেছে বিয়াল্লিশ বছর ধরে শহীদ পরিবার এবঙ মুক্তিযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহস্র সহযোগী মানুষ এদেশের তাদের প্রত্যেকের অন্তর হতে আপনা আপনিই ভালোবাসার আশীর্বাদ ঝরেছে প্রজন্মের মাথার 'পরে প্রার্থনা হয়ে। তাদের প্রতিটি কর্মসূচীতে স্বতঃস্ফুর্ত জনসাধারণের একাত্মতা একাত্তুরের দিনগুলির কথাই মনে পড়িয়ে দিয়েছে বারংবার। এই এতোকালের ভিতর এমন একাত্ম প্রাণের সন্মিলন এমন সংহতি এদেশে কেউ দেখেনি। আর তাতেই একাত্তুরের চেতনা বিদ্বেষীরা – বাংলাদেশ চায়নি যারা – যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মরিয়া যারা – তাদের নানামুখী অপপ্রচার সহ ধ্বংসাত্মক-হিংসাত্মক ধর্মীয় উস্কানির জিহাদী কর্মকান্ড এবঙ তাতে আরও অপশক্তির যোগানদাতা তাদেরই দলীয় জোটাবদ্ধ সমর্থকরা। এদেশের জন্মলগ্ন হতেই তারা একাত্তুরের চেতনাবিরোধী দল। জামাতী ইসলামী দলটি ইসলাম ধর্মের বিপরীত নীতিতে পরিচালিত সাম্প্রদায়িক দল। যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর। তখন সাধারণ ক্ষমার মধ্যে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা পড়েনি বলে তাদের বিচার পর্বও চলছিলো। বাঙালি জাতির জাতীয় অর্জনকে সমূলে উতপাটন করতেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে জাতবিদ্বেষী বাংলাদেশ না চাওয়া ষড়যন্ত্রকারী মহল। এরপর জেলখানায় বঙ্গবন্ধুর সহচর জাতীয় চার নেতাকে নির্মম অন্যায় হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় চক্রান্তেরই অংশ হিসেবে। আজকের প্রজন্ম সেইসব ইতিহাসের চর্চাকারী অনলাইন এক্টিভিস্ট ব্লগার। তারা জাতীয় চেতনায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করার কাজটি করতে সংকল্পবদ্ধ সন্তানতুল্য একদল তারুণ্য। তারা জেনেছে একাত্তুরে পাকিজান্তার দোসর জামাত হেন অন্যায় নেই যা তারা করেনি। তাদের নৃশংসতম পরিকল্পনায় বাঙালি জাতিকে মেধাশূণ্য করতে বুদ্ধিজীবি হত্যার ক্ষমাহীন রক্তাক্ত অধ্যায় আজও কেঁদে বেড়ায় বাংলার বাতাসে। সেই শাপমোচন করবার লক্ষ্যেই প্রজন্ম চব্বিশ দিন অক্লান্ত গণজাগরণের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে সারা বাংলাদেশেই। বহির্বিশ্বেও আজ বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের জয়বার্তাটি ব্রেকিং নিউজ। শুধু বিদ্বেষবিষে জর্জরিত জামাত-শিবির-বিএনপি-র জোট। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা ফাঁসির প্রত্যাশিত রায়টি না পেয়ে যাবজ্জীবন পাওয়ায় প্রজন্ম রুখে দাঁড়ায় শাহবাগে। তাদের ডাকে কাতারে-কাতারে গণমানুষ এসে দাঁড়ায়। সেখানে কোনও ঘেরাটোপ নেই যে কেউ অশ্লীল কর্মকান্ড চালাবে …খোলা আকাশতলে লক্ষ প্রাণের সন্মিলন …সেথায় সারাক্ষণ একাত্তুরের চেতনা জাগানো জয়োধ্বনি …অথচ স্বার্থান্বেষী চিরকালের ধর্মীয় উস্কানিদাতা মহলটি তারুণ্যময় চেতনার গণজাগরণকে নিয়ে মরিয়া মরণ কামড় দিতে নেমেছে …মসজিদ হতেই মারদাঙ্গা "হা-রে-রে-রে-"র সন্ত্রাসী জঙ্গী উল্লাসমূর্তি ! দানবিক রূপকথার গল্পের রাক্ষস-খোক্কসের দঙ্গল ! জগতের কোনও ধর্মই নিশ্চয় জঙ্গী হবার নির্দেশ দেয় না। ইসলাম ধর্মের প্রধান নির্দেশ শান্তি। অথচ এই জামাতি ইসলামী শিবির নামের দানবদের মানুষকে হত্যার নির্দেশে পরিচালিত করে ! তাদের প্রধানরা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে একেএকে বিচারে দন্ডাদেশ প্রপ্তির লাইনে দাঁড়িয়ে তাই তাদের ধর্মীয় উস্কানিময় পথ ব্যতীত অন্য উপায় নাই ! এদিকে আজ যখন প্রজন্মের দাবীর সঙ্গে জনমতও একাত্ম বলেই এক অভিন্ন প্লাটফর্মে গণদাবীর প্রেক্ষিতেই আদালতের আজকের রায়টি একাত্তুরের প্রধান একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী সাঈদী-র ফাঁসির রায় ঘোষণা করেছে , লক্ষ-কোটি প্রাণের চাওয়া পূরণ হওয়ার আনন্দাশ্রুতে ভেসেছে বাংলাদেশ। প্রবাসী বাঙালি সহ সমগ্র বিশ্ব ব্রেকিং নিউজে বাংলাদেশের একটি জয়বার্তা হিসেবে প্রচার করেছে , তখনই জামাত-শিবির তান্ডব শুরু করেছে দেশব্যপী। এবঙ বিএনপি তাদের চিরচারিত বিদ্বেষবিষে জর্জরিত হয়েই নীরব প্রধান সমর্থক ! প্রজন্ম কিন্তু পরম ধৈর্যে সুসংহত সৈনিক। আপামর জনগণের সঙ্গেই আমরা প্রজন্মকে অন্তর দিয়ে আশীর্বাদের দোয়া এবঙ স্যালুট জানাই। বাংলাদেশে একাত্তুরের চেতনাকে চিরজাগ্রত রাখবার শপথ করি তাদের সঙ্গে। স্বাধীনতার মাস মার্চের এই হউক আমাদের অঙ্গীকার। আমরা রাষ্ট্রীয় আইন অমান্যকারী না। আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই। কার্যকর হউক রায় আইনের নিয়ম মাফিক পথেই, এই প্রার্থনা।
জয়বাংলা।।
পহেলা মার্চ ২০১৩